২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি   ●  মেরিন ড্রাইভে ইয়াবাসহ নারী আটক   ●  সড়ক দখল করে নৈরাজ্য সৃষ্টি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে কক্সবাজারে আ.লীগের ৯১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা!

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের শরণার্থী শিবির (ক্যাম্প) থেকে পালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। আশ্রয় নিচ্ছে শহরের বিভিন্ন স্থানে। ক্যাম্পে থাকা-খাওয়ার অভাবসহ নানা কারণে রাতের অন্ধকারে তারা পালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কাজের সন্ধানে তারা কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলাশহরে ছড়িয়ে পড়ছে। এদের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, মিয়ানমারে সহিংস ঘটনার পর থেকে দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর চোখ ফাঁকি দিয়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং, টেকনাফের লেদা ও নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পে। এসব ক্যাম্পে আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছে কোনও মতে আশ্রয় মিললেও মিলছে না এক মুঠো খাবার। অভাব অনটনে দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে তাদের জীবন। সহায়সম্বল হারানো এই রোহিঙ্গারা অসহায় হয়ে পড়েছে শীতের কাছেও।

এমনই একটি রোহিঙ্গা পরিবার ক্যাম্প থেকে কক্সবাজার শহরে পালিয়ে এসেছে। ওই পরিবারের বড় কর্তা নূর আহমদের সঙ্গে রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে কক্সবাজার শহরের বিমান বন্দর সড়কে দেখা হয় বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদকের। নূর আহমদের সঙ্গে রয়েছেন আরও দুই নারী ও তিন শিশু।

কথা প্রসঙ্গে নূর আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, প্রায় এক সপ্তাহ আগে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে। ক্যাম্পে পরিচিত একটি পরিবারের কাছে আশ্রয় নিলেও সংকটে পড়েন খাবার ও শীতের কাপড় নিয়ে। অনাহারে-অর্ধাহারে কোনও মতে টিকে আছে তার পরিবার। ক্যাম্পের বাইরে কোনও কাজ না পাওয়ায় কক্সবাজার শহরে আসতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

নূর আহমদের স্ত্রী আয়েশা খাতুন বলেন, ‘দু’দিন আগেও আমাদের পরিচিত তিনটি পরিবার চট্টগ্রাম শহরের দিকে চলে গেছে। তবে তারা কোথায় গেছে জানি না। যদি সম্ভব হয় আমার স্বামীকে একটা কাজের সুযোগ দিয়েন।’ আয়েশা আরও জানান, ‘কাজের সন্ধানে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম শহরে আশ্রয় নিয়েছে অনেক রোহিঙ্গা পরিবার।’

নূর আহমদের সঙ্গে থাকা তার বোন রহিমা খাতুন জানান, তার দুই ভাই শাহাব মিয়া ও আমির হোসেন এখনও মিয়ানমারে অবস্থান করছেন। তাদের পরিবার সুযোগ বুঝে চলে আসার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। কারণ ওখানে কাজের ক্ষেত্র কম, মানুষ বেশি। সেই হিসেবে বাংলাদেশে কাজের অবারিত সুযোগ রয়েছে। সহজেই সমাজের সঙ্গে মিশে যাওয়া যায়।’

কক্সবাজার শহরের কলাতলী আদর্শ গ্রামের পাহাড়ের চূড়ায় একটি ছোট বাড়িতে অবস্থান নিয়েছে ১১জন নারী, পুরুষ ও শিশু। সবাই অবৈধভাবে আসা মিয়ানমারের নাগরিক। বাড়ির মালিক আবুল হোসেন বাংলাদেশে আসেন ৮ বছর আগে। কাজ করেন দিন মজুর হিসেবে। তার দু’টো বাড়ি। একটি বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের মংডুর ঝিমংখালী গ্রামে। অন্যটি কক্সবাজার শহরের কলাতলীর ঘনবসতিপূর্ণ পাহাড়ে। দুই দেশেই তার অবাধ যাতায়াত। সম্প্রতি মিয়ানমারের মংডুতে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হলে তিনি পরিবারের সদস্যদের প্রথমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ও পরে নিয়ে আসেন কক্সবাজার শহরে। বতর্মানে তিনি ও তার ভগ্নিপতি দিন মজুর হিসেবে খেটে এবং আগের জমা থাকা টাকা দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।

সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকালে সরেজমিনে গেলে কথা হয় আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘আমার বাবা ছফর আহমদ এখনও মিয়ানমারে অবস্থান করছেন। তিনিও সুযোগ বুঝে চলে আসার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। আর যারা টেকনাফ ও উখিয়ার ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন তাদের দুইদিন আগে রাতে নিয়ে আসা হয়েছে কক্সবাজার শহরে। কারণ ক্যাম্পে কিছু পাওয়ার আশায় বসে থাকার চেয়ে শহরে থাকলেই কোনও না কোনও কাজ মিলে যাবে।’ তিনি জানান, তার বাড়ির আশেপাশের বাড়িগুলো বাংলাদেশিদের। সবার সঙ্গে মিলে মিশেই থাকেন আবুল হোসেন।

কথা প্রসঙ্গে আবুল হোসেন আরও জানান, বর্তমানে বাড়ির ছোট একটি কক্ষে তিনি স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে থাকেন। অন্য কক্ষে থাকেন মিয়ানমার থেকে আসা তার ভাই-বোনসহ ৯ জন। ভোর হলে তিনি কাজের সন্ধানে বেরিয়ে যান। ধরা পড়ার ভয়ে দিনের আলোয় ঘর থেকে বেশি বের হয় না মেয়েরা। পাহাড়ে পানির কোনও উৎস নেই। তাই গৃহস্থালি কাজ-কর্মের জন্য পানি আনতে হয় নিচের সমতলে বসবাসকারী এক বাংলাদেশির কাছ থেকে। মাসে ১০০ টাকা চুক্তিতে তাদের পানি দেওয়া হয়।

এরইমধ্যে আবুল হোসেনের কাছে আছেন তার ভাই হামিদ হোসেন, ইমাম হোসেন ও তার সাত সন্তান। তারা বর্তমানে কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলীতে আশ্রয় নিয়েছেন। দিন মজুর হিসেবে খেটে মোটামুটি ভালোই চলছে তাদের সংসার। এছাড়াও আমির হোসেন নামে তার আরেক ভাই ও সন্তানরা উখিয়ার কুতুপালংয়ের অনিবন্ধিত শরণার্থী শিবিরেই রয়েছে। সুযোগ বুঝে তাকেও নিয়ে আসা হবে বলে জানান তার বোন জুলেখা বেগম।

কক্সবাজার শহরের লাইট হাউজ এলাকায় পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত মিয়ানমারের নাগরিক আব্দুল মোনাফও জানালেন একইকথা। তিনিও দিন মজুর। তার বাড়িতে গত শুক্রবার রাতে উখিয়া ক্যাম্প থেকে এসে আশ্রয় নিয়েছেন বোন রূপবানসহ চার জন। রূপবান ছাড়া অন্যরা হলেন এক চাচাত বোন, এক খালাত বোন ও এক ফুপাত বোন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের সমাজে মিশে যেতে দেওয়া যাবে না। সরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের কোনও নির্দিষ্ট স্থানে রাখার ব্যবস্থা করা দরকার। তাদের একটি তালিকা তৈরি করে রাখা উচিত, যাতে পরবর্তীতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সহজ হয়। রোহিঙ্গারা সমাজে মিশে গেলে নানা অপকওইর্মে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই বলেছেন, মিয়ানমারে শুধু ধান কাটা, নদীতে জাল পাতার কাজ পাওয়া যায়। এছাড়াও সারা বছর ওই কাজ থাকে না। কিন্তু বাংলাদেশে মাটি কাটা, গাছ কাটা, রিকশা ও ঠেলাগাড়ি চালানো, ইট ও বালি বহন করা থেকে শুরু করে অনেক ধরনের কাজ পাওয়া যায়। মিয়ানমারের নাগরিক হলেও চেহেরা ও পোশাকে বাংলাদেশিদের সঙ্গে মিল থাকায় বসবাস করতে সমস্যা হয় না।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।