আবদুল আজিজ,বাংলা ট্রিবিউন (কক্সবাজার): বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে দেয়া কাঁটাতারের বেড়া পুনরায় মেরামত করছে মিয়ানমার। গত তিন দিন ধরে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে ক্ষতিগ্রস্ত কাঁটাতারের মেরামত করা হচ্ছে। আজ সোমবারও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, তুমব্রু ও জলপাইতলী সীমান্তে মেরামত করতে দেখা গেছে সে দেশের সীমান্তে নিয়োজিত বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যদের। স্থানীয়দের ধারণা, আর কোন রোহিঙ্গা যাতে মিয়ানমারে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ক্ষতিগ্রস্ত কাটা তারের বেড়া মেরামত করে মজবুত করা হচ্ছে।
মিয়ানমার সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সে দেশের অভ্যন্তরে সীমান্তে দেয়া কাঁটাতারের বেড়া মেরামত করছে। সীমান্ত ঘেষে তাবু তৈরী করে শ্রমিক নিয়ে কাঁটাতারের বেড়া মেরামত করা হচ্ছে। এজন্য মালামাল পরিবহণের ট্রাক ও যাতায়াতের বিভিন্ন যানবাহন চলাচলের দৃশ্যও চোখে পড়ার মতো। সীমান্তে যে সব পয়েন্ট দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া ক্ষতিগ্রস্ত করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মুলত: সে সব পয়েন্ট গুলোতে মেরামত অব্যাহত করছে। একই সাথে কাঁটাতারের বেড়ার সাথে লাগোয়া সীমান্ত পিলারও পরিবর্তন করা হচ্ছে। যাতে করে কোন রোহিঙ্গা ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে।
ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে বসকারি স্থানীয় যুবক রাহামত উল্লাহ, সাদেক মিয়া ও বৃদ্ধ ফজল আহমদ সহ অনেকে জানিয়েছেন, গত তিন দিন ধরে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী তাদের সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া মেরামত করছে। এসব কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন ধরণের যানবাহন আসছে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে। স্থানীয় এসব মানুষের ধারণা, রোহিঙ্গারা আর কোন সময় যাতে মিয়ানামারে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ, অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন সীমান্তে তাদের তৎপরতা বেশী দেখা যাচ্ছে। যে সব স্থানে কোন দিন বিজিপি আসেনি, সেসব স্থানেও তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের ছরার পাশ ঘেষে নো-ম্যাসন ল্যান্ডে গড়ে উঠেছে একটি ছোট রোহিঙ্গা বস্তি। ওই্ বস্তির থাকা রোহিঙ্গা নাগরিক আব্দুল মতলব, ছৈয়দ আলম, কালো মিয়া, মরিয়ম বেগম, ফাতেমা সহ অনেকেই জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের গ্রাম গুলো এখন সবই ফাঁকা। সেখানে কোন বসতিতে মানুষ নেই। যে কিছু লোক এখনো রয়েছে, তারাও বিভিন্ন ঝোপজঙ্গলে লুকিয়ে আছেন। এ কারণে আর কোন রোহিঙ্গা যাতে মিয়ানমারে ফিরে যেতে না পারে সে ব্যাপারে আরো কঠোর অবস্থান নিয়েছে মিয়ানমার সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া মেরামত, বিভিন্ন প্রবেশধারে স্থল মাইন পুতে রাখা ও আকস্মিকভাবে সীমান্তে টহল জোরদার সহ নানা কার্যক্রম করে যাচ্ছে। এতে রোহিঙ্গাদের মনে আরো ভয়-ভীতি বিরাজ করছে।
এসব রোহিঙ্গাদের মতে, সীমান্তের খুব কাছে অবস্থান নেয়ার একটি উদ্দেশ্য ছিল যে তারা রাখাইনের পরিস্থিতি সামান্য শান্ত হলেও তারা দেশে ফিরে যাবেন। কারণ এদের কারো বাড়ি সীমান্তের এক থেকে তিন কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে। এমনিতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে তারা দিনে একবার হলেও নিজের ক্ষতিগ্রস্ত বসতি গুলো দেখতে যেতো। আর এখন কাঁটাতারের বেড়া আরো মজবুত করায় সেটি আর সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক লে.কর্নেল মন্জুরুল হাসান খান বলেন, মিয়ানমার তাদের কাঁটাতারের বেড়া মেরামত করছে সেটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরিণ ব্যাপার। সেখানে আমাদের কোন হস্তক্ষেপ নেই। তবে আমরা আমাদের সীমান্তে খুব সতর্কবস্থায় আছি। সীমান্তের প্রতিটি পয়েন্ট সার্বক্ষনিক নজরধারিতে রয়েছে বিজিবি’র সদস্যরা।
বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যকার সীমান্তপথ রয়েছে ২৭১ কিলোমিটার। এরমধ্যে ২০৮ কিলোমিটার স্থলপথ ও ৬৩ কিলোমিটার জলসীমান্ত রয়েছে। গত ৫বছর আগে থেকেই মিয়ানমারের অভ্যন্তরের অধিকাংশ সীমান্ত জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছে মিয়ানমার সরকার।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।