লোকসানে লবণ চাষ। হাজারো চাষির জীবিকায় ধস। রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। তবুও অবহেলা। চাষিরা উৎসাহিত হচ্ছে না। অথচ লবণ খাতের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলা যায় অনায়াসে। সম্ভাবনা বিকাশে পদে পদে বাঁধা। তৎপর সিন্ডিকেট চক্র। দেশের লবণখাত বাঁচাতে লবণ নীতিমালা বাস্তবায়নসহ এগারো দফা দাবি তুলেছেন লবণ চাষের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। চকরিয়ার লবণ চাষি সমিতির নেতারা বলছেন, শুধু সরকার অনুমোদিত লবণ নীতিমালা প্রয়োগের মধ্যদিয়েই লবণখাত বাঁচানোর সম্ভাব। আর লবণ খাত বাঁচলে বাঁচবে এ শিল্পে জড়িত প্রায় ২০ লাখ মানুষ। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় চলতি মৌসুমে গত নভেস্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে লবণ চাষ। ইতোমধ্যে লবণ উৎপাদনে চার মাস সময় বেশ ভালভাবে অতিবাহিত করেছে চাষিরা। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকায় চকরিয়া উপজেলার মতো দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা আংশিকসহ কক্সবাজার জেলার আট উপজেলায় লবণ উৎপাদনে এবার রের্কড় গড়েছে চাষিরা। মৌসুম শেষ হতে আরো অন্তত তিনমাস সময় রয়েছে। এরই মধ্যে চাষীরা মাঠ থেকে উৎপাদন করেছে বিপুল পরিমাণ লবণ। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকলে এ বছর বিসিকের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে আশানুরুপ অতিরিক্তি লবণ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিসিকের কর্মকর্তারা। তবে মাঠে বিপুল পরিমাণ লবণ উৎপাদন হলেও বর্তমানে চাষীদের জন্য চরম দু: স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশে বিরোধী জোটের ডাকা চলমান টানা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) হিসেব মতে গত বছর ২০১৪ সালে ৬৪ হাজার ১৫১ একর জমিতে দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৯ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকায় সেইবার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে রের্কড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে দেশে। তবে এ মৌসুমে চাষের পরিধি কমে যাওয়ায় বিসিক চলতি বছর ২০১৫ সালে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৮ লাখ মেট্রিক টন। যা গত বছরের তুলনায় এক লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন কম। বাংলাদেশ লবণ শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) তথ্য মতে, গত বছর জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর উপজেলা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী (আংশিক) উপজেলার ১৩ টি কেন্দ্রের অধীনে ৬৪ হাজার ১৫১ এককর জমিতে লবণ চাষ করেন চাষীরা। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকার পরও গত বছর বিদেশ থেকে অব্যাহত লবণ আমদানির কারনে এবছর চাষের পরিমান একটু কমেছে। তবে এ বছর ৬০ হাজার একরের বেশি জমিতে লবণ চাষ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ লবণ শিল্প কর্পোরেশন কক্সবাজারের গবেষনা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। জানতে চাইলে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি নূরুল আবছার হেলালী বলেন লবণ নীতিমালা বাস্তবায়ন না হলে লবণচাষী এবং লবণ শিল্প দুটি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই লবণ শিল্প বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ লবণ চাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চকরিয়ার লবণ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, গত বছরের বিপুল দায়দেনা মাথায় নিয়ে চাষীরা শত প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে এবছর ও লবণ উৎপাদনে মাঠে নামে। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকায় গত চারমাসে রের্কড় পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিমণ সাদা জাতের (পলিতিন পদ্ধতির) লবণ ১১৫ থেকে ১২০ টাকা ও কালো জাতের (সনাতন পদ্ধতির) লবণ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে একশত টাকা ধরে। টানা হরতাল-অবরোধের কারনে পরিবহন ব্যবস্থা সংকট ও বড় আড়তদার ব্যবসায়ীরা লবণ ক্রয় করতে না আসায় বর্তমানে বাজার দামে বড় ধরনের ছন্দ পতন ঘটেছে। এ অবস্থার ফলে চাষীরা উৎপাদিত লবণ বিক্রি করেও আশানুরুপ ভাবে লাভবান হচ্ছেনা ফলে এখানকার লবণ চাষীরা এ বছরও অনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার আশংকা রয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।