এমরান ফারুক অনিক :
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের আলোচিত এক নাম কক্সবাজারের ছাত্রলীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন। ফেসবুকে জনৈক ব্যক্তির ইনবক্সে কুরুচিপূর্ণ গালি দেয়ার স্ক্রিনশর্ট ভাসছে কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের। একজন ছাত্রনেতা হয়ে কিভাবে এমন আচরণ করতে পারে সেটি নিয়ে নানা মহলে চলছে গুঞ্জন। এই বিতর্কিত ছাত্রনেতা যা লিখেছেন, তা ছাপার অযোগ্য।
এদিকে কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের জাকের-সাখাওয়াতের কমিটি স্থগিত করেছে জেলা ছাত্রলীগ। ৬ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কলেজের চলমান সংকট নিরসন শৃখংলা কমিটি স্থগিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি, কক্সবাজার সরকারি কলেজে ২নং সড়ক নির্মাণ ইস্যু নিয়ে ছাত্রলীগ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ বিরোধে জড়ায়। এর প্রতিবাদে স্থানীয় জনসাধারণ ও আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন ভাবে প্রতিবাদ করে। এ রেশ ধরে কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের জনৈক ব্যক্তির ইনবক্সে মা ও বোনকে জড়িয়ে অশ্লীল গালি-গালাজ করে এবং নানা ধরণের হুমকি-ধমকিও প্রদান করে। ইতিমধ্যে ফেসবুকে বিতর্কিত এ স্ক্রিনশর্টটি ভাইরাল হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার সরকারি কলেজের এ বিতর্কিত সাধারণ সম্পাদক খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সাথে বেয়াদবির কারণে বহিস্কার করা হয়েছিল। পরে ইলিয়াছ মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় এবং সেখান থেকে এসএসসি পাস করে এবং কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে ২০১৭ সালে এইচএসসি পাস করে। কলেজে পড়া অবস্থায় শাখাওয়াত নানা ধরণের অবৈধ সন্ত্রাসি কর্মকান্ডে জড়িয়ে যায়। মাদকাসক্ত হয়ে উঠে এবং মাদক বেচা-কেনা চক্রের সাথেও সম্পৃক্ত হয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেনের মুঠোফোন নং- ০১৯৭৫-৫১১৫১৩ এ বারবার যোগাযোগ করার পরও বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার সরকারি কলেজ গেইট দিয়ে ঢুকতে বাম পাশে দেয়াল ঘেষে ২নং সড়ক নির্মাণ করছিল ছাত্রলীগের নেতৃত্বাধীন একটি গ্রুপ। কলেজের সাথে জনৈক এফাজ উল্লাহর বিরোধপূর্ণ জমিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বরাদ্দ করা টাকায় রাস্তা নির্মাণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ নেত্রীসহ অনেকেই। এর কিছুদিন পর ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত সভায় আওয়ামী লীগ নেত্রী নাজনীন সরওয়ার কাবেরীকে লাঞ্চিত করে ছাত্রলীগ। এর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে কাবেরী ও ছাত্রলীগ। পরদিন ১৮ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সভা করে সাধারণ জনগণ এবং কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন প্রিন্স স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বাতিল করে। সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের জের ধরে ১৯ মার্চ ছাত্রলীগ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। ছাত্রলীগ তাদের নেতা-কর্মীসহ আরো গুটি কয়েকজন বহিরাগত কলেজে ভাংচুর চালায়। পরে কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেয়া হয় এবং অধ্যক্ষসহ আরো কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্চিত করে।
কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত : তদন্ত কমিটি গঠন
কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের জাকের-সাখাওয়াতের কমিটি স্থগিত করেছে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ইশতিয়াক আহমদ জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ হোসাইন তানিম। ৬ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, কলেজের চলমান সংকট নিরসন, কলেজ প্রশাসনের সাথে ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সৃষ্ট ঘটনার প্রেক্ষিতে কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। একই সাথে ওইসব ঘটনাবলীর সঠিক তথ্য উদঘাটনে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ ৬ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন- জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইসমাইল সাজ্জাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মজিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান শাকিল, দপ্তর সম্পাদক শাহ নিয়াজ, স্কুল বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান মুন্না ও উপ-দপ্তর সম্পাদক মইন উদ্দীন।
কলেজ শিক্ষক পরিষদের তীব্র নিন্দা : নামকরণের প্রস্তাব
ছাত্রলীগ নামধারী উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র ও বহিরাগত কর্তৃক কক্সবাজার সরকারি কলেজে হামলায় কলেজ শিক্ষক পরিষদ নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। কলেজ শিক্ষক পরিষদের সভাপতি ও অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী, সহ-সভাপতি শিক্ষক পরিষদ ও উপাধ্যক্ষ প্রফেসর পার্থ সারথি সোম এবং সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল আলম এক বিবৃতিতে জানান, ১৯ মার্চ কক্সবাজার সরকারি কলেজের পাশর্^বর্তী ভূমিদস্যু কর্তৃক লেলিয়ে দেওয়া কিছু ছাত্রলীগ নামধারী উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র ও বহিরাগত যুবক কক্সবাজার সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং আটককৃত ভূমিদস্যুদের মুক্তির দাবি জানায়। এসময় তারা অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সাধারণ শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মচারিদের অবরুদ্ধ করে রাখে এবং নাজেহাল করে। তারা অধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষকের নাম ধরে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়। এতে কলেজের সকল শিক্ষক, কর্মচারি ও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ভূমিদস্যু কর্তৃক লেলিয়ে দেয়ে এরূপ উচ্ছৃঙ্খল বখাটেদের বর্বরোচিত হামলার জন্য কক্সবাজার সরকারি কলেজ শিক্ষক পরিষদ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। পাশাপাশি দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কলেজের মূল্যবান সম্পত্তি রক্ষাসহ শিক্ষক, কর্মচারি, ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া কলেজ শিক্ষক পরিষদের সভা ২০ মার্চ দুপুর ১২টায় শিক্ষক পরিষদ মিলনায়তনে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় ৬টি প্রস্তাব আনা হয়, প্রস্তাবগুলো হলো-
- নির্মাণাধীন নতুন ছাত্রী নিবাসের নাম জননেত্রী ‘শেখ হাসিনা হল’ নামকরণ।
- পুরাতন ছাত্রী নিবাসকে ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ নামকরণ।
- নতুন একাডেমিক ভবনের নাম জাতির পিতা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভবন’ নামে নামকরণ।
- শহীদ মিনার পুন: সংস্কারের জন্য দ্রুততম সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ।
- কলেজ ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য দ্রুততম সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ।
- মসজিদের ১ম পর্যায়ে সংস্কার কার্য সম্পন্ন হয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো আধুনিকায়ন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।