বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ান, ব্রিটেন ও কানাডার রাষ্ট্রদূতগণ উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করছেন। ৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে পৌঁছান তারা। শরণার্থী শিবির পরিদর্শন যাওয়ার পথে উখিয়া সদর হাসপাতালে আন্তর্জাতিক অবিবাসন সংস্থা আইওএম পরিচালিত হাসপাতালের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন কালে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ও কার্যক্রমের উপর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিন দেশের হাই কমিশনারগণ। এর পর কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে এমএসএফ হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। সেখানে অবস্থানরত মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চিকিৎসার খুঁজখবর নেয়।
অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত এইচ ই মিস জুলিয়া নিবেট, ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত এইচ ই মিস অ্যালিসন ব্লেক ও কানাডার রাষ্ট্রদূত বিনো পিয়েরে লারামি ও আন্তর্জাতিক অবিবাসন সংস্থা আইওএম, ইউএনএইচসিআর, ইউনিসেফ সহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শন শেষে তারা কুতুপালং রেজিঃ ক্যাম্পের ক্যাম্প ইনচার্জএর কার্যালয়ে বৈঠক করেন। দুপুর ২টার দিকে তারা ক্যাম্প ত্যাগ করেন। হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে তিন দেশের রাষ্ট্রদূতগণ সাম্প্রতিক মিয়ানমার থেকে সে দেশের সেনা বাহিনী ও রাখাইন সম্প্রদায়ের নির্যাতনের শিকার হয়ে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের আনরেজিঃ ক্যাম্পে অবস্থানরত আহত ও নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেছেন। তারা নির্যাতনের শিকার ২০ জনের অধিক নারী পুরুষ ও শিশুদের বর্বরতার কাহিনী শুনেন। প্রায় ২ ঘন্টা ধরে আলাপ আলোচনার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিং করেন একে একে তিন দেশের রাষ্ট্রদূতগণ। ব্রিফিংকালে তিন দেশের রাষ্ট্রদূতগণ বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ রোহিঙ্গাদের সাথে সদাচরণের উপর সন্তোষ প্রকাশ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ হাই কমিশনার এইচ ই মিস অ্যালিসন ব্লেক বলেন, রোহিঙ্গা ও শরণার্থী সমস্যা একটি আর্ন্তজাতিক সমস্যা। এটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এটির আমরা সমাধান চাই। প্রয়োজনে মিয়ানমার সরকারকে সমস্যা সমাধানের জন্য চাপ দেওয়া হবে। বাংলাদেশকেও এব্যাপারে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে রোহিঙ্গাদেরকে উন্নত রাষ্ট্রে পূর্ণবাসন করার কথা ভাবছেন বলে তিনি ব্রিফিংএ জানান। একই কথা বলেছেন বাকী কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনারগণ।
তিন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সাথে কথা বলেছেন মিয়ানমারের মংডু রিয়াজ উদ্দিন পাড়া থেকে ১ মাস আগে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা নাগরিক নুর আহম্মদের পুত্র পায়ে গুলিবিদ্ধ নুরুল আলম (২৬), খিয়ারী প্রাং এলাকার আলী আহম্মদের পুত্র সিরাজুল ইসলাম (৪৫), মৃত আব্দুর রশিদের পুত্র গুলিবিদ্ধ বশির আহম্মদ (৫৫), ওয়াপ্রাং এলাকার মৃত আব্দুল জব্বারের পুত্র হাতে গুলিবিদ্ধ মোঃ আয়াজ (৩২), খিয়ারী প্রাং এলাকার মৃত আব্দুল মালেকের পুত্র আহত আমিন উল্লাহ (৫৬), ৭ সন্তানের জননী জাহেদা আক্তার (৩০) তার জমজ ৫ বছরের ২ শিশুর মধ্যে ১জনকে সেদেশের সেনাবাহিনীরা আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। এখন তার ছোট ৬ মাস বয়সী ও ৩ বছর বয়সী ২ শিশুকে বুকে নিয়ে ১ মাস পূর্বে বাংলাদেশে আসে। তার সাথেও তারা কথা বলেন। এছাড়া রাষ্ট্রদূতগণ কথা বলেছেন মিয়ানমারের সাতগইজ্জা পাড়া এলাকার গণধর্ষনের স্বীকার জামালিদা (২৫) এর সাথে। জামালিদাকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি প্রতিবেদককে বলেন আমার স্বামীকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীরা গলা কেটে হত্যা করেছে। আর আমার ২ ও ৪ বছরের ২ শিশুকে গুলি করে হত্যার পর আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছে। এরপর তারা আমাকে সেনা ক্যাম্পে নিয়ে একের পর এক গণধর্ষন করে। অসুস্থ অবস্থায় আমি প্রায় ১ মাস পূর্বে বাংলাদেশে চলে আসি। দেশে চলে যাবে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি এইদেশে থাকতে চাই। তবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সহ সকল অধিকার ফিরিয়ে দিলে স্বদেশে চলে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি। সিকদার পাড়া এলাকার আব্দুল মোনাফের পুত্র পেঠান আলীও অধিকার ফিরিয়ে পেলে দেশে ফিরে যাবে বলে জানান। নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার ঠেঙ্গার চরে পূর্ণবাসন করা হলে সেইখানে যাবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে একাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেন, ঠেঙ্গার চর একটি ঝুঁকি পূর্ণ ও উপকূলীয় এলাকা তাই তারা সেখানে যেতে রাজী নয়। প্রয়োজনে তারা মিয়ানমারের একটি রাজ্যে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার ও জাতি সংঘের সহযোগীতায় থাকতে চান।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।