কক্সবাজার জেলার সব্যসাচী লেখক কবি আশীষ কুমার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি আকস্মিক লিভাররোগে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামের পিপলস্ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে তাঁকে হাসপাতালের গ্যাষ্টোলজিষ্ট, পরিপাক, লিভার ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোঃ আবু ফয়সল এর অধীনে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। ইতিপূর্বে তিনি কক্সবাজার ও ঢাকা পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। মঙ্গলবার (৬ মে) উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। তাঁর চিকিৎসা সেবায় আর্থিক সহযোগিতায় ‘চিকিৎসা তহবিল’ গঠন করেছে রামু’র সাহিত্য, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক, ক্রীড়া ও শিক্ষক সমাজ। চিকিৎসা তহবিলে আর্থিক সহযোগিতা করতে যোগাযোগ করুন, ইমন বড়–য়া (কবি পুত্র) ০১৯২০-৬৮১৪০৯ ও ফরসুন বড়–য়া (ভগ্নিপতি) ০১৭১১-৫৭৫১০৩
কক্সবাজার জেলার সব্যসাচী লেখক কবি আশীষ কুমারের একমাত্র ছেলে ইমন বড়–য়া জানান, গত ৩০ মার্চ কবি আশীষ কুমার পেঠ ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে রামু ও কক্সবাজারের চিকিৎসা সেবা নেন। পরবর্তীতে লিভাররোগে আক্রান্ত কবি আশীষ ঢাকা পিজি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নেন। আরো উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য পারিবারিক ভাবে তাঁকে ভারতে নিয়ে যাওয়া পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কবি আশীষ কুমারের চিকিৎসা সহযোগিতায় সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি সহ, বন্ধু-স্বজনরা এগিয়ে এসেছেন। তাঁর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে আরো সহযোগিতা কামনা করছেন কবি পুত্র ইমন বড়–য়াসহ পরিবারের সদস্যরা। একই সাথে পরিবারের পক্ষ থেকে জেলার সব্যসাচী লেখক কবি আশীষ কুমার বড়–য়ার’র রোগমুক্তি কামনা করা হয়।
কক্সবাজার জেলার শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে কবি আশীষ কুমার সব্যসাচী লেখক হিসেবে পরিচিত এক নাম। তাঁর পরিচয়ের জন্য অন্য কোন বিশেষণের দরকার হয়না। তিনি একাধারে কবি, ছড়াকার, গল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, উপনাসিক, চিত্রশিল্পী ও অভিনয় শিল্পী। কৃতি ফুটবলার হিসেবেও তাঁর অনেক খ্যাতি ছিল। নব্বই এর স্বৈরচার বিরোধী আন্দোলনে তাঁর লেখা নাটক ছিল দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম হাতিয়ার। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাসী নির্ভীক এক শব্দ সৈনিক। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নিজ হাতে পোষ্টার লিখে, দেয়াল লিখন লিখে স্বাধীনতাকামী মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি। কক্সবাজার জেলার নাট্যাঙ্গনের কিংবদন্তী অভিনয় শিল্পী প্রয়াত দীনেশ বড়–য়া ও প্রয়াত বীণাপানি বড়–য়ার ছেলে আশীষ কুমার বড়–য়া। এ পর্যন্ত তাঁর চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কবিতার বই ‘মাথা নত করবো কেনো’ ‘সূর্য সত্য শেখ মুজিব’ ও উপন্যাস ‘চেনা তবু অচেনা’ প্রকাশিত হয় চিন্তন প্রকাশন কক্সবাজার এবং গল্পের বই ‘এক পলকের দেখা’ প্রকাশিত হয় করে চট্টগ্রামের বলাকা প্রকাশন থেকে। ‘মর শালা পাবলিক’ ও ‘এ লাশ ঢাকা আসবেই’ নামে দু’টি নাটকের বই যন্ত্রস্থ রয়েছে। প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত প্রায় পাঁচ হাজার ছড়া ও কবিতা এখনো বই আকারে প্রকাশ পায়নি। কবি আশীষ কুমার নাটক লিখেছেন চল্লিশটি। তার মধ্যে একত্রিশটি মঞ্চস্থ হয়েছে। তাঁর লেখা গানের সংখ্যাও প্রায় তিন হাজার। পাঁচ শতাধিক গান বাংলাদেশ বেতার, কক্সবাজার কেন্দ্রে রেকডিং ও প্রচার হয়েছে। তাঁর চৌদ্দটি উপন্যাস, দশটি গল্প ও একটি প্রবন্ধের পান্ডুলিপি এখনো প্রকাশিত হয়নি। কবি আশীষ কুমার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রালয়ের গণ গ্রন্থাগার অধিদপ্তর কর্তৃক ১৯৮৮ ইংরেজিতে গল্পের জন্যে, ১৯৮৯ ও ১৯৯০ ইংরেজিতে নাটকের জন্যে এবং ১৯৯০ ইংরেজিতে কবিতার জন্যে ‘একুশে সাহিত্য’ পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। আর্থিক দৈনতার মধ্যেও কবি আশীষ কুমার কখনো সৃজনশীল কর্মকান্ডে নিরব থাকেননি। তাঁর সৃষ্টিশীল কর্মকান্ডে সবসময় সরব থাকতেন রামু-কক্সবাজারের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন। আজকের প্রজন্মের কাছে কবি আশীষ কুমার অনুকরণীয় হয়ে আছেন। বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে কবি আশীষ কুমার চট্টগ্রামের পিপলস্ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। দূরারোগ্য ব্যধি যেন সেই সরব সৃষ্টিশীল কবিকে নিরব করে দিচ্ছেন। তাঁর চিকিৎসার সহযোগিতায় জেলার চিত্ত ও বিত্তবান মানুষদের এগিয়ে আসাতে হবে। আসুন আমরা জেলার সব্যসাচী লেখক কবি আশীষ কুমারের পাশে দাঁড়ায়। অসুস্থ কবি আশীষ কুমারের চিকিৎসা সেবার সহায়তায় আর্থিক সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দিই।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।