এ এইচ সেলিম উল্লাহঃ প্রচুর বৃষ্টি ও আবহাওয়া প্রতিকুলে থাকায় কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন কেন্দ্র ফাঁকা রয়েছে। আজ (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে এই অবস্থা দেখা দিয়েছে। তবে কিছু কিছু রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হচ্ছে। কেন্দ্রের কর্তব্যরত কর্মকর্তারা বলছেন, বিকালে দিকে হয়তো রোহিঙ্গাদের ভিড় বাড়তে পারে।
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কেন্দ্রের সমন্বয়ক মেজর রেজা বলেন, ‘আজ সকালে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে আবহাওয়া প্রতিকুল অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে রোহিঙ্গাদের ্উপস্থিতির সংখ্যা কমে গেছে। আজ সকাল পর্যন্ত এই নিবন্ধন কেন্দ্রে ৬হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ নিবন্ধিত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিনের জন্য রোহিঙ্গাদের ভিড় বাড়বে’।
এই নিবন্ধন কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষামান রোহিঙ্গা শফিউল্লাহ, সাজেদা খাতুন ও রহিমা বিবি বলেন, ‘প্রচুর বৃষ্টির কারণে অনেকে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য কেন্দ্রে আসেনি। এছাড়াও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হলে সরকার এসব রোহিঙ্গাদের খুব দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত পাঠানের একটি গুজব ছড়িয়ে দিয়েছে একটি মহল। এ কারণে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি কমে গেছে’। পরে এই প্রতিবেদক উপস্থিত রোহিঙ্গাদের কাছে নিবন্ধিত হলে কি কি সরকারি সুযোগ সুবিধা পাবে বিস্তারিত অবহিত করানোর পর অনেকে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য কেন্দ্রে দৌড়ে যায়।
প্রসঙ্গ, গত ১১ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গাদের সঠিক সংখ্যা নির্ণয় ও পরিচয় নিশ্চিত করতে বায়োমেট্্িরক পদ্ধতিতে নিবন্ধন শুরু করে সরকার। এতে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সহায়তায় কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি। আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬ হাজারের অধিক শরণার্থী তালিকাভূক্ত করা সম্ভব হয়েছে। কুতুপালংয়ে একটি কেন্দ্রে ৬টি ও টেকনাফের নয়াপাড়ায় একটি কেন্দ্রে ৪টি বুথ খোলা হয়েছে। এছাড়াও বালুখালী সক অন্যান্য স্থানে আরও ১৫ থেকে ২০টি কেন্দ্র খুলে নিবন্ধন কার্যক্রম চালানোর কথা থাকলেও এখনো সেই কেন্দ্র গুলো চালু করা হয়নি। এখন শুধুমাত্র কুতুপালং এই নিবন্ধন কেন্দ্রে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩৫০ জন রোহিঙ্গার নিবন্ধনের মধ্য সীমাবন্ধ।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং ‘ইউএনএইচসিআর’সহ বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, ১৯৭৮ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রথম রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ শুরু হয়। এরপর ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। ওই সময়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় পক্ষের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যবাসন চুক্তিতে কিছু রোহিঙ্গা ফেরত নেয়া হলে রোহিঙ্গাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চলে যায়। কিন্তু, হঠাৎ করে রোহিঙ্গা প্রত্যবাসন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যে সব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে থেকে যায় তাদের জন্য উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়ায় দুটি আশ্রয় শিবির খোলা হয়। সেখানে ৩২ হাজারের বেশি নিবন্ধিত রোহিঙ্গা আছে। এসব নিবন্ধিত রোহিঙ্গার পাশাপাশি অনিবন্ধিত আরো তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নিয়োছিল। এরপর গত বছরের ৯ অক্টোবরে রাখাইনে পুনরায় নিরাপত্তা বাহিনীর নিপীড়ন শুরু হয়। ওই দফায় ৯২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৪ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত ৪লাখের বেশী রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ক্যাম্প সহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
‘আইওএম’র হিসেবে এই পযর্ন্ত প্রায় চার লাখ দশ হাজার নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এদের প্রত্যেকেরই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে তালিকাভুক্তির কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। তবে যে গতিতে কাজ চলছে তাতে এই কাজ আগামী এক বছরেও সম্পন্ন না হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।