আনছার হোসেন:
করোনা ঝুঁকিতে যখন দেশের সব সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ঘরে ফিরে গেছেন, সেখানে ব্যতিক্রম একটি দপ্তর কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এই দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণে এই লকডাউনেও মাঠে-ময়দানে কাজ করে চলেছেন। করোনা পরবর্তী সময়ে মৌসুমের বোরো ফসল কৃষকের ঘরে তুলে দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে চান তারা।
সুত্র মতে, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে এবার ৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়েছে। কিন্তু ফসল ঘরে তুলতে সময় এখনও অনেক বাকি। এই সময়েই সারাবিশে^র মতো দেশে আক্রমণ করে বসেছে করোনা নামের এক অদৃশ্য ভাইরাস। আর এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে সরকার দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছে।
লকডাউনে দেশে সবকিছু থেমে গেলেও থেমে নেই বোরো ফসলের বেড়ে উঠা। আর এই সময়ে কৃষকের দরকার ঝুঁকি মোকাবেলায় পরামর্শ ও সেবা। সেই সেবা কৃষকের দ্বোরগোড়ায় পৌছে দিতে উখিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছেন।
দেশের অন্য দপ্তরে সাধারণ ছুটি চললেও যেন উখিয়া কৃষি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সেই ছুটি নেই।
সুত্র জানিয়েছেন, উখিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নকে ১৫টি ব্লকে ভাগ করে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে মাঠে দৌঁড়ে বেড়াচ্ছেন। এই কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দোলন চন্দ্র রায়।
তাদের মতে, বোরো ফসল কৃষকদের ঘরে তুলে দেয়ার পাশাপাশি ধান বিক্রির জন্য কৃষক তালিকা তৈরি, আউশের বীজ ও সার বিতরণ, শ্রমিক সংকট উত্তরণে মাঠের ধান কাটতে ‘রিপার’ ও কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করতে কাজ করছেন তারা।
করোনার এই দূর্যোগেও উপজেলার এই কৃষি কার্যক্রম তদারকি করছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আবুল কাশেম।
উখিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্র মতে, বোরো ধান কিনতে কৃষক তালিকা তৈরি, আউশ ধানের প্রণোদনায় কৃষক তালিকা তৈরি, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা পাশাপাশি ধানের ব্লাস্ট রোগ দমনসহ অন্য রোগ ও পোকার দমন, কৃষি কার্ড হালনাগাদ, ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসারের দায়িত্ব পালনসহ নানা ধরণের কাজ করতে হচ্ছে এই করোনা পরিস্থিতিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দোলন চন্দ্র রায়সহ দপ্তরের অন্য কৃষি কর্মকর্তারাও সাধারণ ছুটিতেও নিয়মিত অফিস করছেন এবং মাঠেও কাজ করছেন। এদের মধ্যে ৮ জন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা ৫ ইউনিয়নের ১৫টি ব্লকে দায়িত্ব পালন করছেন।
তাদেরই একজন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা এ এইচ জুনায়েদ। তিনি জানান, উখিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকের কাছে গিয়ে তাদের ব্যথা বোঝার চেষ্টা করছে। তাদের প্রয়োজন গুলো পূরণ করে দেশের শস্য সম্পদকে সমৃদ্ধ করতে সহযোগিতা করে চলেছেন কৃষি অফিসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।
এদিকে করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে সরকার সাধারণ ছুটির আওতায় যে ১৮টি মন্ত্রণালয়ের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কার্যালয় খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে তাতে কৃষি মন্ত্রণালয় আছে তিন নাম্বারে।
রত্নাপালং ছাদৃকাটা এলাকার কৃষক মোহাম্মদ আলমগীর জানান, এরা উপজেলায় প্রচুর বোরো চাষাবাদ হয়েছে। এখন অপেক্ষা করছেন কখন ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।
তিনি বলেন, কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা তাদের পরামর্শ ও নানা ভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সহায়তা না পেলে ফসলের বাম্পার ফলন হয়তো ঘরে তোলা যেতো না।
রাজাপালং ইউনিয়নের বটতলীর কৃষক মোহাম্মদ হাসান জানান, এবছর ব্রি ধান ৬৭, ৫৮, ৭৫, ৭৪ ও ২৮ জাতের ধানের চাষ হয়েছে।
তিনি বলেন, যতটুকু জানি পুরো উপজেলাতেই কৃষকরা আনুপাতিক এসব ফসল চাষাবাদ করেছেন। কৃষি কর্মকর্তারা সার, বীজ আর পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন।
তার মতে, করোনার এই দুঃসময়ে যদি কৃষি অফিসের সহযোগিতা না পেলে হয়তো পোকা মাকড়ের আক্রমণে পুরো ফসলটাই ঘরে তুলতে পারতাম না।
উখিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দোলন চন্দ্র রায় বলেন, করোনাভাইরাসের মতো দূর্যোগেও কৃষকের মাঠের কথা চিন্তা করে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠেই রয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা সরকারের নির্দেশনা মেনে কাজ করে চলেছি।
তার মতে, দেশে যেমন করোনা ঝুঁকি রয়েছে, তেমনি কৃষকের ক্ষেতেও এই ঝুঁকি রয়েছে। তাই আমরা এই ঝুঁকি কাটিয়ে ফসল ঘরে তুলতে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছি।
এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আমরা কৃষকদের দোরগোড়ায় কৃষি সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। কাজ করতে গিয়ে করোনার ঝুঁকি থাকলেও কৃষকদের কথা ভেবে সেই ঝুঁকিও আমরা মাথা পেতে নিয়েছি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।