চকরিয়ায় খাদ্য সামগ্রী দেয়ার প্রলোভনে স্কাস এনজিও’র নাম ভাঙ্গিয়ে একটি প্রতারক চক্র বিপুল নারী-পুরুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতারিতা উপকারভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানার এএসআই শিমুল চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার সকালে টাকা জামানত নেয়া শাহিনা আকতার (৩৯) নামে এক নারীকে আটক করেছে। আটক ওই নারী উপজেলার মগবাজার এলাকার মুছা আকবরের স্ত্রী। এদিকে তাকে আটকের খবর পেয়ে বিক্ষুদ্ধ শতশত নারী-পুরুষ উপকারভোগী থানার সামনে জড়ো হয়ে অভিযুক্ত শাহিনা আকতারের শাস্তি ও তার অন্যতম সহযোগি প্রতারক চক্রের মুলহোতা নারায়নগঞ্জের মুজিবুর রহমানের গ্রেফতার দাবিতে বিক্ষোভ করেন। ঘটনার পর পুলিশ ওই নারীকে ৫৪ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে উপজেলা আদালতে প্রেরন করলে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
উপকারভোগী নারী-পুরুষরা জানান, প্রতিজন উপকারভোগীর কাছ থেকে ৫৭০ টাকা করে জামানত নিয়ে আটক হওয়া ওই নারী প্রত্যেককে মাসে মাসে বিপুল টাকার খাদ্য সামগ্রী (চাল, ডাল, চিনি ও তেল) দিয়ে আসছিলেন গত দ্ইুবছর ধরে। প্রথমদিকে বিষয়টি এলাকার অনেকের অজানা থাকলেও পরে আটক নারী শাহিনা আকতারের নিয়োজিত প্রত্যেক গ্রামে দলপতি নারী কর্মীদের বদৌলতে তা ছড়িয়ে পড়ে উপজেলার আনাচে-কানাছে। এভাবে দিনদিন বাড়তে থাকে উপকারভোগীর সংখ্যা। টাকা গ্রহনের সময় শাহিনা আকতার নিজেকে চকরিয়া উপজেলার ফিল্ড অফিসার ও প্রকল্পটি স্কাস এনজিও বলে উপকারভোগীদের জানায়। এভাবে উপজেলার একাধিক ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় ১০ থেকে ১২হাজার উপকারভোগীর কাছ থেকে ৫৭০ টাকা করে দলপতিদের মাধ্যমে উত্তোলন করে আটক নারী শাহিনা আকতার ইতোমধ্যে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব টাকা হাতবদল হয়ে শাহিনার কাছ থেকে ফের লুটে নিয়েছেন তাকে নিয়োগ দেয়া অপর একটি প্রতারক চক্র।
থানার ভেতর আটক শাহিনা আকতার সাংবাদিকদের জানান, তিনি স্কাস নামের একটি এনজিও’র স্থানীয় ফিল্ড অফিসার। নারায়নগঞ্জের মুজিবুর রহমান নামের একব্যক্তি হচ্ছেন তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। গত দুইবছর ধরে তিনি মুজিবুর রহমানের মাধ্যমে খাদ্য সামগ্রী এনে চকরিয়া উপজেলার উপকারভোগী নারী-পুরুষের মাঝে বিতরণ করেন। তিনি বলেন, খাদ্য সামগ্রী দেয়ার জন্য প্রতিজনের কাছ থেকে দলপতি নারীরা ৫৭০টাকা করে উত্তোলন করলেও তাকে দেওয়া হতো ৫৫০টাকা। পরে ৫০টাকা করে কেটে রেখে তিনি ওই মুজিবুর রহমানকে প্রতিজন উপকারভোগীর বিপরীতে ৫শত টাকা করে পাঠিয়ে দেন। শাহিনা আকতার বলেন, ৫লাখ টাকা মুজিবুর রহমানকে দিতে পারলে তিনি তাকে ১২লাখ টাকার খাদ্য সামগ্রী দেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের কার্যক্রম অজ্ঞাত কারনে বন্ধ করে দেন মুজিবুর রহমান। এরপর যোগাযোগ করলে মুজিবুর রহমানের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ অবস্থার পর ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে উপকারভোগী লোকজন খাদ্য সামগ্রী ও দেয়া টাকার জন্য চাপাচাপি শুরু করে। তাদের ঝামেলা ও আক্রমন থেকে বাঁচতে আমি গা ঢাকা দেয়ার চেষ্টা করি।
জানতে চাইলে স্কাস এনজিও চকরিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, স্কাস এনজিওতে খাদ্য সামগ্রী দেয়ার কোন প্রকল্প নেই। স্কাসে শাহিনা আকতার বা মুজিবুর রহমান নামে কোন কর্মকর্তাও নেই। মুলত ওই নারী কৌশল অবলম্বন করে প্রতারনার মাধ্যমে এ কাজটি করেছে। সুনাম বিনস্টের কারনে তার বিরুদ্ধে স্কাস আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তাভাবনা করছে।
চকরিয়া উপজেলা এনজিও সমন্বয়কারী মোহাম্মদ নোমান বলেন, আমার জানা মতে স্কাস এনজিওতে এ ধরণের কোন প্রকল্প নেই। মুলত এনজিওটি কাজ করেন বন্যা দুর্গত এলাকার রাস্তা-ঘাট মেরামত, স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ উন্নয়নমুলক কাজ করেন। তাঁরা অন্য কোন প্রোগ্রামে কাজ করেনা।
চকরিয়া থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর বলেন, খাদ্য সামগ্রী দেয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে এক নারীকে আটক করা হয়েছে। এব্যাপারে তদন্ত চলছে। আটক নারীকে ৫৪ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।