সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারেও বৃহস্পতিবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হয়ে চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবার জেলায় এসএসসি ও সমমানে ৪৩ কেন্দ্রে অনুপস্থিত ছিলেন ৬১ জন। এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন। এ সময় তিনি জানান, কেন্দ্রসহ শিক্ষার্থীদের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও নিরাপত্তা প্রদান, কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাসহ সবধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন করা হয়েছে। পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সঠিকভাবে পালন করতে সংশ্লিষ্ট সকল সম্মানিত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেন। এছাড়া তিনি অবাধ,সুষ্ঠ, নকলমুক্ত পরিবেশ ও নিরপেক্ষভাবে পরীক্ষা সম্পাদনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে যার যার অবস্থান থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান। এ বিষয়ে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পেলে কোন মতেই ছাড় দেয়া হবে না বলে তিনি সতর্ক করেন। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে পরীক্ষা চলকলীন সময় পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারী থাকবে এবং নিরাপত্তা প্রদানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। এসএসসিতে সর্বোচ্চ চারটি পত্রে ফেল করলে ওইসব বিষয়ে পরের বছর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ২০১৬ সালের জেলায় ৪১ কেন্দ্রে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ হাজার ৭২৬ জন। গত বছরের তুলনায় ১ হাজার ৩১২ জন পরীক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে। এবারই প্রথম এসএসসি পরীক্ষায় বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র ছাড়া সকল বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা নামে দু’টি নতুন বিষয় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। আগের মতোই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী স্ক্রাইব বা শ্রুতিলেখক সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। এ ধরণের পরীক্ষার্থীদের এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবে। অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বৃদ্ধিসহ শিক্ষক, অভিভাবক বা সহাায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, কক্সবাজার মডেল হাই স্কুল কেন্দ্রে এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, স্কুলের নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষেও জানালা না থাকায় ঠান্ডা বাতাসে পরীক্ষার খাতায় লিখতে অসুবিধা হয়েছে। এ ব্যাপারে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্কুল অধ্যক্ষের প্রতি অনুরোধও জানান এই শিক্ষার্থী। এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র, সহজ বাংলা প্রথম পত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রথম পত্রের পরীক্ষা হয়েছে। এছাড়া মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে কুরআন মাজিদ ও তাজবিদ এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এসএসসি ভোকেশনালে বাংলা-২ (১৯২১) আর দাখিল ভোকেশনালে নতুন সিলেবাসে বাংলা-২ (১৭২১) সৃজনশীল ও পুরাতন সিলেবাসে বাংলা-২ (১৭২১) সৃজনশীল বিষয়ের পরীক্ষা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার ৪৩ কেন্দ্রে ২১ হাজার ৩৮ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে এসএসসি’র ২৩ কেন্দ্রে ১৪ হাজার ৫৯ জন, দাখিলের ১৩ কেন্দ্রে ৬ হাজার ৬০ জন এবং কারিগরির ৭ কেন্দ্রে ৯০৯ জন পরীক্ষার্থী। এ বছর ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষা ২ মার্চ পর্যন্ত, ৫ মার্চ থেকে ১৬ মার্চের মধ্যে সকল ধরণের ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। দাখিলে আজ শুরু হয়ে শেষ হবে ৫ মার্চ। ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১২ থেকে ১৬ মার্চের মধ্যে। কারিগরিতেও বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি। ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে ২ মার্চ হতে ৮ মার্চ এবং বাস্তব প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে ৯ মার্চ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত। পরীক্ষায় ভিন্নতা হলো নৈর্বত্তিক প্রশ্নের জন্য (বিজ্ঞান) ২৫ নম্বরের জন্য ২৫ মিনিট, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ৩০টি নৈর্বত্তিকের জন্য ৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নৈর্বত্তিক প্রশ্নটি শুরুতেই সরবরাহ করা হবে। এটি জমা নেয়ার পর দেয়া হবে সৃজনশীল প্রশ্নপত্র। পাশাপাশি এবার কেন্দ্র সচিব ছাড়া বাকিদের মোবাইল ব্যবহার কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
এদিকে হ্নীলার সাংবাদিক সাদ্দাম হোসাইন জানান, টেকনাফে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এতে পরীক্ষার ১মদিনে স্কুলে ১ হাজার ৩৭০জনের মধ্যে এএসসিতে ৩জন এবং দাখিলে ৪জনসহ মোট ৭জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। নির্ধারিত সুচী অনুযায়ী ২ ফেব্রুয়ারী সকাল সাড়ে ৯টা হতে উপজেলার ৩টি এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে ২৩টি প্রতিষ্ঠান ও ১টি দাখিল পরীক্ষার হলে ১০টি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীরা সমবেত হয়। টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল কেন্দ্রে ২৭৮জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ২৭৭জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করেছেন। এই কেন্দ্রে ১জন পরীক্ষার্থাী অনুপস্থিত রয়েছেন। এজাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৫১জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ২৪৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। এই কেন্দ্রে ২জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছেন। হোয়াইক্যং আলহাজ্ব আলী আছিয়া স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে ৪৮৪জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সকলে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছেন। এদিকে দাখিল পরীক্ষার একমাত্র কেন্দ্র রঙ্গিখালী দারুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৩শ ৫৭জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৩শ ৫৩জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। উক্ত কেন্দ্রে ৪জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছেন। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সফিউল আলমসহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা পরীক্ষার হল পরিদর্শন করেন। পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কেন্দ্রে বিশৃংখলারোধ, অসদুপায় অবলম্বন বন্ধে কঠোর থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট হল সুপার, সচিব এবং হল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকার আহবান জানান।
এদিকে, কুতুবদিয়ার সাংবাদিক এম. নজরুল ইসলাম জানান, কুতুবদিয়ায় সারাদেশের ন্যায় ২ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠ পরিবেশে অতিবাহীত হয়েছে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার প্রথমদিন। এদিন কুতুবদিয়ায় অনুপস্থিত ছিল ৬ জন পরীক্ষার্থী। তারমধ্যে এসএসসিতে ৫ জন এবং দাখিলে ১ জন অনুপস্থিত। উপজেলার দু’টি কেন্দ্র ও ভেন্যু পরিদর্শন করে দেখা গেছে দু’টি ভেন্যুসহ কুতুবদিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রথম দিনের বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায়মোট ৯৮৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিল ৯৮২জন এবং বড়ঘোপ ইসলামিয়া ফাযিল ডিগ্রী মাদ্রাসা কেন্দ্রে দাখিল কুরআন মাজিদ পরীক্ষায় মোট ৪২৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিল ৪২৮ জন। উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্র ও ভেন্যু পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)সহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।