কক্সবাজার সময় ডেস্ক: পরিচয় গোপন করে সীমান্তে গিয়ে ছবি তোলা, বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে মিথ্যা তথ্য দেওয়া ও রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য সংগ্রহের অভিযোগে মিয়ানমারের দুই সংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিনজাইয়ার ও এবং হকুন লাট নামের এই দুইজনকে এখন কক্সবাজার জেলা কারাগারে রাখা হয়েছে। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রঞ্জিত বড়ুয়া তথ্য জানান।
রঞ্জিত বড়ুয়া জানান, মিয়ানমারের দুই সাংবাদিককে দণ্ডবিধির ৪১৯ ও ১৭৭ নম্বর ধারা এবং ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ নম্বর ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে। টুরিস্ট ভিসা গোপন করে সীমান্তে গিয়ে ছবি সংগ্রহ, অডিও-ভিডিও ধারণ ও রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আদালতে তাদের আদালতে নেওয়া হয়। বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠান।
মিয়ানমারের দুই সাংবাদিকের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘মিয়ানমারের দুই সাংবাদিক মিনজাইয়ার ও এবং হকুন লাটকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে গত ১৩ সেপ্টেম্বর। ১৫ সেপ্টেম্বর তাদের জামিন আবেদন করা হলে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার দেব তা নামঞ্জুর করেন। আমরা এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবো।’
তিনি জানান, ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি, দণ্ডবিধির ৪১৯ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা পরিচয়ে কোনও কাজ করা ও ১৭৭ ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তারর কাছে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে মিয়ানমারের দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। ফরেনার্স অ্যাক্ট এর ১৪ ধারা অনুযায়ী, বিনা পাসপোর্টে অনুপ্রবেশের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বনিম্ন কয়েক দিন থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
মিনজাইয়ার ও এবং হকুন লাট জার্মানির হামবুর্গভিত্তিক ম্যাগাজিন জিও-তে কাজ করেন। জিও’র বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ে খবর সংগ্রহের জন্য তারা সেপ্টেম্বরের শুরুতে কক্সবাজারে আসেন। এর মধ্যে মিনজাইয়ার ছবি তোলার জন্য আন্তর্জাতিকমানের পুরস্কারপ্রাপ্ত। তার ছবি নিউইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ছাপা হয়েছে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর ফটোগ্রাফি বিষয়ক বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ‘কাউন্টার ফটো’র প্রিন্সিপাল ফটোগ্রাফার সাইফুল হক অমিসহ মিয়ানমারের দুই ফটোসাংবদিককে হেফাজতে নেয় কক্সবাজার পুলিশ। ৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আফরুজুল হক টুটুল বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়েছিল। দুইজন বিদেশি সাংবাদিক টুরিস্ট ভিসায় এসে কাজের অনুমতি না নিয়ে কাজ করছিল। সাইফুল হক অমি তাদের সঙ্গে ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের তিনজনকেই ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয় বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, যদি প্রয়োজন হয়, ঢাকায় তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গত শনিবার ৯ সেপ্টেম্বর তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলা হলেও গত সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সাইফল হক অমি বাসায় ফেরেন। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর এই মামলায় মিয়ানমারের দুই সাংবাদিককে গ্রেফতার দেখানো হয়।
এদিকে এই দুই সাংবাদিকের সঙ্গে কিভাবে পরিচয় জানতে চাইলে অমি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমি এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি না। তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগই যেহেতু নেই আমি বলতে পারছি না।’
যোগাযোগ না থাকলে কেন তাদের সঙ্গে আপনাকে হেফাজতে নেওয়া হলো- প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে এখন কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে চাইছি না।’ এরপর আর কোনও প্রশ্ন নিতে তিনি রাজি হননি।
গত ৩১ আগস্ট সাইফুল হক অমি কক্সবাজার যান। এরপর থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে পরিস্থিতি জানাচ্ছিলেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলেও তিনি সীমান্তে রোহিঙ্গাদের নিয়ে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে আসছিলেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।