নিজস্ব প্রতিনিধি:
দীর্ঘ ৩২ বছর পর কক্সবাজারের মহেশখালীতে আলোচিত খায়রুল আমিন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করছেন কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আব্দুল্লাহ বল মামুন। রায়ে মহেশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার আজম ও তিনভাইসহ ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই দিন একই আদালতের বিচারক শিশু ‘ইফতি’ হত্যা মামলায় এক নারীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা এবং একটি মাদক মামলায় মাদক কারবারিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছে বিজ্ঞ আদালত।
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ম আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন পৃথক তিন মামলার রায় ঘোষণা করেন।
দ্রæত মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীরা।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম বলেন, দীর্ঘ ৩২ বছর পর কক্সবাজারের মহেশখালীতে আলোচিত খায়রুল আমিন হত্যা মামলায় তৎকালীন গোরগঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম ও মহেশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার আজম এবং তার তিনভাইসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানীত হওয়ায় তাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও এক লক্ষ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। আর ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণীত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময় দুই আসামীর মৃত্যু হয়।
মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, মহেশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার আজম, তারভাই নাসির উদ্দিন, হামিদুল হক, জহির উদ্দিন, তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম প্রকাশ শামসু চেয়ারম্যান ও সাধন নামে আরো একজন।
রায় ঘোষণার সময় ‘সাধন’ ছাড়া বাকিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে চকরিয়ায় পানিতে ফেলে শিশু ‘ইফতি’ হত্যা মামলায় (এসটি মামলা নং-১২০/২০) জন্নাতুল ফেরদৌস মুন্নী নামে এক নারীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে একই আদালত। মামলায় মোট ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে একমাত্র আসামী জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণীত হওয়ায় এ রায় দেয় আদালত। একই সাথে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মামলার বাদী নিহত ইফতির মা রুমা ইয়াছমিন রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
দিনের অপর একটি মাদক মামলায় (মামলা নং-এসটি ৬৬৫/২২) মোহাম্মদ ওসমান গনি নামে একজনকে যাবজ্জীবন বিনাশ্রম কারাদন্ড ও এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর কক্সবাজারের ইন্সপেক্টের জীবন বড়ুয়ার দাযের করা মাদক মামলায় ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ নেন আদালত। মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণীত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এ রায় প্রদান করা হয় বলে জানিয়েছেন পিপি ফদিুল ইসলাম।
তিনি বলেন, মামলা জট কমাতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে গুরুত্ব বিবেচনায় মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে সব মামলা দ্রæত কমিয়ে আনা হবে।
এদিকে দ্রæত মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সাধারণ আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীরা। তাদের মতে বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা মামলা কারণে হয়রানির শিকার হতো বিচারপ্রার্থীরা। এখন মানুষের কষ্ঠ অনেকটা লাঘব হবে।
আইনজীবী বাপ্পী শর্মা বলেন, অতীতে বিচারকের শুণ্যতা এবং সরকারি আইন কর্মকর্তাদের কারণে একটি মামলা বছরের পর বছর পড়ে থাকতো। এখন আইন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা এবং নতুন বিচার নিয়োগ দেয়ায় দ্রæত মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে। এতে আমরা বিচারপ্রার্থীদের সহযোগিতা করতে পারছি।
বিচার প্রার্থী রহমত উল্লাহ বলেন, মামলার বাদী হয়েও কয়েক মাস পর পর মামলায় হাজিরা দিতে আসি। কিন্তু সাক্ষীদের ডাকা হয়না। আজ সাত বছর ধরে একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে যাচ্ছি। কবে সাক্ষী নিবে তাও জানাতে পারে না আইনজীবীরা। যেভাবে মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে এবার আমার মামলাটিও দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।