এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়াঃ অব্যাহত টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানির প্রবল ধাক্কায় হুমকির মুখে পড়েছে বেড়িবাঁধসহ ব্রীজ-কালভার্ট। মাতামুহুরী নদীতে ঢলের পানি প্রবাহ বাড়ার ফলে এপ্রোস সড়কের মাটি সরে গিয়ে চিরিঙ্গা জনতা মার্কেট বাঘগুজারা সড়কের বেতুয়াবাজার সেতু হুমকির মুখে পড়েছে। এ অবস্থার কারণে যে কোন মুর্হুতে সেতুটি দিয়ে সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অপরদিকে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার কারনে মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের চাপে উপজেলার বেশ কয়েকটি বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ফলে উপকুলীয় ইউনিয়নে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এখনো পানিবন্দি রয়েছে ৩ লক্ষাধিক বানবাসি মানুষ।
ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদী বেয়ে পার্বত্য এলাকা থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে বিভিন্ন এলাকায় ভাংগন দেখা দিয়েছে। গত তিনদিনে উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত বেশ কয়েকটি বসতঘর নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
জানা গেছে, উপজেলার বেতুয়া বাজারের পূর্ব পার্শ্বে ব্রীজের নিচে এপ্রোস সড়কের মাটি সরে গেছে। এতে হুমকির মুখে রয়েছে ওই ব্রীজটি। এছাড়া বিএমচরের কুইরল্যারকুমের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ফলে উপকুলীয় এলাকার নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানি ডুকে পড়ছে। এ অবস্থায় শনিবার বিকেল পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার থেকে চকরিয়া-পেকুয়া,পার্বত্য উপজেলা লামা ও আলীকদমে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এই বৃষ্টির পানি রাতের দিকে মাতামুহুরী নদী দিয়ে নেমে আসে ভাটির দিকে। এসময় নদীর দু’কুল উপচিয়ে লামা-আলীকদম প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, সাহারবিল, চিরিংগা, কৈয়ারবিল, কোণাখালী, বিএমচর, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড় ভেওলা, ফাঁসিয়াখালী ও পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা এবং পেকুয়া সদর, উজানটিয়া, মগনামা, বারবাকিয়া, শিলখালীসহ বেশ ক’টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যায়।
সুরাজপুর-মানিকপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক, বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম জাহাংগীর আলম, কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার, কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা কাইছার জানান, বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যার পানি কমেনি। শতশত পরিবারে রান্নার কাজ বন্ধ রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষের মাঝে খিচুড়ি রান্না করে ও শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলার বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। সকালে বেতুয়া বাজার সেতু ও বিএমচর ইউনিয়নের কুইরল্যারকুমের বেড়িবাঁধ সরজমিন দেখে এসেছি। তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছি।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, অতিবর্ষণের ফলে বন্যার পানি নামতে পারেনি। পানিবন্দি রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। বন্যার্তদের বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ ৪০ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার পেকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ইউএনও আরো বলেন, বিএমচর ইউনিয়নের কুইরল্যারকুম ভেঙ্গে যাওয়ায় উপকুলীয় এলাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ ভাঙ্গার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।