ভারী বর্ষণে ফের চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। টানা তিনদিন ধরে অব্যাহত ভারী বর্ষনে উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় উপজেলার প্রায় ৩লাখ মানুষ কার্যত পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
নদীর পানির প্রভাবে এবং ভারী বর্ষণের কারনে উপজেলার চিংড়িজোনের চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনা এলাকায় পানিতে ডুবে গেছে শত শত চিংড়িঘের। ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে ধারণা করছেন জনপ্রতিনিধিরা।
চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, গতকাল সকালের দিকে পানিতে তলিয়ে গেছে চিংড়িজোনের বিপুল পরিমাণ ঘের। বর্তমানে পানিতে একাকার হয়ে গেছে ঘের গুলো। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে রাতের মধ্যে চিংড়িঘের সমুহের মাছ ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় ঘের মালিক ও চাষীদের বরাত দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আরো বলেন, পানিতে ঘের গুলো তলিয়ে যাওয়ার কারনে কমপক্ষে শতকোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক, সাহারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল, কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান, বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার, কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার, লক্ষ্যারচর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা কাইছার, কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেন, ও বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, টানা তিনদিনের ভারী বর্ষণের কারনে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে আবারও পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এ অবস্থার কারনে উপজেলার অন্তত শতাধিক গ্রাম ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৩লাখ মানুষ আবারও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী বলেন, অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে চকরিয়া পৌরশহর রক্ষা বাঁধ এবং ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের ঘুনিয়া পয়েন্টের বেড়িবাঁধ। চলতিমাসে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে চকরিয়া পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ডের শহররক্ষা বাঁধ এলাকার গনী সিকদারপাড়া গ্রামের অন্তত ১২টি বসতঘর ও ১নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল বারী পাড়া গ্রামের অন্তত ৬টি বসতঘর এবং আবাদি জমি। গতকালও পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের আবদুলবারী পাড়া গ্রামে কয়েকটি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চলতি মাসের দুইদফা বন্যার তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্থ চকরিয়া শহররক্ষা বাঁধটি রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জরুরী প্রকল্পের আওতায় প্রথমে স্পার দেয়া হয়। কিন্তুপানির প্রবল ¯্রােতের টানে স্পার গুলো ভেসে গেছে। এ অবস্থায় শহররক্ষা বাঁধ এবং আশপাশ এলাকা রক্ষার্থে ইতোমধ্যে পাউবো’র পক্ষ থেকে সেখানে তাৎক্ষনিকভাবে বালুর বস্তা ফেলে কোনমতে নদী ভাঙ্গন ঠেকানো হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, টানা তিনদিনের ভারী বর্ষণে আবারও মাতামুহুরী নদীতে পাহাড়ি ঢলের পানি নেমেছে। এ অবস্থায় বেড়িবাঁেধ ফাটলের সৃষ্টি হওয়ায় পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ড ও ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের জনবসতি, রাস্তা-ঘাট, মসজিদ মাদরাসা, স্কুল ও মন্দিরসহ একাধিক স্থাপনা ফের নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হলে যে কোন মুহুর্তে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নদী গর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সবিবুর রহমান বলেন, গত তিনদিনের অবিরাম ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে আবারও মাতামুহুরী নদীতে ঢলের পানি নেমেছে। গতকাল দুপুর নাগাদ মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানির প্রবল তান্ডবে উপজেলার কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ চরম ঝুঁিকর মধ্যে রয়েছে। তারমধ্যে অধিক ঝুঁিকর মধ্যে আছে নদীর তীরবর্তী এলাকা চকরিয়া শহররক্ষা বাঁধ ও ঘুনিয়া পয়েন্টের বেড়িবাঁধ। তিনি বলেন, আগের বন্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে নদীতে শহররক্ষা বাঁধ ও ঘুনিয়া পয়েন্টে প্রথমে ফাইলিং করে গাছের স্পার দেওয়া হয়। পরে স্পার গুলো পানির প্রবল স্্েরাতে তলিয়ে গেলে ভাঙ্গন স্থানের আড়াইশত মিটার এলাকায় ৯ হাজার বালু বস্তা (জিও) ব্যাগ নদীতে ডাম্পিং করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের পাশপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা গত তিনদিন ধরে ওই এলাকায় অবস্থান করে নদীতে বালুর বস্তা ডাম্পিং অব্যাহত রেখেছেন। যাতে বেড়িবাঁধটি নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা যায়।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম বলেন, পানিবন্দি মানুষকে স্থানীয় সাইক্লোন সেল্টার গুলোতে আশ্রয় নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে ইতোমধ্যে উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির বিষয়টি ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।