দুই মাস পনের দিন। প্রতীক্ষার প্রহর। দীর্ঘ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান। শিলং পুলিশের অনুমতি নেয়াই ছিল। ভারতের সময় রাত আটটা ২০ মিনিটে শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে হাসিনা আহমেদ পৌঁছালে মুহূর্তেই বদলে যায় চিত্র। আপ্লুত দু’জনই। বাক্রুদ্ধ। স্বামী সালাহউদ্দিন আহমদের হাত জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন হাসিনা আহমেদ। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্ত করে নিতে চান তৃতীয় কোন দেশে।
স্বামীকে ফিরে পাওয়ার সংবাদটি ফোনে শুনেছেন গত ১১ ই মে। সামান্য কথাও বলেছেন দুজনে। এরপর থেকে স্বামীর দেখা পেতে উদগ্রীব ছিলেন হাসিনা আহমেদ। স্বামী বেচে আছেন এ সংবাদটি জানার এক সপ্তাহ পর তাদের দেখা হয়েছে। যদিও সব মিলিয়ে দুই মাস ১৫ দিন পর তাদের দেখা। স্বামীর বেঁচে থাকার সংবাদ জানার মাঝখানে ভিসা নিয়ে দৌড়াদৌড়িতে ছিলেন হাসিনা আহমেদ। অবশেষে গত রোববার বিকালে ভিসা পান। ভিসা পেয়েই স্বামীর সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেন। এদিন রাতেই শিলংয়ের উদ্দেশ্যে কলকাতায় যাওয়ার জন্য ঢাকা ছাড়েন। মাঝখানে শাহজাহাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে তাকে বেশ ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কলকাতায় যেতে এয়ার ইন্ডিয়ার বোর্ডিং পাস সংগ্রহের পর ইমিগ্রেশন অতিক্রম করেন হাসিনা আহমেদ। কিন্তু ইমিগ্রেশন অতিক্রম করার পরও ভারতের যাওয়ার সময় সঙ্গে কি কি নিয়ে যাচ্ছেন তা চেক করেন ইমিগ্রেশনের দায়িত্বরত এসবি’র কর্মকর্তা। এ সময় তাকে আধা ঘন্টার বেশি সময় বসিয়ে রাখা হয়। কলকাতায় এসে রাত্রী যাপনের পর বেলা ১২ টার জেট এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে গৌহাটি আসেন। এরপর ঝুম বৃষ্টির কারণে শিলংয়ে পৌঁছাতে হাসিনা আহমেদের পাঁচ ঘন্টা সময় লেগে যায়। এসেই এসপি’র অনুমতির জন্য ওই অফিসে যান। অনুমতি মেলার পর সোজা সিভিল হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালে ছিল অন্য রকম পরিবেশ। সিভিল হাসপাতালের ইউটিপি সেলের ভেতরে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি’র যুগ্ম- মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ ও তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ একে অপরকে অনেক দিন পর পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আবেগের কারণে দুই জন পারিবারিক ভালমন্দ ছাড়া খুব বেশি কথাবার্তা বলতে পারেননি। স্বামীর সঙ্গে দেখা করার পর বাইরে বেরিয়ে হাসিনা আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি ভারত সরকার, মেঘালয়ের প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে খুব বেশি কৃতজ্ঞ। কারণ তারা আমার স্বামীকে আশ্রয় দিয়েছেন ও সেবা দিচ্ছেন। আমার স্বামী খুব বেশি অসুস্থ। আমরা চেষ্টা করবো আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্ত করে উন্নত চিকিৎসার জন্য থার্ড কোন দেশে নিয়ে যেতে। উনি অসুস্থ তাই খুব বেশি কথা বলতে পারি নাই। আগামীকাল (আজ) আবার আসবো। এসে আইনি প্রক্রিয়া সর্ম্পকে তার সঙ্গে কথাবার্তা বলবো। চেষ্টা করবো আইনজীবি নিয়ে এসে ওনার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে। এখনও আইনজীবি ঠিক করিনি। তবে আইনজীবি নিয়োগের কথাবার্তা চলছে।
প্রিজন সেলে স্বামী- স্ত্রী দুজনে যা বললেন: ভারতের সময় রাত আটটা ২০ মিনিটে শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে আসেন সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপি’র সহ- দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনিসহ কয়েক জন ছিলেন। হাসপাতালে এসেই তারা পুলিশের অনুমতি কক্ষে যান। এরপর ইউটিপি সেলে যান। হাসিনা আহমেদ সালাহউদ্দিনের প্রিজন সেলের সামনে গিয়েই তাকে জিজ্ঞাসা করেন আপনি কেমন আছেন? প্রতি উত্তরে সালাহউদ্দিন কিছু বলার আগেই তার চোখ ছল ছল করে উঠে। নিজের আবেগ সামলানোর চেষ্টা করেন। তবুও কষ্ট করে বলে উঠেন, আমি আছি মোটামুটি। বাচ্চারা ভাল আছে। এ সময় স্বামী- স্ত্রী দুজনকে একসঙ্গে হাত ধরাধরি করে কেদে উঠেন। প্রায় দুমিনিট ধরে তাদের কান্নাকাটি চলে। এ সময় কিছুটা দূরে দাড়িয়ে থাকা বিএনপি’র সহ- দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি, ভাতিজা আ. করিম, জাপান প্রবাসী ক্যাপ্টেন রবিন কে জামান ও ভাগ্নের চোখ ছল ছল করে উঠেন। পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হলে সালাহউদ্দিন বাচ্চারা কেমন আছে তা জানতে চান। হাসিনা আহমেদ এ সময় বাচ্চাদের পড়াশোনার বিষয়ে বলেন। মামলার পদক্ষেপ কিভাবে নেয়া যায় ওই বিষয়ে গাইড লাইন দেন সালাহউদ্দিন। স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা শেষে ভায়রার হাত ধরে আবেগতাড়িত হন সালাহউদ্দিন। বলেন, বিপদের সময় আপনি আমার সন্তানদের আগলে রেখেছেন। এ ঋণ আমি কখনো ভূলবো না। এসব কথা বলার সময়েই পুলিশের কর্মকর্তারা বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়া দিতে থাকেন। কারণ নির্ধারিত সময়সীমা তখন শেষ হয়ে যায়। হাসিনা আহমেদ সালাহউদ্দিনকে বলেন, কাল আবার আসবো ওই সময় আলাপ করা যাবে। এভাবেই হাসিনা আহমেদ বাইরে বেরিয়ে আসেন। সঙ্গে ছিলেন তার শুভানুধ্যায়ীরা।
বাংলাদেশ তো
আমার দেশ
এর আগে প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। বলেন, স্বেচ্ছায় নয়, চোখ, হাত ও কান বেঁধে শিলংয়ের গলফ লিংকে আমাকে ফেলে যাওয়া হয়েছে। সে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। একমাত্র আমিই বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছি। ফেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয়েছে ১২ ঘণ্টার জার্নি ছিল। পাশাপাশি ছিল দুই ঘণ্টা যাত্রা বিরতি। ওই সময় তাদের কিছু কথা শোনা ছাড়া পুরো সময় চোখ, হাত, কান বাঁধা ছিল। এরপর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশের কাছে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছি। গতকাল শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালের আন্ডার ট্রায়াল প্রিজনারে (ইউটিপি) চিকিৎসাধীন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে ফিরে আসার ব্যাপারেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় সালাহউদ্দিন আহমেদকে বেশ দুর্বল দেখাচ্ছিল। তিনি ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছিলেন না। হাঁটতে সমস্যা হচ্ছিল। একজন পুলিশ সদস্যের সহায়তায় সালাহউদ্দিন হাঁটাচলা করেন। সাদা পায়জামার সঙ্গে সাদা ফতুয়ার উপর স্টেপ টাইপের চাদর পরা ছিলেন তিনি। সালাহউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলার সময় তাকে ইউটিপি সেল থেকে শিলং সিভিল হাসপাতালের মূল ভবনে সিটি স্ক্যান করতে নেয়া হয়। ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে মূল ভবনে নিয়ে বিভিন্ন টেস্ট করা হয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদের কথোপকথন হুবহু তুলে ধরা হলোÑ
সালাহউদ্দিন ভাই কেমন আছেন?
উত্তর: ভাল না। খুবই অসুস্থ। তবে এখনও জীবিত আছি। কেমন আছেন আপনারা?
আপনি কি বাংলাদেশে ফিরতে চান?
উত্তর: বাংলাদেশ তো আমার দেশ। কেন ফিরবো না। স্ত্রী আসলে লিগ্যাল প্রসিডিউর কমপ্লিট করে ফেরার বিষয়টি ঠিক হবে।
কিভাবে ভারতের শিলংয়ে এলেন? স্বেচ্ছায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন?
উত্তর: আমার চোখ, হাত বাঁধা ছিল। একটা লং জার্নি। মনে হয় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা হবে। এর মধ্যে দুই ঘণ্টা হয়তো স্টপেজ ছিল। শিলং গলফ লিংকের কাছে ফেলে রেখে যাওয়ার পর ওই খানের লোকদের বললাম আমাকে পুলিশের কাছে নিয়ে যাও বা পুলিশকে খবর দাও আমার এই অবস্থা। তখন তারা পুলিশকে কল করলো। পুলিশ এসে আমাকে নিয়ে গেল। অর্থাৎ স্বেচ্ছায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। পুলিশকে আমার হিস্ট্রি বলার পর তারা হয়তো মনে করেছিল এটা একটা মেন্টাল পেসেন্ট।
আপনি কি এখনই দেশে ফিরতে চান না?
উত্তর: দেশে তো এখন রেড এলার্ট জারি করেছে ইন্টারপোল। এটা সরকারের মোটেও উচিত হয়নি। আমি তো কোন সাজাপ্রাপ্ত দাগি আসামি নই। দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা কোন আসামিও নই। এটা তারা কেন করছে আমি তো জানি না। আমি একজন রাজনীতিবিদ।
গাড়িতে করে নিয়ে আসার সময় কেউ নিজেদের মধ্যে কোন কথা বলেছিল কি?
উত্তর: আমার তো চোখ, কান বন্ধ ছিল। তাই এসব কিছু এখন আমার মনে নেই। এখন সেসব কিছু বলতেও পারবো না।
আপনি কি মনে করেন বেশি অপরাধ করেছেন?
উত্তর: সেটা আমি মনে করি না।
শাশুড়ির মৃত্যুর কারণে তাবিথ আউয়াল এসেই চলে গেলেন: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিনকে না দেখেই ফিরে যেতে হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালকে। কারণ গতকালই তার শাশুড়ি মারা গেছেন। গতকাল সকালে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনিকে বিষয়টি জানিয়ে শিলং থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। উল্লেখ্য, গত রোববার শিলং আসেন তাবিথ আউয়াল। তার ইচ্ছে সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ আসার পর তার সঙ্গে দেখা করে যাবেন। কিন্তু তার আগেই দুঃসংবাদ পেয়ে ঢাকার উদ্দেশে শিলং ছেড়েছেন।
স্বামীকে ফিরে পাওয়ার সংবাদটি ফোনে শুনেছেন গত ১১ ই মে। সামান্য কথাও বলেছেন দুজনে। এরপর থেকে স্বামীর দেখা পেতে উদগ্রীব ছিলেন হাসিনা আহমেদ। স্বামী বেচে আছেন এ সংবাদটি জানার এক সপ্তাহ পর তাদের দেখা হয়েছে। যদিও সব মিলিয়ে দুই মাস ১৫ দিন পর তাদের দেখা। স্বামীর বেঁচে থাকার সংবাদ জানার মাঝখানে ভিসা নিয়ে দৌড়াদৌড়িতে ছিলেন হাসিনা আহমেদ। অবশেষে গত রোববার বিকালে ভিসা পান। ভিসা পেয়েই স্বামীর সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেন। এদিন রাতেই শিলংয়ের উদ্দেশ্যে কলকাতায় যাওয়ার জন্য ঢাকা ছাড়েন। মাঝখানে শাহজাহাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে তাকে বেশ ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কলকাতায় যেতে এয়ার ইন্ডিয়ার বোর্ডিং পাস সংগ্রহের পর ইমিগ্রেশন অতিক্রম করেন হাসিনা আহমেদ। কিন্তু ইমিগ্রেশন অতিক্রম করার পরও ভারতের যাওয়ার সময় সঙ্গে কি কি নিয়ে যাচ্ছেন তা চেক করেন ইমিগ্রেশনের দায়িত্বরত এসবি’র কর্মকর্তা। এ সময় তাকে আধা ঘন্টার বেশি সময় বসিয়ে রাখা হয়। কলকাতায় এসে রাত্রী যাপনের পর বেলা ১২ টার জেট এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে গৌহাটি আসেন। এরপর ঝুম বৃষ্টির কারণে শিলংয়ে পৌঁছাতে হাসিনা আহমেদের পাঁচ ঘন্টা সময় লেগে যায়। এসেই এসপি’র অনুমতির জন্য ওই অফিসে যান। অনুমতি মেলার পর সোজা সিভিল হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালে ছিল অন্য রকম পরিবেশ। সিভিল হাসপাতালের ইউটিপি সেলের ভেতরে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি’র যুগ্ম- মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ ও তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ একে অপরকে অনেক দিন পর পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আবেগের কারণে দুই জন পারিবারিক ভালমন্দ ছাড়া খুব বেশি কথাবার্তা বলতে পারেননি। স্বামীর সঙ্গে দেখা করার পর বাইরে বেরিয়ে হাসিনা আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি ভারত সরকার, মেঘালয়ের প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে খুব বেশি কৃতজ্ঞ। কারণ তারা আমার স্বামীকে আশ্রয় দিয়েছেন ও সেবা দিচ্ছেন। আমার স্বামী খুব বেশি অসুস্থ। আমরা চেষ্টা করবো আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্ত করে উন্নত চিকিৎসার জন্য থার্ড কোন দেশে নিয়ে যেতে। উনি অসুস্থ তাই খুব বেশি কথা বলতে পারি নাই। আগামীকাল (আজ) আবার আসবো। এসে আইনি প্রক্রিয়া সর্ম্পকে তার সঙ্গে কথাবার্তা বলবো। চেষ্টা করবো আইনজীবি নিয়ে এসে ওনার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে। এখনও আইনজীবি ঠিক করিনি। তবে আইনজীবি নিয়োগের কথাবার্তা চলছে।
প্রিজন সেলে স্বামী- স্ত্রী দুজনে যা বললেন: ভারতের সময় রাত আটটা ২০ মিনিটে শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে আসেন সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপি’র সহ- দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনিসহ কয়েক জন ছিলেন। হাসপাতালে এসেই তারা পুলিশের অনুমতি কক্ষে যান। এরপর ইউটিপি সেলে যান। হাসিনা আহমেদ সালাহউদ্দিনের প্রিজন সেলের সামনে গিয়েই তাকে জিজ্ঞাসা করেন আপনি কেমন আছেন? প্রতি উত্তরে সালাহউদ্দিন কিছু বলার আগেই তার চোখ ছল ছল করে উঠে। নিজের আবেগ সামলানোর চেষ্টা করেন। তবুও কষ্ট করে বলে উঠেন, আমি আছি মোটামুটি। বাচ্চারা ভাল আছে। এ সময় স্বামী- স্ত্রী দুজনকে একসঙ্গে হাত ধরাধরি করে কেদে উঠেন। প্রায় দুমিনিট ধরে তাদের কান্নাকাটি চলে। এ সময় কিছুটা দূরে দাড়িয়ে থাকা বিএনপি’র সহ- দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি, ভাতিজা আ. করিম, জাপান প্রবাসী ক্যাপ্টেন রবিন কে জামান ও ভাগ্নের চোখ ছল ছল করে উঠেন। পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হলে সালাহউদ্দিন বাচ্চারা কেমন আছে তা জানতে চান। হাসিনা আহমেদ এ সময় বাচ্চাদের পড়াশোনার বিষয়ে বলেন। মামলার পদক্ষেপ কিভাবে নেয়া যায় ওই বিষয়ে গাইড লাইন দেন সালাহউদ্দিন। স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা শেষে ভায়রার হাত ধরে আবেগতাড়িত হন সালাহউদ্দিন। বলেন, বিপদের সময় আপনি আমার সন্তানদের আগলে রেখেছেন। এ ঋণ আমি কখনো ভূলবো না। এসব কথা বলার সময়েই পুলিশের কর্মকর্তারা বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়া দিতে থাকেন। কারণ নির্ধারিত সময়সীমা তখন শেষ হয়ে যায়। হাসিনা আহমেদ সালাহউদ্দিনকে বলেন, কাল আবার আসবো ওই সময় আলাপ করা যাবে। এভাবেই হাসিনা আহমেদ বাইরে বেরিয়ে আসেন। সঙ্গে ছিলেন তার শুভানুধ্যায়ীরা।
বাংলাদেশ তো
আমার দেশ
এর আগে প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। বলেন, স্বেচ্ছায় নয়, চোখ, হাত ও কান বেঁধে শিলংয়ের গলফ লিংকে আমাকে ফেলে যাওয়া হয়েছে। সে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। একমাত্র আমিই বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছি। ফেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয়েছে ১২ ঘণ্টার জার্নি ছিল। পাশাপাশি ছিল দুই ঘণ্টা যাত্রা বিরতি। ওই সময় তাদের কিছু কথা শোনা ছাড়া পুরো সময় চোখ, হাত, কান বাঁধা ছিল। এরপর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশের কাছে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছি। গতকাল শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালের আন্ডার ট্রায়াল প্রিজনারে (ইউটিপি) চিকিৎসাধীন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে ফিরে আসার ব্যাপারেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় সালাহউদ্দিন আহমেদকে বেশ দুর্বল দেখাচ্ছিল। তিনি ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছিলেন না। হাঁটতে সমস্যা হচ্ছিল। একজন পুলিশ সদস্যের সহায়তায় সালাহউদ্দিন হাঁটাচলা করেন। সাদা পায়জামার সঙ্গে সাদা ফতুয়ার উপর স্টেপ টাইপের চাদর পরা ছিলেন তিনি। সালাহউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলার সময় তাকে ইউটিপি সেল থেকে শিলং সিভিল হাসপাতালের মূল ভবনে সিটি স্ক্যান করতে নেয়া হয়। ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে মূল ভবনে নিয়ে বিভিন্ন টেস্ট করা হয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদের কথোপকথন হুবহু তুলে ধরা হলোÑ
সালাহউদ্দিন ভাই কেমন আছেন?
উত্তর: ভাল না। খুবই অসুস্থ। তবে এখনও জীবিত আছি। কেমন আছেন আপনারা?
আপনি কি বাংলাদেশে ফিরতে চান?
উত্তর: বাংলাদেশ তো আমার দেশ। কেন ফিরবো না। স্ত্রী আসলে লিগ্যাল প্রসিডিউর কমপ্লিট করে ফেরার বিষয়টি ঠিক হবে।
কিভাবে ভারতের শিলংয়ে এলেন? স্বেচ্ছায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন?
উত্তর: আমার চোখ, হাত বাঁধা ছিল। একটা লং জার্নি। মনে হয় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা হবে। এর মধ্যে দুই ঘণ্টা হয়তো স্টপেজ ছিল। শিলং গলফ লিংকের কাছে ফেলে রেখে যাওয়ার পর ওই খানের লোকদের বললাম আমাকে পুলিশের কাছে নিয়ে যাও বা পুলিশকে খবর দাও আমার এই অবস্থা। তখন তারা পুলিশকে কল করলো। পুলিশ এসে আমাকে নিয়ে গেল। অর্থাৎ স্বেচ্ছায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। পুলিশকে আমার হিস্ট্রি বলার পর তারা হয়তো মনে করেছিল এটা একটা মেন্টাল পেসেন্ট।
আপনি কি এখনই দেশে ফিরতে চান না?
উত্তর: দেশে তো এখন রেড এলার্ট জারি করেছে ইন্টারপোল। এটা সরকারের মোটেও উচিত হয়নি। আমি তো কোন সাজাপ্রাপ্ত দাগি আসামি নই। দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা কোন আসামিও নই। এটা তারা কেন করছে আমি তো জানি না। আমি একজন রাজনীতিবিদ।
গাড়িতে করে নিয়ে আসার সময় কেউ নিজেদের মধ্যে কোন কথা বলেছিল কি?
উত্তর: আমার তো চোখ, কান বন্ধ ছিল। তাই এসব কিছু এখন আমার মনে নেই। এখন সেসব কিছু বলতেও পারবো না।
আপনি কি মনে করেন বেশি অপরাধ করেছেন?
উত্তর: সেটা আমি মনে করি না।
শাশুড়ির মৃত্যুর কারণে তাবিথ আউয়াল এসেই চলে গেলেন: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিনকে না দেখেই ফিরে যেতে হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালকে। কারণ গতকালই তার শাশুড়ি মারা গেছেন। গতকাল সকালে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনিকে বিষয়টি জানিয়ে শিলং থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। উল্লেখ্য, গত রোববার শিলং আসেন তাবিথ আউয়াল। তার ইচ্ছে সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ আসার পর তার সঙ্গে দেখা করে যাবেন। কিন্তু তার আগেই দুঃসংবাদ পেয়ে ঢাকার উদ্দেশে শিলং ছেড়েছেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।