এ রমজানেও দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না কক্সবাজারবাসীর। গত ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরা’র ছোবলের আঘাত থেকে উঠে দাঁড়ানোর আগেই আরেক মৌসুমী নিম্নচাপের প্রভাবে পুরো কক্সবাজার জুড়ে ধমকা ও ঝড়োহাওয়া বইছে। রবিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া থেমে থেমে বর্ষণ তলিয়ে নিয়েছে শহর-গ্রামের রাস্তাঘাট,বাড়ি-ঘর, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্টান। উপড়ে ফেলেছে অনেক গাছ-পালা ও কাঁচা ঘরবাড়ির চালা। সাগরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে জোয়ারের পানি। এতে পুরোনো ভাঙ্গন দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে উপকূলের গ্রামের পর গ্রাম। ফলে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ঝড়ো ও দমকা হাওয়ায় ব্যাপক পরিমাণে গাছ পালা ভেঙ্গে পড়ে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ যোগাযোগ। ফলে রবিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা শহর ছাড়া কক্সবাজারের বিশাল এলাকা অন্ধকারে রয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে রবিবার রাতে কক্সবাজার থেকে স্থানীয় কোন পত্রিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, জেলার তিন মিঠাপানির নদীতে তীব্র বেগে ঢল নেমেছে। সাগরে পূর্ণিমা তিথির বাড়ন্ত জোয়ারের কারণে ভারি বর্ষণের পানি অপসারিত হতে না পেরে প্লাবন সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বোদ্ধামহল।
ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে সাগরের কক্সবাজার উপকূলে ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে দু’জেলে নিখোঁজ হয়েছে। এই ঘটনায় ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হয় আরো ১২ জেলে। সোমবার ভোররাতে সৈকতের ল্বাণী পয়েন্টে এ ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে।
নিখোঁজরা হলেন, ট্রলারের মাঝি বেলাল উদ্দিন (৪৫) ও তার সহযোগী জেলে লেমন রাখাইন (৪০)।
জেলেদের উদ্ধৃতি দিয়ে ট্রলারটির মালিক জসিম উদ্দিন জানান, আকস্মিক ঝড়ো হাওয়ার কবলে কক্সবাজার উপূলের লাবনী পয়েন্ট চ্যানেলের গভীর সমূদ্রে বোটটি ফেটে যায়। বোট ফেটে গেলে মাঝিসহ দু’জেলে নিখোঁজ হয়ে যান । বাকি ১২ জেলে বোটের ভাঙা অংশ ধরে ভাসতে ভাসতে তারা ডায়বেটিকস পয়েন্ট ভিড়ে যায়। তাদেরকে স্থানীয় লোকজন মুমূর্ষু উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়ার হলেন- রবি দাস (৫০), মাকন দাস (৪৫), বিশ্বজিত দাস (২৮), লক্ষীপদ দাস (৪৫), ফিরুরা দাস (৩৮), নেপাল দাস(২৫), চরন দাস (২৪), সুদীর দাস (৩০), তুফান দাস (৫০)সহ আরও দুইজন। তারা সবাই চকরিয়ার পহরচাঁদার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ জানান, ইতিমধ্যে ১২ জেলে কোলে ফিরে এসেছে। বাকি দুইজনকে উদ্ধারে নৌ-বাহিনী ও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানিয়েছেন, রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার বেলা তিনটা পর্যন্ত ২১ ঘন্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ১২১ মিলিমিটার। মৌসুমী নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। রবিবার সকাল থেকে থেমে থেমে ঘন্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। পূর্ণিমা থিতি ও বাতাসের কারণে সাগরে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বাড়ছে।
সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক আহমদ ও গোমাতলী উপনিবেশ সমবায় সমিতির সভাপতি সেলিম উদ্দিন বলেন, পূর্ণিমা থিতির জোয়ারে পানি বেড়ে রবিবার দিবাগত রাতে গোমাতলীর বেড়িবাঁেধ ৪৪ একর ঘোনার ৮ নম্বর স্লুইচ এলাকায় বিশাল অংশ ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। গত বছরে রোয়ানুর কবলে ৬ নম্বর স্লুইচ গেইট এলাকার ভাঙ্গনটি এখনো মেরামতহীন রয়েছে। তার উপর রবিবার দিবাগত রাতের ভাঙ্গন ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। দু’টি ভাঙ্গন দিয়েই জোয়ারের পানি ঢুকে পুরো বৃহত্তর গোমাতলীর ৮ গ্রাম পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, রান্নাঘর। ফলে রমজানে ইফতার ও সেহেরি নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পানিবন্দি লোকজন।
অপরদিতে, রাতে মোষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় মিঠাপানির নদীতে পাহাড়ী ঢল নেমেছে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশে পটিয়া, চন্দনাইশ, দোহাজারি, কেরানিহাট, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চুনতি, চকরিয়া, পেকুয়া, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, ঈদগাঁও, কালিরছরা, রশিদনগর, জোয়ারিয়ানালা, রামুসহ ঝড়ের পানিতে থৈ থৈ করছে সমতলের বিস্তীর্ণ এলাকা।
একই অবস্থায় পতিত হয়েছে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনসহ নিচুসব এলাকা। অন্যসময় যেসব এলাকা প্লাবন থেকে মুক্ত ছিল সেসব এলাকার বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্টানে ঢুকে চরম দূর্ভোগের জন্ম দিয়েছে রমজানের এ প্লাবন।
প্লাবনের ভোগান্তিতে রয়েছে জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও সদরের নিম্নাঞ্চলও। মোরা’র ক্ষত শুকানোর আগেই আবারো ঝড়োবাতাসের কবলে পড়েছে সেন্টমার্টিনদ্বীপবাসিও।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, অকস্মাৎ প্রবল বর্ষণ চলছে। নদী ও সবখানে পানি বেড়ে যাওয়ায় নিচু এলাকার বাসাবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে বলে খবর পেয়েছি। ইউএনওদের নির্দেশনা দেয়া আছে যেকোন দূর্যোগ মূহুর্ত যেন এড়ানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সবিবুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলায় ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি থেমে গেলে নদী ও সাগরের কিনারের বেড়িবাঁধ মেরামতে হাত দেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।