শাহেদ মিজানঃ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর হতে যাচ্ছে নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচিত কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর আগামী ২০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে জোরেসোরে কাজ করছে বর্তমান কমিটি। তবে সম্মেলনকে ঘিরে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের বিষয়টি। তারা কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতাকর্মীদের মন জয় করতে নানা কৌশলে চালাচ্ছেন দৌড়ঝখাঁপ। পদপ্রত্যাশীরাই এখন সম্মেলনের ওপিট হয়ে উঠেছে। তাই সম্মেলন প্রস্তুতি আর পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ নিয়ে এখন কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগে বেশ প্রাণচাঞ্চল্য বিরাজ করছে। সব ছাপিয়ে এখন একটাই আলোচনা বিষয়: কারা হচ্ছে আগামী কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের কান্ডারি।
ছাত্রলীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পদক পদে এক ডজন ছাত্র নেতা আলোচনায় আছেন। নতুন কমিটিতে সভাপতি পদে লড়বে বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ ইবনে হোসেন ও ইব্রাহীম আজাদ বাবু, শিক্ষা ও পাঠচক্র উপ-সম্পাদক মারুফ আদনান, নারিমা জাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ্দাম শাখাওয়াত হোসেন, হোসেন দপ্তর সম্পাদক শাহনিয়াজ ও কেন্দ্রীয় নেতা সরওয়ার আজম।
সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বে বর্তমান কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক ও কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সভাপতি মঈন উদ্দিন, বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল ইসলাম সাকিল, ক্রীড়া সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন তুর্য্য, প্রচার সম্পাদক আলিফ উজ্জামান শুভ, আপ্যায়ন সম্পাদক কায়সার উদ্দিন রুবেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন খোকন, সদস্য এহেসানুল হক মিলন, সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আলী আহম্মদের ছোট ভাই আনোয়ার হোছাইন। তবে দুই পদে সম্মেলন ঘনিয়ে আসতে আসতে আরো পদপ্রত্যাশী বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কাঙ্খিত পদ পেতে পদপ্রত্যাশীসহ অনুগতরা এখন অনেকটা দ্বিধা-বিভক্ত। পদ প্রত্যাশীরা অনেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজাওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং অনেকে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর আশীর্বাদপুষ্ট বা আনুকূল্য লাভের জন্য ব্যস্ত। এই নিয়ে তারা নানা উপায় অবলম্বন করে চালাচ্ছেন লবিং। এই নিয়ে চালাচ্ছে নির্ঘূম দৌড়ঝাঁপ! ইতোমধ্যে কয়েকজন পদপ্রত্যাশী ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কয়েক দফা যোগাযোগ করেছেন। একই সাথে জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান নেতা নানা স্তরের নেতাদের ব্যবহার করেও লবিং চালাচ্ছেন।
এদিকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চান, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং দলের আর্দশকে ধারণ করে এমন ত্যাগী নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হোক। যাতে তারা কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগকে একটি মডেল ইউনিট হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। তবে কোনো অছাত্র, বিবাহিত, মাদক ব্যবসায়ী, মাদকাসক্ত, মামলার আসামি, চাঁদাবাজ ও দখলবাজসহ নানা অপরাধে জড়িতরা যেন কমিটির নেতৃত্বে না আসতে পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ হোসেন তানিম বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সংসদের নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে জেলা কমিটি সম্মেলন ও কাউন্সিল আয়োজনের তৎপরতা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সাংগঠনিক প্রস্তুতি হিসেবে বেশকিছু কর্মসূচিও হাতে নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শোকের মাসে সম্মেলনকে ঘিরে নানা সাংগঠনিক কর্মসূচিও পালন করা হচ্ছে।’
তিনি জানান, শতভাগ গঠনতন্ত্র মেনে শিক্ষা, বয়স ও চরিত্র মূল্যায়ন করেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন দেয়া হবে। বিএনপি-জামায়াতপুষ্ট এবং গোষ্ঠীগত কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। একই সাথে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত, মাদকাসক্ত, অছাত্র ও অর্ধশিক্ষিত, বয়স্কদের মনোনয়ন দেয়া হবে না।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয় বলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির জাতীয় জীবনে একটি কালজয়ী ইতিহাস। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ২০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার ছাত্রলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল উপহার দিতে সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে সিদ্ধান্তে আসতে না পারায় কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। তবে পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি ইশতিয়াক আহমেদ জয়কে সভাপতি এবং ইমরুল রাশেদকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ইমরুল রাশেদ ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। পরে মোর্শেদ হোসেন তানিমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি গঠনতন্ত্র মোতাবেক বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এ নিয়ে পরবর্তীতে তৎকালীন সময়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বর্তমান জেলা কমিটির সম্মেলন ও কাউন্সিলের ঘোষণা দিলেও উদ্ভুদ রোহিঙ্গা সংকট এবং জাতীয় নির্বাচনের কারণে সম্ভব হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় সংসদ বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটির সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠানের জন্য ৬০ কার্যদিবস নির্ধারণ করে দিয়ে গত ৯ মে নির্দেশনা দিয়েছিল।
কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রীয় সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ব্যতিব্যস্ততায় এ সময়ের মধ্যেও জেলা কমিটির সম্মেলন ও কাউন্সিল আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে এ নিয়ে গত ৩০ জুলাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক সভায় আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বর্তমান জেলা কমিটির সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠানের জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।