.সকল সম্প্রদায়ের সম্পদ, মানইজ্জত রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব
. জামায়াতে ইসলামীর কাছে সবাই নিরাপদ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, আওয়ামী লীগের লুটেরা নেতা, পুকুর চোর, সাগর চোরেরা কোথায় এখন? মাঝেমধ্যে দুই একটা পাওয়া যায়। ধরা পড়ে। আপনারা অভিযানে নামেন। খুঁজে বের করেন। তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যাদের নির্দেশ ও প্ররোচনায় মায়ের বুক খালি হয়েছে, সবার বিচার হবে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগষ্ট) বিকেলে হোটেল শৈবালের জারা কনভেনশন হলে শহর জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হামিদুর রহমান আযাদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পালানোর পর ভারতের বিভিন্ন হলুদ মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এখানে মৌলবাদের উত্থান হয়েছে বলে সংবাদ করছে। এসব অপপ্রচারে আওয়ামী লীগের হাত রয়েছে। আমরা কি করেছি, ছাত্রজনতা কি করেছে দেশবাসী সাক্ষী। সকল সম্প্রদায়ের সম্পদ, মানইজ্জত রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। জামায়াতে ইসলামীর কাছে সবাই নিরাপদ।
হামিদুর রহমান আযাদ আরো বলেন, আগামীতে ভূ-রাজনীতি নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হতে যাচ্ছে, তার মোকাবেলায় জামায়াতের প্রতিটি কর্মীকে পাহারাদের ভূমিকা পালন করতে হবে। এক ইঞ্চি মাটিও কারো হাতে তুলে দিতে দিব না। দেশের পুনর্গঠন; স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
তিনি বলেন, গেল ৫ আগষ্ট পুলিশ, প্রশাসন দলীয় কর্মীর মতো ভূমিকা রাখলেও সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে পালিয়ে গিয়েছেন শেখ হাসিনা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশে সুন্দর একটি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে, সেটি সবার প্রত্যাশা। তবে আমরা তাদের সময়সীমা বেঁধে দেইনি। তবে সুন্দর পরিবেশে একটি নির্বাচন উপহারের মাধ্যমে নতুন সরকারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
আওয়ামী লীগের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে হামিদ আযাদ বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের সময় দুর্নীতির মহোৎসব হয়েছে। ১৮ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে হাসিনা সরকার। মেগা প্রকল্পের নামে জনগণের মাথার উপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে।
প্রতিবেশী দেশের উদ্দেশ্যে হামিদ আযাদ বলেন, প্রতিবেশীকে প্রতিবেশীর মতো আচরণ করতে হবে। বাংলাদেশ এখন পানিতে ভাসছে। বর্ষাকালে পানি, গ্রীষ্মকালে খরা। এটি কি বন্ধুর পরিচয়?
দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর সবচেয়ে নির্যাতিত দল জামায়াতে ইসলামী। যে দলকে ৫ দিন আগে নিষিদ্ধ করেছিল আওয়ামী লীগ সে দলই রাষ্ট্র প্রধানের আমন্ত্রণে বঙ্গভবনে স্থান পেয়েছে।
বীর জনতা ও ছাত্রসমাজ এক কাতারে এসে দীর্ঘ অপশাসন থেকে দেশকে মুক্ত করেছে।
আমাদের আল্লামা সাঈদী বলেছিলেন, পালানোর জন্য ইন্দুরের গর্ত খুঁজে পাবে না। সেই অমীয় বাণী সত্যি প্রমাণ হলো। শেখ হাসিনা ও তার নেতাদের পরিণতি দেশের মানুষ দেখেছে।
আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কারণে পুরো দেশ অস্থিতিশীল ছিল। আমরা অতীতে অনেক আন্দোলন করেছি। তবে সফল হতে পারিনি। ছাত্রজনতার আন্দোলনই সফল হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আমরা সাধুবাদ জানাই।
শহর জামায়াতের আমীর আব্দুল্লাহ আল ফারুখের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে ৫৭ জন মেধাবী ও চৌকস সেনা অফিসার হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছিল। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী বেঁচে থাকলে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধার সম্মুখীন হবে। তাই জঘন্য এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতাদের ফাঁসি দিয়ে আমাদেরকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল শেখ হাসিনা। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এখন আওয়ামী লীগই নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।
শাহজাহান বলেন, আমরা অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে পারিনি। শেষ পর্যায়ে কোটা আন্দোলন ইস্যুতে মেধাবী শিক্ষার্থীরাই বাঘের মত গর্জে উঠে। যে আন্দোলন ১ দফা দাবিতে গণআন্দোলনে রূপ ধারণ করে। শেষ পর্যন্ত কঁচিকাঁচা মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতেই শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে। এসব শিক্ষার্থীরাই আগামীতে আশা আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা পালন করে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন সকলকে ধন্যবাদ জানান জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মুহাম্মদ শাহজাহান। সেই সঙ্গে মুক্তির সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করেন।
তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা ইতিহাসে ঘৃণিত, নিন্দিত একটি নাম। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল।
দু’দিন আগেও যে আইনমন্ত্রী গর্বভরে কথা বলেছিলেন সেই আইনমন্ত্রী গ্রেফতারের পর তার পক্ষে একজন আইনজীবীও দাঁড়ালো না। এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাদের অপকর্মের একটি নমুনামাত্র।
মুহাম্মদ শাহজাহান মনে করেন, শেখ মুজিবের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে যারা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল তারাই আওয়ামী লীগকে ডুবিয়েছে। রাম-বামপন্থীদের খপ্পর থেকে হাসিনাও বের হতে পারেনি। যে কারণে সারা দুনিয়ার ইতিহাসে একজন নিকৃষ্ট স্বৈরশাসক হিসেবে শেখ হাসিনার নাম লেখা হয়ে গেল।
ভারতে পালিয়ে শেখ হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। আগামী ২০ বছরেও যাতে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে না পারে সেই লক্ষ্যে ভারতের মাধ্যমে চক্রান্তে মেতেছে।
এর পরিণতি ভালো হবে না। সেখানেও তার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন শুরু হবে বলে জানান শাহজাহান।
কর্মী সম্মেলনে শেখ হাসিনা সরকারের জুলুম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় নেতা মুহাম্মদ শাহজাহান। তিনি বলেন, গেল ১৭ বছরে আওয়ামী লীগ এই দেশের বড় বড় আলেম-আউলিয়াদের বিদায় করে দিয়েছে। নিরীহ মানুষকে শহীদ করেছে। পঙ্গু বানিয়েছে অনেককে। আল্লাহর পক্ষ থেকে এসবের বিচার ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। শেখ হাসিনার চূড়ান্ত পরিণতি দেখার অপেক্ষায় জাতি।
দলীয় নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এই বিজয় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ নেয়ামত। এই নেয়ামত ভুলে গেলে চলবে না। সময়কে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
এ বিজয়ের জন্য মহান আল্লাহর কাছে সবসময় মাথানত করতে হবে। সব ধরণের বাড়াবাড়ি বন্ধ করে, অহংকারকে কবর দিয়ে বিনয়ী হতে হবে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া আহ্বান জানান জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান।
তিনি বলেন, একটি মাত্র প্রজ্ঞাপনে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছিল আওয়ামী লীগ। তার পাঁচ দিনের মাথায়
বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের গণআন্দোলনের প্রজ্ঞাপনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।
কঠিন মুহূর্তে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সেনাপ্রধান ওয়াকারুজ্জামান শেখ হাসিনার আত্মীয় হলেও দেশ রক্ষার পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। তার মাঝে প্রচুর দেশপ্রেম আমরা লক্ষ্য করছি। অন্তর্বর্তীকালের সরকার প্রধানের মাঝেও দেশকে এগিয়ে নেওয়ার আন্তরিকতা দেখা যাচ্ছে। তারা সাধ্যমত কাজ করছেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে শাহজাহান বলেন, দেশ পুনর্গঠন না করা পর্যন্ত আমরা কোন নির্বাচন চাই না। আগে নির্বাচন কমিশন সংস্কার দরকার। বিচারাঙ্গণকে আওয়ামী মুক্ত করতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রী নওফেল ইন্ডিয়ায় পড়ালেখা করে ইন্ডিয়ামুখী যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছিল তা সম্পূর্ণ বাতিল করার দাবি দেন মুহাম্মদ শাহজাহান।
এই প্রেক্ষাপটে নতুন কোন ষড়যন্ত্র দেখলে দেশের জনগণ ছাড় দেবে না বলেও হুঁশিয়ারী দেন তিনি।
শহর জামায়াতের সেক্রেটারি রিয়াজ মোহাম্মদ শাকিলের সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি বক্তব্যে জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, এই বিজয় চূড়ান্ত নয়। আমাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যমাত্রা আছে। বাংলাদেশে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র না করা পর্যন্ত আমাদের চূড়ান্ত বিজয় আসবে না। ছাত্রজনতাই আমাদের চূড়ান্ত বিজয়ের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে। রক্ত গরম, মাথা ঠান্ডা রেখেই কাজ করে যেতে হবে।
তিনি বলেন, যে দেশের মোড়ে মোড়ে শেখ মুজিবের মূর্তি তৈরি করা হয়েছিল সেই দেশেই ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবের মাজারে ফুল দেওয়ার লোক পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির শাসন দেখে ফেলেছে দেশের জনগণ। তাদের প্রতি মানুষের ভরসা নেই আর। আগামীর দেশ জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশ।
ঘরে ঘরে জামায়াতের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান জেলা জামায়াতের আমীর।
কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য দেন, জেলা জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, জাহেদুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি ও উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আবুল কালাম সিদ্দিকী, জেলা জামায়াতের আইন বিষয়ক সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জাফরউল্লাহ ইসলামাবাদী, প্রচার সেক্রেটারি আল আমিন মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, কক্সবাজার সদর উপজেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক খোরশেদ আলম আনচারী, শহর জামায়াতের নায়েবে আমীর কফিল উদ্দিন চৌধুরী, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক ককসু ভিপি শহীদুল আলম বাহাদুর, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সেক্রেটারি মোঃ মহসিন, সদর জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মোস্তাক আহমদ, শহর সাংগঠনিক সেক্রেটারি দরবেশ আলী মোঃ আরমান, শহর কর্মপরিষদ সদস্য জাহেদুল ইসলাম নোমান, জেলা শিবিরের সভাপতি মুসা বিপ্লব, শহর শিবিরের সাধারণ সম্পাদক সালমান নূরী। কর্মী সম্মেলনের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করেন মাওলানা আব্দুর রশিদ।
স্বাগত বক্তব্যে শহর আমীর আব্দুল্লাহ আল ফারুখ বলেন, দেশে যত গণহত্যা হয়েছে সব কিছুর দায়ভার শেখ হাসিনাকে বহন করতে হবে। কারণ তার নির্দেশেই আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর বেপরোয়া গুলি বর্ষণ, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবু পিছু হটেনি আন্দোলনকারীরা। বহু রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা বুক ফুলিয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। মুক্তিকামী ছাত্রজনতার প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ। গণঅভ্যুত্থানে পালালেও শেখ হাসিনার শেষ রক্ষা হবে না বলেও জানান শহর আমীর।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।