কক্সবাজারে প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় ‘ইতিহাসের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি’ হয়েছে দাবি করে বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল অবিলম্বে বন্যাদূর্গত এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপনের আহবান জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক দলগুলো বন্যাদূর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে এলেও সরকারি পর্যায়ে ত্রাণ তৎপরতা চোখেই পড়ছে না।
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার জেলাকে বন্যামুক্ত করতে হলে দুইটি পরিকল্পনা নেয়া দরকার। একটি দীর্ঘ মেয়াদী ও অন্যটি স্বল্প মেয়াদী।’
অতিদ্রুত স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে কক্সবাজার সদর উপজেলা ও রামু উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ অবকাঠামো সংস্কারের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দেরও দাবি জানান সাবেক এই সংসদ সদস্য।
তিনি মঙ্গলবার দুপুরে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। টানা বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার দূর্গত মানুষের জন্য সরকারি পর্যায়ে পরিকল্পিত উপায়ে ত্রাণ তৎপরতার দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ‘মানুষ মৃত্যুর সংখ্যা কম হলেও এবারের বন্যায় একানব্বইয়ের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
তিনি মনে করেন, বৃষ্টি থামার পর পানি নামতে শুরু করলেও মানুষ কষ্টে আছেন।
তিনি বলেন, ‘এতো বড় বন্যা হলেও কক্সবাজারে ত্রাণ মন্ত্রণালয় কিংবা কোন মন্ত্রীকে আমরা দূর্গত এলাকায় দেখিনি।’
কাজল আরও বলেন, ‘চীনের দুঃখ যেমন হুয়াং হু নদী, তেমনি কক্সবাজারের দুঃখ হলো বাঁকখালী নদী। এই নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে কক্সবাজার পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়।’
তিনি মনে করেন, বাঁকখালী নদী ড্রেজিং করে তার দুই কূলে বাঁধ দিলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। বাঁকখালী নদীকে শাসনে আনার জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে কাজল বলেন, ‘৪-৫ শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিলে কক্সবাজার জেলার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনা যাবে।’ তিনি মনে করেন, এবারের ৫৫ হাজার বাড়ি নষ্ট হয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছে। অন্তত ৫০ হাজার মানুষের কাছে এই সহায়তা পৌছানো হয়েছে।’
ত্রাণ বিতরণকালে বর্তমান সাংসদের হাতে জিল্লু নামের একজন যুবদল কর্মী প্রহৃত হওয়া প্রসঙ্গে সাবেক সাংসদ কাজল বলেন, ‘আমি এই ঘটনায় অত্যন্ত মর্মাহত। তিনি (বর্তমান সাংসদ) উচ্চ শিক্ষিত মানুষ, তাঁর পরিবারও শিক্ষিত পরিবার। তিনি কেন এমন কাজ করলেন, তিনি কেন মারলেন আমরা কোন কারণ বের করতে পারছি না।’
তাঁর মতে, এই ঘটনায় জেলা বিএনপি নিন্দা জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সরকারী ত্রাণ কোথায় যাচ্ছে, কারা দিচ্ছেন এটাই চোখে পড়ছে না।’
শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘কক্সবাজারে ইয়াবা দূর্গতি, মানব পাচার দূর্গতির পর এবার বন্যা দূর্গতি দেখা দিয়েছে। ইয়াবা পাচার তো সরকারী এজেন্সীর ভেতরেই ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।’
তিনি চকরিয়া ও পেকুয়া এলাকায় খালের লিজ বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘প্রভাবশালীরা খালে স্লুইচ গেইট বসিয়ে পানি বন্ধ করে রাখায় জমে থাকা পানি নিস্কাশন হচ্ছে না।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মোহাম্মদ আলী, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সুবেদার মেজর (অব.) আবদুল মাবুদ, জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী প্রমূখ।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।