২৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

শিশু ওয়ার্ডে রোগীর ভিড়

চকরিয়ায় বেড়ে চলেছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ

এম. মনছুর আলম,(চকরিয়া): কক্সবাজারের চকরিয়ায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ।এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশির ভাগ শিশু বয়সের রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। তবে বেশি সমস্যায় পড়েছে নিউমোনিয়া রোগের শিশুরা। চকরিয়ায় গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিন মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুরাই এরোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। প্রতিদিন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে তাদের অভিভাবকরা ভিড় জমাচ্ছে চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।আক্রান্ত এসব শিশুকে নিয়ে সরকারী ও প্রাইভেট হাসপাতালসহ বিভিন্ন ডাক্তারের চেম্বারে দৌড়ঝাপ শুরু করছে অভিভাবকেরা। গতকাল রবিবার বিকাল পর্যন্ত চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল অন্তত ১০২জন। তন্মধ্যে বিকেল চারটা পর্যন্ত হাসপাতালের চিত্র অনুযায়ী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল ৭২জন। এর পর থেকে আরো বেশ কয়েক শিশু সরকারী হাসপাতালে ভর্তি এবং চিকিৎসার জন্য যায় বলে জানা যায়। এছাড়াও পৌরশহর চিরিঙ্গার প্রাইভেট বেশ কয়েকটি হাসপাতালেও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের রোগীর ভিড় পরিলক্ষিত হয়েছে। হঠাৎ করে বৈরি আবহাওয়া, ঋতু পরিবর্তন, দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য সচেতনার অভাবেই এ রোগ বাড়ছে বলে জানালেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।
সরজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে,শুধুমাত্র ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ভিড় করা রোগীদের সামাল দিতে ডাক্তার ও নার্সেরা হিমশিম খাচ্ছেন। আগে থেকে প্রতি শয্যায় একাধিক রোগী ভর্তি হয়ে যাওয়ায় অনেক রোগী হাসপাতালের মেঝেতে অবস্থান করছে। আবার শিশু রোগীকে কোলে নিয়ে মা বেঞ্চের ওপর বসে আছেন। এই অবস্থায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনেক শিশুকে নিয়ে অভিভাবকেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় করলেও শয্যা সংকুলান না হওয়ায় ভর্তি করাতে না পেরে বাধ্য হয়ে বেসরকারী হাসপাতালেই ছুটছেন। হাসপাতালটি ৫০শয্যা হলেও প্রতিদিন নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগী আসছে দু’শ থেকে তিন’শ। অনেক সময় সীটের অভাবে রোগীদের চিকিৎসা নিচ্ছে বারান্দার ফ্লোরের ওপর। আবার অনেকে একই সীটের মধ্যে দুই তিনজন গাদাগাদি করে চিকিৎসা সেবা নিতে দেখাগেছে।
চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের মগনামা পাড়ার এলাকার নজির আহমদের ৬মাস ১৩ দিন বয়সের পুত্র মো:আকিব নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে গত বুধবার হাসপাতালে ভর্তি করান।শ্বাসকষ্ট ও সাথে পাতলা পায়খানা হচ্ছিল শিশুটির।চিকিৎসা পেয়ে আগের চেয়ে একটু ভাল হয়েছে বলে জানান।
চকরিয়ার সাহারবিল ইউনিয়নের অছিয়া বাপের পাড়ার মো.সালামের ১০মাস বয়সের পুত্র মো.সাঈদী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় তিন আগে। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট ও কাঁশি নিয়ে দুইদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা সেবা দিলেও এখনো পর্যন্ত কোন উন্নতি হয়নি বলে মা-বাবা জানান।
২দিন বয়সের এক শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন হারবাং ইউনিয়নের মগপাড়া এলাকার বাবুলের স্ত্রী রুমি।এবং বিএমচর ইউনিয়নের পুচ্ছালিয়া পাড়ার জিয়াবুল করিমের স্ত্রী জন্নাতুল ফেরদৌস কন্যা ২০দিনের বয়সের মিফতাহুলকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসে শয্যা না পাওয়ায় হাসপাতালের মেঝেতে স্থান করে চিকিৎসা দিচ্ছেন ওই শিশুকে বলে জানিয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশুরোগ বিশেযজ্ঞ ডা: মো.খালেদ হোসেনের কাছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া প্রকোপ বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,মুলত চিকিৎসকের ভাষায় এই রোগের নাম হচ্ছে ব্রণকিউলাইটিস রোগ।শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে রোগটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।সাধারণত এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ।হালকা গরম ও বৃষ্টির কারণে রোগটি দেখা দেয়।এটি শরুতে জ্বর,সর্দিকাশি মাধ্যমে রোগের সৃষ্টি হয়ে শিশুরা নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। রোগটি স্বাভাবিকবস্থায় ফিরে আসতে কয়েকদিন সময় লাগে বলে তিনি জানান।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো.মুজিবুল হক বলেন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ায় ও পেট ব্যাথার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ছে। এছাড়াও গরম, ঠান্ডার পাশাপাশি বৃষ্টিপাতের কারণে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তবে এখনো পর্যন্ত নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা ভালো আছে এবং নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল (সিভিল সার্জন) ডা: মো.আবদুস সালামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,রোগের লক্ষণ হিসেবে প্রথমত জ্বর,সর্দি, কাঁশি সৃষ্টি হয়।তা আস্তে আস্তে শ্বাসকষ্টের মাধ্যমে বেড়ে যায়।তিন মাস থেকে পাঁচ মাস বয়সী শিশুরাই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে বেশি।যেমন ঋতু পরিবর্তন, দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা ও জলবায়ু পরিবর্তন দেখা দিলে এ রোগটা বৃদ্ধি পায়।আরো কয়েকদিন এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও তিনি জানান।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।