২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি   ●  মেরিন ড্রাইভে ইয়াবাসহ নারী আটক   ●  সড়ক দখল করে নৈরাজ্য সৃষ্টি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে কক্সবাজারে আ.লীগের ৯১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

কক্সবাজার-৩: আ’লীগের মনোনয়ন চান ২ পরিবারের ৬ ভাই-বোন

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ২৩ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাসীন জোট থেকে বিরোধী জোট, সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। কক্সবাজারের সংসদীয় আসনগুলোতে এখন পর্যন্ত প্রার্থী চূড়ান্ত করা না হলেও তফসিল ঘোষণার পর সম্ভাব্য প্রার্থী ও দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।

কক্সবাজারের চারটি আসনে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে জোর তোড়জোড় চলছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নানা কর্মসূচি ও শোডাউনের মাধ্যমে তাদের জনপ্রিয়তা প্রদর্শনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। রাস্তার মোড়ে মোড়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যানার, ফেস্টুন ও ছবি টানিয়ে জানান দিচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার কক্সবাজারে লাখো কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছে। এই উন্নয়নকাজের কারণে আগামী নির্বাচনে এখানকার আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের জয় অনেকটা সহজ হবে বলে মনে করছেন দলটির সমর্থকরা।

জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকটি আসনেই বেশ ক’জন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জমজমাট লড়াইটা কক্সবাজার-৩ আসনে।

সদর এবং রামু উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৩ আসনটি ভিআইপি আসন হিসাবে বরাবরই জেলার ভোটারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এই আসনে আপন তিন ভাই-বোন এবং তিন চাচাতো ভাই পৃথকভাবে প্রচারণা চালানোর কারণে ভোটারদের মাঝেও রয়েছে দারুণ উৎসাহ।

আসনটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর তিন সন্তান বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল এবং বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী।

মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক গভর্নর ও সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলামের ছেলে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম এবং দুই ভাতিজা জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ইসতিয়াক আহমদ জয় ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজিবুল ইসলামও।

এছাড়া এ আসনে মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এ আসনের সাবেক এমপি বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর সহধর্মিনী কানিজ ফাতেমা মোস্তাক। সমর্থকদের নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

২০০৮ সালে কানিজ ফাতেমা এই আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু ঋণখেলাপের অভিযোগে তার মনোনয়ন বাতিল হয়। পরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসাবে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল মনোনয়ন পান।

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে এমপি নির্বাচিত হন সাইমুম সরওয়ার কমল। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই কমলের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব তার বিরোধীপক্ষ। বিরোধীরা এক্ষেত্রে তাকে অভিযুক্ত করছে হলমার্ক কেলেঙ্কারি, নিজের শিক্ষককে গলাধাক্কা দেওয়া, রাজনীতির মাঠে পারিবারিক দ্বন্দ্ব, স্থানীয় নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিজের পছন্দের প্রার্থী দাঁড় করানোসহ কিছু অভিযোগে।

তবে বর্তমান সাংসদ কমলের অনুসারীরা বলছেন, রাজনীতির মাঠে বিরোধীপক্ষ ছোট-খাটো কিছু বিষয় নিয়ে মাঠ ঘোলা করে কমলকে মনোনয়নবঞ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু গত পাঁচ বছরে কমলের ইতিবাচক বিষয়গুলোকে তারা সামনে আনছেন না।

রামু উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও রামু উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম ও সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়ার ভাষ্য, ‘এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সাইমুম সরওয়ার কমলের চেয়ে জনপ্রিয় নেতা নেই। তিনি এমপি হওয়ার পর পাঁচ বছরে এলাকায় যেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন, গত ৪০ বছরেও সে পরিমাণ উন্নয়ন হয়নি। তাই এবারও মনোনয়ন পানেন সাইমুম সরওয়ার কমল।’

মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী কমলের ছোট বোন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরীও। তিনি বলেন, ‘গতবারও নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিতে চেয়েছেন, আমি ইচ্ছে করেই নির্বাচন করিনি। তবে এবার আমি এলাকায় যেভাবে কাজ করেছি, গরিব-মেহনতি-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, আমি মনে করি প্রার্থী হওয়ার মতো সেই যোগ্যতা এবার আমার হয়েছে। তাই এই আসন থেকে এবার আমিই মনোনয়ন পাবো।’

রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছি। সারাবছরই নানা কর্মকাণ্ডে সংগঠনকে উজ্জীবিত রেখেছি। নমিনেশন আগেও চেয়েছি, এবারও চাইবো। আমি মনে করি, আমার মাঠ তৈরি করা আছে, নমিনেশন দিলে অবশ্যই জিতবো।’

আর বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল  বলেন, ‘এবারে মনোনয়ন দেওয়া হবে জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে। সেই দিক দিয়ে অন্যরা আমার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছেন। তাই মনোনয়নের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী এবং মনোনয়ন পেলে আমি অবশ্যই জিতবো।’

অন্যান্য প্রার্থী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন এলে অনেকেই প্রার্থী হবেন, এটা কোনো সমস্যার বিষয় নয়। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে আমি চেষ্টা করেছি জনগণের পাশে থাকার। সময় পেলেই এলাকার মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এর প্রমাণ এলাকার উন্নয়নের চিত্র দেখলেই বোঝা যাবে। এখন যারা নানা কথা বলছেন, এটা হচ্ছে বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা।’

এ আসনে আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী কানিজ ফাতেমা মোস্তাক মাঠে আছেন গত নির্বাচনের পর থেকেই। সাধারণ ভোটারদের ধারণা, মাঠে অনেক প্রার্থী থাকলেও সবদিক বিবেচনা করে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এবং কানিজ ফাতেমা মোস্তাকের মধ্যেই নৌকার মনোনয়ন সীমাবদ্ধ থাকবে।

কানিজ ফাতেমা মোস্তাক বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও ষড়যন্ত্র করে আমাকে ঋণখেলাপির গ্যারান্টার বানানো হয়েছে। অথচ খেলাপি ঋণের টাকা আমি পরিশোধ করেছিলাম। এরপরও নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু আমি মাঠ ছাড়িনি। এবার আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে নারীদের অধিকাংশ ভোট আমার বাক্সে পড়বে। আর এ আসনে নারী ভোটারও বেশি।’

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয় বলেন, ‘আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী। তিনি যখন যে নির্দেশ দেবেন, তা পালন করে যাবো। সম্মিলিতভাবে সবাইকে নিয়ে চেষ্টা করবো কক্সবাজারের চারটি আসনেই নৌকাকে বিজয়ী করার।’

কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, ‘কে মনোনয়ন পাবেন তা একমাত্র জানেন দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যাকেই মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে কাজ করতে প্রস্তুত আছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো নৌকাকে বিজয়ী করা। আর আমার বিশ্বাস তিনি (প্রধানমন্ত্রী) একজন শক্তিশালী ও যোগ্য ব্যক্তির হাতে নৌকা তুলে দেবেন। কারণ এ আসনে (সদর-রামু) দলীয় প্রতীকের সঙ্গে ব্যক্তি ইমেজও বিবেচ্য বিষয়।’

জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কাজ করছি। ওয়ান-ইলেভেনের আগে ঘোষিত দলীয় মনোনয়নও আমাকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ষড়যন্ত্র করে আমাকে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়। তাই এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার অধিকার আমারই বেশি।’

আওয়ামী লীগের এ মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পাশাপাশি এ আসনে ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হতে দৌড় ঝাঁপ করছেন পার্টির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট মো. তারেক ও জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন সিকদার।

জোটগত সিদ্বান্তের কারণে গতবার চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-১ আসনটি জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও এবার কক্সবাজার-৩ ও কক্সবাজার-৪ (মহেশখালী-কুতুবদীয়া) আসনের মধ্যে একটিও ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে জেলার বাইরে থেকেও প্রার্থী মনোনয়ন হতে পারে জানাচ্ছে জাপা সূত্র।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।