‘পড়াশোনার সুযোগ তেমন মেলেনি। মাত্র তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। ছিলেন ইয়াবাসেবী। চিংড়ি মাছের পোনা, কটেজ ব্যবসা, জমি-জমা বিক্রিতেও আসেনি কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ টাকা। এরপর দ্রুত বিত্তশালী হবার স্বপ্নে পা বাড়ান ইয়াবা ব্যবসায়। গত ৪ বছরে তিনি গড়ে তোলেন ইয়াবার বড় একটি সিন্ডিকেট। এক লাখ পিস কমে কখনও ইয়াবার চালান কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আনতেন না তিনি। নিজ রেন্ট-এ-কারের ব্যবসার সুবিধা নিয়ে নিজস্ব গাড়িতে শুধু ঢাকা নয় পার্শ্ববর্তী জেলাতেও ইয়াবার চালান করতেন।’ র্যাব বলছিল এমনই এক ‘ইয়াবা সম্রাট’-এর কথা, যার নাম মো. আলম।
রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন ১৯ নং সড়কের পশ্চিম ধানমন্ডির মধুবাজারের ১৫৩ নং বাসা হতে মো. আলমসহ চারজনকে বুধবার বিকেলে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন। এসময় তাদের কাছ থেকে এক লাখ তেইশ হাজার পিস ইয়াবা, ইয়াবা বিক্রির ৮১ হাজার টাকা, সাতটি মোবাইল ফোন জব্দ করে র্যাব-২ এর একটি দল।
গ্রেফতার হওয়া অন্যরা হলেন, মো. আলমের ছোট ভাই মো. জসিম উদ্দিন (৩০), মো. সালাউদ্দিন (২৭) ও মো. মিজানুর রহমান (৩৩)। র্যাব-২ জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া সকলের বাড়ি কক্সবাজারে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কারওয়ানবাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) আনোয়ার উজ জামান বলেন, মিয়ানমারের এক মাদক ব্যবসায়ীর হাত ধরে ইয়াবা ব্যবসায় নামেন মো. আলম। কক্সবাজারের কলাতলীতে নিজের গড়া ‘শামীম গেস্ট হাউজ’কে ইয়াবা মজুদের জন্য ব্যবহার করেন তিনি। সেখান থেকে মূলত নিজস্ব রেন্ট-এ কারের মাধ্যমে, কখনও পিকআপ, ট্রাক বা বাসের বডিতে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ইয়াবার চালান করতেন।
জিজ্ঞাসাবাদে আলম র্যাবকে জানিয়েছে, এক লাখ পিসের নিচে কখনও তিনি ইয়াবার চালান ঢাকায় আনেননি। যতবার তিনি ইয়াবা সফলভাবে ঢাকায় পাঠিয়েছেন ততবারই পরিবর্তন হয়েছে মোবাইল ফোন নম্বর।
র্যাব-২ সিও বলেন, গ্রেফতার হওয়া অপর ব্যক্তি আলমের ভাই জসিম উদ্দিন ঢাকা কলেজের সমাজবিজ্ঞানের তৃতীয়বর্ষের ছাত্র। ব্যবসার জন্য আলম তার ভাই জসিমকে ধানমন্ডিতেই আলাদা একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেন। সেখান থেকে সুকৌশলে মাদকসেবীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন আলম। ওই ফ্লাটটিতে মাদকের আসর বসত নিয়মিত। এছাড়া ওই ফ্লাট থেকেই পাইকারীতে ইয়াবা নিয়ে যেত ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে গ্রেফতার সালাউদ্দিন কক্সবাজার পৌর প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয় হতে ষষ্ঠ শ্রেণি পাসের পর মোটরগাড়ির মিস্ত্রীর কাজ শুরু করেন। সেই সুবাদে মো. আলমের সঙ্গে পরিচয় এবং ইয়াবা ব্যবসায় বাহক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
মিজানুর রহমান যাত্রীবাহী বাসের চালক হলেও মূলত ইয়াবা বহন করাই তার আসল কাজ। মিজানুর বাসের বডিতে করে সুকৌশলে ইয়াবা বহন করে ঢাকায় কাাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছে দিতেন।
র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) আনোয়ার উজ জামান বলেন, মো. আলম মূলত পুরো সিন্ডিকেটকে কো-অর্ডিনেট করে আসছিল। তাকেসহ গ্রেফতারকৃতদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।