এম.জিয়াবুল হক,(চকরিয়া): চকরিয়া পৌরসভার করাইয়াঘোনা গ্রামের মৃত ওমর আলীর ছেলে আবদুল মজিদ (৭৫) প্রকাশ মজিদ বলি হত্যা মামলার অন্যতম আসামী নুরুল কাদের প্রকাশ নুরুকে (৪২) অবশেষে গ্রেফতার করেছে পিবিআই পুলিশ। গ্রেফতারকৃত নুরু একই এলাকার কবির কবির আহমদের ছেলে। শনিবার (১৮নভেম্বর) সন্ধ্যায় পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজার এর উপ পরিদর্শক (এসআই) শাহেদ উল্লাহ্র নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেন।
এসআই শাহেদ উল্লাহ্ বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চকরিয়া উপজেলার দরবেশ কাটা বাজার এলাকা থেকে আবদুল মজিদ বলি হত্যা মামলার এজাহারনামীয় ৮নং আসামী মোঃ নুরুকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তিনি আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তির মাধ্যমে হত্যার ঘটনার রহস্য উৎঘাটন সম্ভব হবে।
স্থানীয় সুত্র জানিয়েছেন, নিহত মজিদ বলি দীর্ঘদিন ধরে থানা সেন্টার এলাকার প্রবাসী নুর হোসেনের জমি-জমাসহ পারিবারিক কাজকর্ম দেখভাল করতেন। ঘটনার কিছুদিন আগে চকরিয়া পৌরসভার বাটাখালী সেতু লাগোয়া এলাকায় স্থানীয় গোলাম মোস্তাফা প্রকাশ বদিউল আলম গংয়ের ক্রয় করা কিছু জমি নিয়ে প্রবাসী নুর হোসেন গংয়ের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়দের দাবি, ক্রয়কৃত জমিতে বদিউল আলম গং ঘেরাবেড়া দিলে তাতে ক্ষুদ্ধ হন নুর হোসেন। বিষয়টি দেখতে প্রবাসী নুর হোসেন বিদেশ থেকে দায়িত্ব দেন মজিদ বলিকে। এরই প্রেক্ষিতে ঘটনার দিন রাতে নিহত আবদুল মজিদ বলি তাঁর অপর ছেলে ফোরকানুল ইসলাম পুতু ও গ্রেফতার হওয়া নুরুল কাদের প্রকাশ নুরুকে নিয়ে বাড়ির অদুরে বাটাখালী সেতু এলাকার বিরোধীয় জায়গায় যান। তবে ঘটনাস্থল থেকে ছেলে ফোরকান ও সহযোগি নুরুল কাদের নুরু রাতে বাড়ি ফিরলেও সকালে বিরোধীয় ওই জায়গায় লাশ পাওয়া যায় মজিদ বলির।
গতকাল বিকালে চকরিয়া কোর্ট সেন্টারে নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী নুরুচ্ছাফা বেগম দাবি করেন, ঘটনার দিন রাতে বাড়ি থেকে তাঁর স্বামীকে (মজিদ বলি) ঘুম থেকে ডেকে তুলেন ছেলে ফোরকান ও গ্রেফতার হওয়া নুরুল কাদের নুরু। রাতে তাঁরা বাড়ি ফিরলেও সকালে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা স্বামীর মৃতদেহ। তবে তাঁর স্বামীকে কারা মেরেছে তিনি জানেন না। মৃত্যুর আগে স্বামী মজিদ বলি থানা সেন্টার এলাকার প্রবাসী নুর হোসেনের কাজ করতো বলে দাবি করেন নুরুচ্ছাফা বেগম।
এলাকাবাসি জানিয়েছেন, আবদুল মজিদ বলি খুনের ঘটনায় ওইসময় নিহতের ছোট ছেলে চকরিয়া পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় আটজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা রুজু করেন। গ্রেফতারকৃত নুরুল কাদের নুরুকে মামলার ৮নম্বর আসামি করা হয়। তবে মামলার এজাহারে অভিযুক্ত অন্য আসামিরা কতিপয় মহলের চক্রান্তের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন আসামি পক্ষের লোকজন।
এলাকাবাসির দাবি, জায়গা ক্রয়কে কেন্দ্র করে চকরিয়া থানা সেন্টার এলাকার প্রবাসী নুর হোসেন ও কাহারিয়াঘোনা গ্রামের বাসিন্দা বদিউল আলম গংয়ের মধ্যে বিরোধ থাকায় কৌশলে হত্যা মামলার এজাহারে বদিউল গংয়ের লোকজনকে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর ভোররাত ৩টার দিকে বাড়ির অদুরে আবদুল মজিদকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ছেলে ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ৮জনের নাম উল্লেখ্য করে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তিনি বলেন, মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই পুলিশের কাছে ন্যাস্ত হওয়ার পর সর্বশেষ শনিবার (১৮ নভেম্বর) বিকালে এজাহারনামীয় আসামী নুরুল কাদের নুরুকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। গতকাল রোববার বিকালে তাকে আদালতে সৌর্পদ্দ করা হলে তিনি (আসামি নুরুল কাদের) ঘটনার সাথে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। পরে আদালতের বিচারক জবানবন্দি আমলে নিয়ে তাকে (গ্রেফতারকৃত নুরুল কাদের) জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।