বিশ্বজুরে করোনার সংক্রমণ বাড়ার মধ্যেই পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এর ফলে এপ্রিল মাসেও দেশে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে। এ মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২০৭ কোটি ডলার। এটি একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ এবং গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন ও আগের মাসের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে সাড়ে ২০ বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৩৯ শতাংশ বেশি। যা নতুন রেকর্ড। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তরা জানিয়েছেন, রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে এপ্রিলে প্রবাসীরা আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন। ঈদের কারণে মে মাসে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরও বাড়বে।
২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরেও এই সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, নগদ প্রণোদনার জাদুতেই করোনার মধ্যেও রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বগতি ধারা বজায় রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই প্রবাসী আয়ের ঊর্ধ্বগতি ধারা বজায় রয়েছে। এর অন্যতম কারণ সরকারের ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা। এছাড়া প্রতিবছর রোজা ও ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের কাছে একটু বেশি অর্থ পাঠান। করোনা সংক্রমণ বাড়লেও এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল মাসে ২০৬ কোটি ৭১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরের এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল মাত্র ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার। আর গত মার্চ মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৯১ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ১৭৮ কোটি ডলার। জানুয়ারিতে আসে ১৯৬ কোটি ১৯ লাখ ডলার। অর্থাত্ টানা তিন মাস পর এপ্রিলে প্রবাসী আয় আবার ২০০ কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করলো। সবমিলে চলতি অর্থবছরের (জুলাই-এপ্রিল) প্রথম ১০ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ৬৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। আর গত অর্থবছরের পুরো সময়ে এসেছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর মাসে ২০৫ কোটি ৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে। এছাড়া গত নভেম্বরে রেমিট্যান্স আসে ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। অক্টোবরে আসে ২১০ কোটি ২১ লাখ ডলার। এছাড়া সেপ্টেম্বরে একক মাস হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে। আর জুলাইতে একক মাস হিসেবে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে। ওই মাসে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার।
এদিকে, সদ্য বিদায়ী ২০২০ সালেও রেমিট্যান্স আহরণে অনন্য রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। গত বছরে দেশে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ( ২১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। এর আগে এক বছরে বাংলাদেশে এত রেমিটেন্স আর কখনো আসেনি। এটি তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৩৪০ কোটি ৯৬ লাখ ডলার বা ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি।
এদিকে, রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথথমবার রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। মাঝখানে কিছুটা কমার পর আবার বাড়তে বাড়তে এখন ৪৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রয়েছে। রবিবার দিনশেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। চলতি সপ্তাহে রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।