কক্সবাজার জেলায় চলতি মওসুমে লবণ উৎপাদন শুরু হতে না হতেই দর পতন হওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। ফলে লবণ চাষীরা লোকসানের আশংকা করছেন। জেলার উপকূলীয় লবণ চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, লোকসান পুষিয়ে নিতে লবণ চাষীরা আগাম পলিথিন পদ্ধতির লবণ উৎপাদন শুরু করেন। গত মওসুমে শেষের দিকে দাম উঠায় লবণ চাষীরা চলতি বছর দাম নিয়ে আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু চলতি বছরে লবণ উৎপাদনের শুরুতেই দাম না পাওয়ায় চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, ও চকরিয়ায় চলতি লবণ মওসুমে ভাল ফলণের আশা করছেন চাষীরা। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় মিল মালিক-ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা একচেটিয়া সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে দিয়ে জিম্মি করেছেন। যার কারণে চলতি লবণ চাষে হোচঁট খেয়েছেন জেলার প্রায় লক্ষাধিক লবণ চাষী।
সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে জেলায় লবণ চাষ প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু হয়। এ সময় উৎপাদিত লবণ বিক্রি হয় মণ প্রতি ৪০০ থেকে ৪৩০ টাকায়। কিন্তু হঠাৎ করে লবণের দাম কম হওয়ায় লবণ চাষীরা হয়ে পড়েছে হতাশ। কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডীর লবণ চাষীদের অভিযোগ, শিল্প এলাকা ইসলামপুর লবণ মিল মালিক ও দালাল ফড়িয়াদের কারণে লবণের দাম দিন দিন কমে যাচ্ছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিন লবণ শিল্প এলাকা ইসলামপুর, গোমাতলী, পোকখালী, চৌফলদন্ডী ও চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীর লবণ চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঠ পর্যায়ে তাদের প্রতি মণ পলিথিন লবণের খরচ পড়ে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে মাঠ পর্যায়ের বাজার মূল্য এর চেয়ে অনেকাংশ কম। এ কারণে স্থানীয় চাষীরা পড়েছেন চরম বেকায়দায়। বর্তমানে তারা কিছু কিছু উৎপাদিত লবণ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার অনেক চাষী দালাল ফড়িয়াদের কাছ থেকে নেওয়া দাদন সুদের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়ে বর্তমান বাজার মূল্য থেকেও কম দামে লোকসান দিয়ে লবণ বিক্রি করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব এলাকার একাধিক লবণ চাষী জানান, গত ১ মাস ধরে দালাল-ফড়িয়ারা সিন্ডিকেট করায় লবণের দাম কমতে শুরু করেছে। সরকার লবণ নীতিমালা ঘোষণা করার পরও লবণ মিল মালিক, দালাল-ফড়িয়া, আড়তদাররা তা মানছেননা। বর্তমানে সদর উপজেলার ইসলামপুর, গোমাতলী, পোকখালী, চৌফলদন্ডীতে লবণ নীতিমালা বাস্তবায়িত হচ্ছেনা। এ সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগী দালাল-ফড়িয়ারা দিন দিন চাষীদের ঠকাচ্ছেন। এদিকে দেশের অন্যতম প্রধান লবণ উৎপাদনক্ষম জেলা কক্সবাজারে লবণ চাষ শুরুতেই বড় রকমের হোঁচট খেয়েছে। চাষীরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে একটু আগে ভাগেই লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করলেও বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রমিক সংকট ও দরপতন। দরপতনের কারনে লবণ চাষী ব্যবসায়ীরা চলতি মৌসুমে আশানুরূপ লবণ উৎপাদনের ব্যাপারে অনিশ্চয়তায় ভোগছেন। জেলার অন্যান্য স্থানের ন্যায় তুলনা মূলক ভাবে একটু আগেই লবণ মাঠ তৈরীর প্রক্রিয়া ও উৎপাদন শুরু করেছিলেন সদর, টেকনাফ,মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার লবণ চাষীগণ। এসব জমিতে ইতোমধ্যেই কানি প্রতি ৫০/৬০মণ লবণ উৎপাদিত হয়েছে। তবে লবণের দাম কম থাকায় সংশিষ্টদের মাঝে আশানুরূপ প্রত্যাশা বিনষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।