মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য (আরাকান) থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রকৃত সংখ্যা জানতে মঙ্গলবার থেকে আবার শুরু হয়েছে রোহিঙ্গা শুমারি।
এদিন সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া শুমারি চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। কক্সবাজারের রামু, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও সদর উপজেলায় এ শুমারি অনুষ্ঠিত হবে। এবারের শুমারিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলাকেও।
তবে, গুছিয়ে উঠতে না পারায় মঙ্গলবার ব্যাপকভাবে কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি করেছেন কক্সবাজার জেলা পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপ-পরিচালক (ডিডি) মুহামামদ ওয়াহিদুর রহমান।
তিনি বলেন, সীমান্তের দু’উপজেলাসহ কক্সবাজারের ৫ উপজেলায় ১৭৫টি টিমে (একজন ফ্যাসিলিলেটর ও একজন জোনাল অফিসার) ৩৫০ জন শুমারি নিশ্চিত করতে কাজ করছে। গত ২৪ তারিখ থেকে কাজ চলেছে। মঙ্গলবার শুরু হয়েছে শুমারি। প্রথম দিন শুধুমাত্র টেকনাফের হোয়াইক্যং ও উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে অল্প সংখ্যক শুমারি সম্ভব হয়েছে। বুধবার থেকে পুরোদমে জেলার নির্ধারিত ৫ উপজেলায় কাজ শুমারি প্রক্রিয়া চলবে।
একইভাবে চলবে চট্টগ্রামের লোহাগড়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, পটিয়া ও বোয়ালখালী এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও আলীকদমেও।
ওয়াহিদুর বলেন, গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানামারের সীমান্তরক্ষী নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনার পর দেশটির সেনাবাহিনী ব্যাপক অভিযান শুরু করলে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নিয়ে আন্তর্জাতিকসহ বিভিন্ন সংস্থা একেক রকম কথা বলছে। তাই নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা জানতে তিন জেলায় শুমারি শুরু করেছে। এ তিন জেলার পাশাপাশি কক্সবাজারের নিবন্ধিত শরণার্থী শিবিরগুলোর (উখিয়ার কুতুপালংয়ে ১টি ও টেকনাফের নয়াপাড়ায় ১টি) বাইরে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বসবাসকারী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদেরও শুমারি হবে। এসময় তাদের সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। শুমারি চলবে আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত। তবে কাজের ওপর নির্ভর করে সময় আরও ২/১ দিন বাড়ানো হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বালুখালী নতুন রোহিঙ্গা বস্তির এ ব্লকের মাঝি খলিল জানান, কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ও বালুখালী টালে মঙ্গলবার কিছু লোক এসে আশ্রয় নেয়া কিছু রোহিঙ্গাদের তথ্য উপাত্ত জেনে লিপি করেছেন।
মিয়ানমারের পোয়াখালী গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান (রোহিঙ্গা ভাষায় ওক্কাট্টা) ও বালুখালী টালে বসবাসকারী আবুল ফয়েজ বলেন, মঙ্গলবার ৪ জন নারী, ৬ জন পুরুষ ও ৪ জন গুলিবিদ্ধ খাওয়া লোকের সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করেন তথ্য সংগ্রকারিরা।
কক্সবাজার পরিসংখ্যান অফিস সূত্র মতে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তবর্তী উখিয়া ও টেকনাফের শরণার্থী শিবিরসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে রোহিঙ্গারা। তারা জেলার রামু, চকরিয়া ও কক্সবাজার সদরেও আশ্রয় নিয়েছে। জেলার উপকূলীয় অন্য তিন উপজেলায় নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেয়ার খবর তেমন চাওর না হওয়ায় আপাতত ৫ উপজেলায় শুমারি শুরু হয়েছে।
ডিডি ওয়াহিদুর রহমান জানান, শুমারির কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে এরইমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং কমিটি গঠিত হয়েছে। জেলা কমিটিতে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা কমিটিতে স্থানীয় ইউএনওদের কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
তবে মাঠ পর্যায়ে শুমারির কাজ শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ কখন করা হবে জানতে চাইলে, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে গত বছর মার্চ মাসে মাসব্যাপী কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা জানতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর সহযোগিতায় আরও একটি শুমারি করা হয়েছিল।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, শুমারি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে যথাযথ তদারকি করা হচ্ছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া কোনো রোহিঙ্গা যেন শুমারি থেকে বাদ না যায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া আছে। এ ব্যাপারে সহযোগিতা দিতে স্থানীয়দের প্রতিও অনুরোধ জানান জেলা প্রশাসক।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।