এম.জিয়াবুল হক,(চকরিয়া): চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালী পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা চিংড়িঘের কর্মচারী নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামিদের অবিলম্বে গ্রেফতারপুর্বক আইনের মাধ্যমে তাদের ফাঁসি দাবিতে সোচ্চার হচ্ছে এলাকাবাসি। ইতোমধ্যে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসি মামলার প্রধান আসামি আবদুস শুক্কুর প্রকাশ কানা শুক্কুর ও অপর আসামি আবদুল হামিদকে গ্রেফতার ও ফাঁিসর দাবি জানিয়ে এলাকায় পোস্টিং করেছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে হত্যাকান্ডের পর ইতোমধ্যে তিনমাস অতিবাহিত হয়েছে। পুলিশ মামলার এজাহারনামীয় আসামির মধ্যে রুহুল কাদের নামের একজনকে চট্রগ্রামের লোহাগাড়া থেকে গ্রেফতার করেছে। তবে মামলার অভিযুক্ত অন্য আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় মামলার বাদিপক্ষ ও রামপুর চিংড়িজোনের ঘের মালিক এবং চাষীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসি অভিযোগ করেছেন, মামলার এজাহারনামীয় আসামি আবদুস শুক্কুর প্রকাশ কানা শুক্কুর ও আবদুল হামিদ নানা কৌশলে মামলার অভিযোগপত্র (চার্জসিট) থেকে বাদ যেতে অপচেষ্ঠা চালিয়ে আসছে। এ ধরণের খবর এলাকায় লোকমুখে প্রকাশ হলে মামলার বাদি ও এলাকার লোকজনের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালী পশ্চিমপাড়া গ্রামের নুরুল আলমের ইজারা নেয়া রামপুর চিংড়িজোনের একটি চিংড়িঘেরে মাসিক বেতনে চাকুরী করতেন একই ইউনিয়নের দক্ষিন কোরালখালী গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম (৬০)। পুর্ব শুত্রুতার জের ধরে গত ২৩ জুলাই রাতে ওই চিংড়িঘেরে ১০-১৫জনের অস্ত্রধারী হানা দেয়। এসময় অস্ত্রধারীরা ঘেরটি ইজারাদার নুরুল আলম ও কর্মচারী নুরুল ইসলামকে মাছ ধরার সময় আটক করে বেদম প্রহার করে। এক পর্যায়ে অস্ত্রধারীরা এলোপাতাড়ি গুলি করলে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে কর্মচারী নুরুল ইসলাম নিহত হন।
হত্যাকান্ডের দুইদিন গত ২৫ জুলাই রাতে নিহত নুরুল ইসলামের স্ত্রী আছমা খাতুন (৫২) বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাহারবিল ইউনিয়নের রামপুর এলাকার মনজুর বলীর ছেলে সেকাব উদ্দিন, কোরালখালী পুর্বপাড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আবদুল হামিদ, আনোয়ার হোসেনের ছেলে রাজীব, জাগের আহমদের ছেলে কাইছার, কোরালখালীর দক্ষিনপাড়ার মৃত মোহাম্মদ ইছহাকের ছেলে নুরুল কাদের, কোরালখালী পশ্চিমপাড়ার মনছুর আলীর ছেলে তৌহিদুল ইসলাম, পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের ঈদমনি গ্রামের ছৈয়দ নুরের ছেলে বাবুল, সাহারবিল কোরালখালী পশ্চিমপাড়ার বশির আহমদের ছেলে আবদু শুক্কুর, একই এলাকার কাইছার ও নুরুল আলমের ছেলে জুনাইদ সহ ১০জনের নাম উল্লেখ্য করে আরো ৪-৫জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
এলাকাবাসি জানায়, ২০১০ সালের ৯জানুয়ারী রাতে চকরিয়া উপজেলার সাহারবিলের রামপুর চিংড়িজোনের কোরালখালীস্থ নয়াঘোনা নামক একটি চিংড়িঘেরে খুনের ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাতে ১৭-১৭জনের অস্ত্রধারী হানা দেন স্থানীয় রামপুর উমখালী গ্রামের মরহুম দুলা মিয়ার ছেলে আবদুল হামিদের ইজারা নেয়া ১৬একর আয়তনের চিংড়িঘেরে। ঘটনার সময় অস্ত্রধারীরা ঘেরের খামারঘর থেকে ইজারাদার আবদুল হামিদকে (৩০) ধরে নিয়ে গুলি করে। পরদিন ১০ জানুয়ারী বিকাল আড়াইটায় চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হামিদ।
এ ঘটনায় নিহত হামিদের বড়ভাই আবদুল করিম বাদি হয়ে ২০১০ সালের ১২জানুয়ারী চকরিয়া থানায় ১৩জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার এজাহার নামীয় আসামিদের মধ্যে অভিযুক্ত আবদু শুক্কুর, সেকাব উদ্দিন ও আবদুল হামিদ ৭বছর পর চলতিবছরের জুলাই মাসে খুন হওয়া ঘের কর্মচারী নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায়ও ফের আসামি হয়েছেন।
এলাকাবাসি জানিয়েছেন, চিংড়িঘের ইজারাদার আবদুল হামিদ ও ঘের কর্মচারী নুরুল ইসলাম হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার বেশিরভাগ আসামি পেশাদার অপরাধী। তাদের মধ্যে অনেকে টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে দখলবাজ হিসেবে কাজ করে। আবার অনেকে ঘের ডাকাতি ও লুটপাটের সাথে জড়িত।
এলাকাবাসি জানান, মামলার আসামি কোরালখালী পশ্চিমপাড়া গ্রামের বশির আহমদের ছেলে আবদু শুক্কুরের বিরুদ্ধে রয়েছে অন্তত ১১টি মামলা। চিংড়িজোনে হামলা, জবরদখল, লুটপাট ও হত্যাসহ নানা অপরাধ কর্মের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এসব বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এদিকে চিংড়িজোনের ঘের মালিক ও চাষী এবং সাহারবিল ইউনিয়নের জনসাধারণ অভিযুক্ত এসব আসামিকে গ্রেফতার পুর্বক শাস্তি নিশ্চিতের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজি, র্যাবের প্রধান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি, জেলা পুলিশ সুপার ও থানার ওসিসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন এজেন্সির উর্ধবতন মহলের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ও চকরিয়া থানার এসআই গৌতম রায় বলেন, ঘের কর্মচারী নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি রুহুল কাদেরকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রুহুল কাদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাতে ঘটনার সাথে তাঁরা ক’জন জড়িত ছিল এবং ঠিক কি কারনে ঘের কর্মচারী নুরুল ইসলাম খুন হয়েছে তা পরিস্কার ভাবে বলেছে। তিনি বলেন, মামলার আসামি যেহেতু আদালতে বলেছে, ঘটনার সাথে কাঁরা জড়িত, মুলত তাদেরকে সনাক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জসিট) দেওয়া হবে। তবে মামলার বেশির ভাগ আসামি ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছে। সেই কারনে তাদেরকে গ্রেফতারে একটু সময় লাগছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।