কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের মরংঘোনা এলাকার ৩ যুবক প্রায় তিন মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছে। দালালের মাধ্যমে সাগর পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় তারা নিখোঁজ হয়ে গেছে। তাদের পরিবারের অভিযোগ স্থানীয় কিছু দালাল তাদেরকে স্বল্প খরচে মালয়েশিয়া পৌঁছে দিয়ে চাকরী দেয়ার কথা বলে নিয়ে গিয়েছিল। প্রায় ৪০দিন সাগরে আটকে রেখে তাদের কাছ থেকে ২লাখ টাকা করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে। মুক্তিপণ আদায়ের পর হতে ওই ৩ যুবকের আর কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এখন ওই পরিবার গুলোতে নেমে এসেছে চরম হতাশা। এ ব্যাপারে ভূক্তভোগিদের পরিবারের পক্ষ থেকে মানব পাচারের সাথে যুক্ত দালালদের নাম উল্লেখ করে চকরিয়া থানায় একটি এজাহার দেয়া হয়েছে।
কোনাখালী ইউনিয়নের মরংঘোনা এলাকার নিখোঁজ কৃষক মহিউ দ্দিনের স্ত্রী কমরুন নাহার জানান, ওই এলাকার আবদু রহিমের তিন পুত্র মোহাম্মদ হোছাইন, আহমদ হোছাইন ও জামাল হোছাইন মালয়েশিয়ায় থাকেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে চকরিয়া ও বাঁশখালী এলাকা থেকে মালয়েশিয়ায় চাকরী দেয়ার কথা বলে বেকার যুবক ও স্বল্প আয়ের লোকজনদের সাগর পথে নিয়ে যায়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারী মালয়েশিয়া প্রবাসী মোহাম্মদ হোছাইনের পিতা আবদু রহিম ওই এলাকার মোজাফ্ফর আহমদের পুত্র মহিউদ্দিন(৩০), আমির হোছনের পুত্র মোক্তার আহমদ প্রকাশ মানিক (২৬) ও নুরুল কবিরের পুত্র মনির আহমদ(২২)কে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে একটি ইঞ্জন চালিত ট্রলারে তুলে নিয়ে রওনা দেয়।
ট্রলারে উঠার পর তাদেরকে ৪০দিন সাগরে ভাসিয়ে রেখে নির্যাতন করে তাদের স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে জনপ্রতি ২ লাখ টাকা করে মুক্তিপন আদায় করে। তাদেরকে মালয়েশিয়ায় নিয়ে গিয়ে ভাল চাকরী দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু টাকা পরিশোধ করার পর হতে তাদের আর কোন খোঁজ মিলছেনা। মালয়েশিয়া প্রবাসী মোহাম্মদ হোছাইনের বাবা আবদু রহিম অনেক দিন আশ্বাস দেয়ার পর এখন আর কথা বলেছেন না নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের সাথে। গতকাল ২৯ মে এ ব্যাপারে নিখোঁজ মহিউদ্দিনের স্ত্রী কমরুন নাহার স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি বাদী হয়ে মৃত ছালেহ আহমদের পুত্র আবদু রহিম, মোহাম্মদ হোছাইনের স্ত্রী ফটো বেগম, আহমদ হোছাইনের স্ত্রী সাদেকা জান্নাত, আবদু রহিমের পুত্র মোহাম্মদ হোছাইন, আহমদ হোছাইন ও জামাল হোছাইনের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় একটি এজাহার দিয়েছেন।
এজাহারটি তদন্তের জন্য চকরিয়া থানার এস.আই দিদারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নিখোঁজ মোক্তার আহমদ প্রকাশ মানিকের স্ত্রী তছলিমা বেগম জানান, আমার স্বামী দালাল আবদু রহিমের বাড়ীতে খেতের কাজ করতো। সেখানেই আমার স্বামী মানিককে দালাল আবদু রহিম বার বার বলতেন এখানে এভাবে গাধার মতো খেটে মানুষ হতে পারবিনা। মালয়েশিয়ায় গিয়ে আমরা ছেলেরা দেখছো না কত টাকা পাঠায় ? তুমি মালয়েশিয়া যেতে খুবই স্বল্প খরচে পারবে আমার ছেলেদের মাধ্যমে। এসব কথা বলেই আমার স্বামীকে নিয়ে গেছে। কিন্তু সাগরে নিয়ে গিয়ে আমাদের চাপ সৃষ্টি করে ২লাখ টাকা করে আদায় করেছে।
এখন আমার স্বামী কোথায় আছে তা আবদু রহিমের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আর কয়দিন ধর্য্য ধরো খবর পাওয়া যাবে। এখন প্রায় ১শত দিন হচ্ছে কোন খোঁজ তারা দিতে পারছেনা। নিখোঁজ মনির আহমদের মা হাবিবা খাতুন জানান, আমার ছেলে ছাড়া আমার পরিবারে আয় করার আর কোন ব্যক্তি নেই। আমাদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা দিয়ে আবদু রহিম তার বাড়ীর পাশে জমিও কিনেছে। এখন কমরুন নাহার থানায় এজাহার দেয়ায় আসামী দালাল আবদু রহিম ও তার অপর ছেলে কামাল উল্টো আমাদেরকে প্রাণ নাশ ও ঘরছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন।
চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) কামরুল আজম জানান, এসব মানব পচারকারীদের ধরার জন্য কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযুক্ত আবদু রহিম জানান, আমার ছেলেরা মহিউদ্দিন, মানিক ও মনিরকে মালয়েশিয়ায় নিয়ে চাকরী দেয়ার কথা বলেছে ঠিকই। সাগর পথে তারা কোথায় হারিয়ে গেছে তা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কিন্তু কমরুন নাহারের এজাহারটি এখনও মামলা হিসাবে রুজু করা হয়নি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।