জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১৭ মার্চ প্যারেড গ্রাউন্ডের মূল অনুষ্ঠান স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি। সেদিন ছোট আকারে সীমিত পরিসরে উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। রবিবার রাতে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, জনস্বাস্থ্য ও জনগণের সুবিধার বিষয়টি মাথায় রেখে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। পরে ক্ষুদ্র পরিসরে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। তবে জনসমাগম এড়িয়ে বছরব্যাপী উদযাপন করা হবে মুজিববর্ষ। আজ সোমবার জাতীয় কমিটির সভা আছে, সেখানে কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
গতকাল বিকালে বাংলাদেশে তিনজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করার কথা আইইডিসিআর জানানোর পর রাতে বৈঠকে বসে জাতীয় কমিটি। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে মুজিববর্ষ উদ্বোধনের মূল অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। তাতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি বিদেশি অতিথিদেরও যোগ দেওয়ার কথা ছিল।
বিদেশি অতিথিদের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কামাল আবদুল নাসের বলেন, মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিদের আসার কথা ছিল আপনারা জানেন। সেখানে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র থেকে শুরু করে অনেকের আসার কথা ছিল। কিন্তু তারা আপাতত আসবেন না। পরে বিদেশি অতিেথিদের ডাকা হবে। যেহেতু আমরা বর্তমান কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করছি, সেহেতু নতুন কর্মসূচি আপনাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও জনসমাগম পরিহার করার কথা বলা হয়েছে। কোনো অনুষ্ঠান স্থগিত রাখা হয়নি। কর্মসূচি যেভাবে সাজানো হয়েছিল সেটা পুনর্বিন্যাস করা হবে। প্যারেড স্কয়ারে জনসমাগমের যে অনুষ্ঠানটি সেটাকে পুনর্বিন্যাস করে পরবর্তীতে করা হবে। ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, টুঙ্গীপাড়ায় জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দেশব্যাপী বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা আয়োজন করা হবে। এদিন জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি সারা বাংলাদেশের দোয়া মাহফিল এবং শ্রদ্ধাজ্ঞাপন সেটাও থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসে তিন জনের আক্রান্তের বিষয়টি গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের একটি টিম এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, এটা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য বড় সমাবেশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন। আগামী ১৭ মার্চ মুজিববর্ষের কর্মসূচি স্থগিত করার প্রস্তাব দেন তারা। এই প্রস্তাব পাওয়ার সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেন, দেশ ও জনস্বার্থে আগামী ১৭ মার্চ মুজিববর্ষের প্যারেড গ্রাউন্ডের মুল অনুষ্ঠান স্থগিত করতে হবে। প্রসঙ্গত, মুজিববর্ষের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছিল প্রায় দুইমাস আগে। এগিয়ে এসেছে সেই দিনটি, আগামী ১৭ মার্চ শুরু হচ্ছে মুজিবর্ষ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয় আগেই। মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার ওয়ানচুক ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অংশ নেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস নিয়ে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, এর প্রভাবে আক্রান্ত দেশসমূহের সরকার প্রধানরা তাদের নানা কর্মসূচি বাতিল করছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করা হয়। গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বৈঠক করেন। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী দিবসের অনুষ্ঠানে করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে এ সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান।
সূত্রঃ ইত্তেফাক
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।