কৃত হরেক অপরাধ ও অভিযোগে আটক কক্সবাজার কারাগারের প্রায় ৩ হাজার বন্দি দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর হচ্ছে। সমাজ ও দেশের বোঝা নয়, কারামুক্ত হলেই তারা হবেন পরিবার ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ। ফেলে আসা অতীতের সব উশৃঙ্খল পথ ছেড়ে অলোর পথে ফিরিয়ে আনতে বন্দি এসব হাজতি-কয়েদির কারাভ্যন্তরে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, বিনোদন, প্রশিক্ষণ ও জনহিতকর নানা কর্মসুচি।
শিশুদের বিনোদনের জন্য কারাগারে নির্মাণ করা হচ্ছে অভ্যন্তরিন পার্ক। মায়ের অপরাধে বিনা কারণে জেলে থাকা এসব শিশুদের জন্য রয়েছে ডে-কেয়ার (পরিচর্যা) সেন্টার। দু’জন শিক্ষক রোজ তাদের প্রাথমিক ও মৌলিক শিক্ষা দিয়ে চলেছেন।
কক্সবাজার কারাগারের জেল সুপার বজলুর রশিদ আখন্দ এসব বিষয় সার্বিক তদারকি করছেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও নির্দেশনায় জেলর ও ডেপুটি জেলর সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডে অভ্যন্তরিণভাবে যে -যে কাজে পারদর্শি তাকেই সেকাজে নিযুক্ত করছেন।
জানা গেছে, কারাভ্যন্তরে এসব কর্মসুচি বাস্তবায়নকারীদের বেশীরভাগই হচ্ছেন স্বশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত ও স্বেচ্ছাশ্রমে আগ্রহীরা। জামিনে মুক্ত হয়ে সম্প্রতি জেল ফেরত কয়েক ব্যক্তি জানায় কারাগারটির বর্তমান ভেতরের অবস্থা।
তারা বলছেন, বর্তমান জেল সুপার যোগদানের পর থেকে কারাগারের সব বন্দি রয়েছেন স্বস্থিতে। প্রতিদিন কারাভ্যন্তর নবসাজে পাল্টাচ্ছে তার চিত্র। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, ধর্মীয় শিক্ষা, গণশিক্ষা, বৈদ্যুতিকশিক্ষা, সেলাইকাজ, হস্তশিল্প ও সবুজ শ্যামল কারাগারটির ভেতরের সৌন্দর্য এখন পর্যটক প্রিয় কোন অবকাশ ও বিনোদনের কেন্দ্রকেও হার মানাবে। পৃথিবীর দীর্ঘ বেলাভূমি কক্সবাজার সৈকতের অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে আরেক সুন্দরের কক্সবাজার কারাগার কৃষিতেও ঘটাচ্ছে বিপ্লব। এখন সেখানে পুরোদমে চলছে শীতকালীন সবজি চাষ।
হাজতি-কয়েদিদের মতে, প্রতি বছর এখানে চাহিদার অতিরিক্ত সবজি উৎপাদন হয়। ফুলে ফলে ভরপূর কারাগারটিতে অনায়াসে মেলে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, গাঁজর, খিরা (শশা), টমেটো, কাঁচা মরিচ, বেগুন ও নানা জাতের শাক।
নিজেরাই উৎপাদন করে তরতাজা এসব নির্ভেজাল সবজিতে পরম সন্তুষ্ট মহিলা ওয়ার্ডে থাকা নুরু জাহান নামক এক মহিলা জানান, আগের ছোট্ট পরিসরের অপরিচ্ছন্ন রান্নাঘরটি বর্তমানে সম্প্রসারিত হয়েছে। সেখানে নির্মিত হয়েছে বিশালাকারের শেড। পর্যাপ্ত পানি ব্যবস্থার পাশাপাশি সংকট নিরসনে প্রতিটি ওয়ার্ডে এক হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন টাংকি বসিয়ে দিয়েছেন জেল সুপার।
কারা কর্তৃপক্ষ জানান, শিশুপার্কে বিনোদনের জন্য দোলনা, বেলুন, স্প্রিং ঘোড়া, সুইমিং, স্লিপিংসহ বাচ্চাদের বুদ্ধিমত্তা ও মেধা বিকাশ সংশ্লিষ্ট নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শনে ডিআইজি (প্রিজম) পার্থ গোপাল বনিক কক্সবাজারা কারাগারে গেলে ব্যবস্থাপনা দেখে সন্তুষ প্রকাশের পাশাপাশি কারাশিল্পিদের দেশাত্ববোধক ও অভিবাদন গান এবং তাদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে মুগ্ধ হন। এসময় কারাভ্যন্তরে থাকা হাজারো বন্দি গান আর নৃত্যের তালে নিজেদের মুখরিত করে তুলে। ফলে ক্ষনিকের জন্য কারাভ্যন্তর হয়ে ওঠে আনন্দ উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের লক্ষ্য অপরাধ, ক্ষুধা, জঙ্গি, মাদক ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি সোনার বাংলা। কাজেই কারাগারের এসব উদ্যোগ বন্দিদের জীবনের পরতে-পরতে কাজে আসবে। বের হলে তারাই হবেন আলোর পথের দিশারী। সংশোধিত জীবন নিয়ে এরাই পারবেন দক্ষ জনশক্তিতে উন্নত বাংলাদেশের সহায়ক শক্তি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।