১৯ এপ্রিল, ২০২৫ | ৬ বৈশাখ, ১৪৩২ | ২০ শাওয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  সিবিআইইউ’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়েছে।   ●  গভীর রাতে পাহাড়ের মাটিভর্তি একটি ড্রাম ট্রাক( ডাম্পার) জব্দ করেছে কক্সবাজার বনবিভাগ   ●  অস্ত্র উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিলে জেলার শ্রেষ্ঠ হলেন এসআই খোকন কান্তি রুদ্র   ●  উখিয়ায় সাংবাদিক জসিম আজাদের জমি ও বসতবাড়ি দখলের চেষ্টায় হামলা   ●  কৃষকদল নেতা পরিচয়ে জমি দখল গুলি বর্ষণ আটক ১   ●  উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন   ●  প্রথম ধাপে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার   ●  পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি’১৮ ব্যাচের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন   ●  উখিয়া সমাজসেবা কর্মচারীর নামে বিধবা ভাতা’র টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ   ●  ‘পটভূমি পরিবর্তনের জন্য সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য’ – সরওয়ার জাহান চৌধুরী

গুলশান কার্যালয়ে খালেদার ৯১ দিন

গুলশান কার্যালয়ে খালেদার ৯১ দিন

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ৯১ দিন যাবত অবস্থান করছেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় গ্রেফতার হওয়া ছাড়া খালেদা জিয়া টানা এতদিন কোথাও অবস্থান করেননি। বিএনপি বলছে, কার্যালয়ে খালেদার অবস্থান সরকারবিরোধী আন্দোলনেরই অংশ।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তিন মাস পার হলেও কয়েকশ’ মিটারের মধ্যে থাকা তার বাসভবনে যাননি। কার্যালয়বাসী খালেদা জিয়ার বাসায় ফেরার বিষয়ে অন্ধকারে রয়েছেন দলের সিনিয়র নেতারাও।

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার অবস্থান প্রথমদিকে আন্দোলনে গতি আনার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে টানা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতে ছেদ পড়ার পর খালেদা জিয়ার কার্যালয়বাসী হয়ে থাকা আন্দোলনের জন্য কতটা ফল দিচ্ছে, তা নিয়ে সন্দিহান শীর্ষস্থানীয় নেতারাও।

স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে না দেওয়ার অভিযোগে গত জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে নিজের কার্যালয় থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে দুইবার (৩ ও ৫ জানুয়ারি) বের হওয়ার চেষ্টা করলেও তাকে বের হতে দেয়নি সরকারের পুলিশবাহিনী। এরপর দৃশ্যত কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টাও করেননি বেগম জিয়া। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দলের প্রধানের কার্যালয়ে অবস্থানও একটি রাজনৈতিক প্রতিবাদ।

তবে খালেদা জিয়ার কার্যালয়বাস নিয়ে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য পাওয়া গেছে সরকার ও বিএনপির পক্ষ থেকে। সরকার কিংবা আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে খালেদাকে আটকে রাখার বিষয়টি স্বীকার করেনি। বিপরীতে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিনিধি দল ও ব্যক্তি সাক্ষাৎ করলেও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তিনি অবরুদ্ধ।

খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত বিএনপিপন্থী পেশাজীবী এমাজউদ্দিন আহমদ শুক্রবারও দাবি করেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে।’

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গুলশান কার্যালয়ে রয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য নজরুল ইসলাম খান। বৃহস্পতিবার মোবাইল ফোনে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বেগম জিয়া কবে কার্যালয় ছেড়ে বাসায় যাবেন সে সম্পর্কে আমি কিছু শুনিনি। তিনি কার্যালয়ে থেকেই আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আন্দোলনের অনেক পর্যায় থাকে। আমরা নতুন একটি পর্যায়ে আছি। ম্যাডাম কার্যালয়ে থেকে কষ্ট করে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর একটি তাৎপর্য আছে।’

বিএনপি ও এর কয়েকটি অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের কাছে জানতে চাইলে বিভিন্ন যুক্তি দেখালেও একটি বিষয়ে প্রায় একই মতপোষণ করেন তারা। এদের কেউ নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে চাননি। তাদের অভিমত, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারির পর আন্দোলন যখন তুঙ্গে ছিল তখন যদি কোনো একটি বিষয়েও সরকারের কাছ থেকে ছাড় পাওয়া যেত সেটা একটা অর্জন হতে পারত। কিন্তু আন্দোলন ধরে রাখতে না পেরে যখন ছেদ দিতে হলো তখন বেগম জিয়ার কার্যালয়ে অবস্থান নেতাকর্মীদের মধ্যে আগের মতো বিশেষ কোনো উদ্দীপক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন না তারা।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল(অব.) মাহবুবুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘উনার কার্যালয়ে অবস্থানের কারণে আন্দোলনে কতটুকু কী হচ্ছে না হচ্ছে, তা আলাদা বিবেচ্য বিষয়। সরকার তো আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টিই বন্ধ করে রেখেছে। কাজ করার জন্য একটি জায়গা তো লাগবে। ম্যাডাম তার কার্যালয় থেকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি কবে কার্যালয় ত্যাগ করবেন- এমন কোনো সিদ্ধান্তের কথা আমার জানা নেই।’

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলটির টানা আন্দোলন ঘোষণার কারণে দেশব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী পর্যন্ত নিজেদের বাড়িতে থাকতে পারছেন না। ব্যাহত হচ্ছে তাদের স্বাভাবিক জীবন। তাদের অভিমত, বেগম জিয়া যেখানেই থাকুন নেতাকর্মীরা উনার সঙ্গেই থাকবেন। তারা যাতে স্বাভাবিক সামাজিক জীবনে ফিরতে পারেন তেমন কৌশল নেওয়ার দাবি কেন্দ্রের প্রতি।

মন্তব্য জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সবস্তরের নেতাকর্মীরাই সরকারের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তারপরও আমাদের পরিকল্পনা মোতাবেক বেগম জিয়াকে উনার অফিসে রেখেছি। তার (খালেদা জিয়া) কার্যালয়ে অবস্থান নিজের ইচ্ছেয় নয়। নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি বন্ধ করে রেখেছে সরকার। সরকারের অনেক দূরভিসন্ধি আছে। গুলশান কার্যালয়ে বিদ্যুতের লাইন কাটা, ইন্টারনেট বন্ধ, খাবার সরবরাহে বাধা, মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা তৈরি করা দূরভিসন্ধিরই অংশ।’

বিএনপির এই শীর্ষস্থানীয় নেতার অভিমত, ‘সরকার নয়া পল্টনের মতো গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয়কে তালা মারতে চায়। আমরা তাদের সে সুযোগ দেব না।’

গুলশান কার্যালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি, আগামী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে খালেদা জিয়ার বাসায় ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। কোন প্রেক্ষাপটে তিনি বাসায় যাবেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই বলে দাবি সূত্রটির। টানা হরতালে যেমন হঠাৎ করেই ছেদ দিয়েছে দলটি, তেমনি যে কোনো সময় কার্যালয় ছেড়ে অদূরের বাসাতে উঠতে পারেন খালেদা জিয়া।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকার যদি বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলে দেয় তবেই নিজের বাসায় যাওয়ার কথা ভাববেন বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, সরকার নয়াপল্টন কার্যালয় খুলে দিলে স্বাভাবিক রাজনীতি শুরু করা সম্ভব হবে। চলতি মাসের শেষের দিকে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলে দেবে বলে আশা বিএনপির।

প্রসঙ্গত, এর মধ্যে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদা জিয়া একাধিকবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। দেখা-সাক্ষাৎ করছেন দেশী-বিদেশী অতিথি এবং দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে। সম্প্রতি বিএনপি টানা হরতালের কর্মসূচি থেকে বের হয়ে এসেছে। তবে ছেলের মৃত্যু, আদালতের সমন, গ্রেফতারি পরোয়ানা, যোগাযোগ অচল, বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়াসহ সরকারের নানা কৌশলের মধ্যেও কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসেননি খালেদা জিয়া।

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয় থেকে বের করতে সরকারের অনেক চেষ্টা-কৌশল থাকলেও এখন সেই চেষ্টায় ভাটা পড়েছে। নতুন ইস্যু এসেছে সিটি নির্বাচন। নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া দলটি নিজেদের অর্জনের দিকে তাকিয়ে আছে। এ নির্বাচনের সামান্য অর্জনও খালেদা জিয়ার কার্যালয়বাসের ইতি টানতে পারে।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে আগামী ৫ এপ্রিল মামলার তারিখ অনুযায়ী আদালতে যাবেন বেগম জিয়া। এ বিষয়ে দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেগম জিয়া আদালতে গেলে বুঝা যাবে সরকার স্বাভাবিক রাজনীতির জন্য সুযোগ দেবে বিএনপিকে। সহজেই জামিন পাবেন খালেদা। এ ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া সেদিনই আদালত থেকে তার বাসভবনে উঠতে পারেন। আর সেরকম কোনো নিশ্চয়তা যদি বিএনপি না পায় তাহলে খালেদা জিয়া আদালতে যাবেন না, খুব তাড়াতাড়ি ত্যাগ করবেন না তার কার্যালয়ও।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।