কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে মানব ও ইয়াবা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। মিথ্যা মামলা রেকর্ড করে বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । গত একবছরে এসব অপকর্মের জন্য তিন বার বদলির আদেশ হলেও তিনি তদবিরে ঠেকিয়েছেন বদলি। চকরিয়া থানাটি উর্ধবর হওয়ায় দু’হাতে মওকা পেলে হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ। তালিকাভুক্ত ও মামলার পলাতক আসামী মানবপাচারকারীর হাতে ফুটবল খেলার বিজয়ী ট্রফি তুলে দেয়ার নজির রয়েছে এই থানায়। কয়েকজন এসআই ও এএসআইকে দিয়ে ওসি নিজেই মানব ও ইয়াবা ব্যবসায় সরাসরি জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গত বছর চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশে কর্মরত থাকাকালিন সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) থেকে ওসি (তদন্ত) পদোন্নতি পান প্রভাষ চন্দ্র ধর। প্রথমে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন একটি থানায় ওসি ( তদন্ত) এর দায়িত্ব পালন করেন তিন মাস। ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল তিনি চকরিয়া থানায় সরাসরি ওসি হিসেবে যোগদান করেন। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানায়।
যোগদানের পর থানার ক্ষমতাধর ওসি! হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন। ‘মহা ক্ষমতাবান ওসি। এজন্য চকরিয়ার মতো মফস্বল এলাকার সাংবাদিকদের তিনি চোখে দেখেন না। কোন তথ্যের জন্য গেলেই অমুখের কাছে আছে, তমুখের কাছে আছে বলে শুধুই হয়রানিতে ফেলেন সংবাদকর্মীদের। ওসি জীবনের এটিই তাঁর প্রথম থানা! তারপরও মহাপ্রতাপশালী তিনি’। চকরিয়া থানার ওসির কার্যকলাপ নিয়ে শুরু থেকেই এভাবেই মন্তব্য করে আসছে কক্সবাজার জেলায় ও চকরিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা।
স্থানীয় অধিবাসীদের অভিযোগে জানাযায়, গত এক বছর ধরে উদ্বেগ জনকভাবে প্রকাশে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাই, ইয়াবা পাচার , মানবপাচার, অপহরণ, চুরি, জমি, জবর দখল, দস্যুতাসহ নানা অপরাধ সংগঠিত হয়ে আসছে। এনিয়ে পুরোচকরিয়ার আইনশৃংঙ্খলার অবনতিতে জনগণের মধ্যে আতংক আর উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।
স্থানীয় সুত্র জানায়, চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা , বদরখালী , সুরাজপুর মানিকপুর, কৈয়ারবিল, খুটাখালী , পূর্ব বড় ভেওলা , ডুলাহাজারা ও পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড হচ্ছে মানবপাচারের নিরাপদ রুট। গত এক বছরে ওই এলাকাগুলো হতে সবচেয়ে বেশী মানবপাচারের ঘটনা ঘটেছে। একটি সুত্র জানায়, মানবপাচারের ঘটনায় জড়িত রয়েছে খোদ ওসি প্রভাষ চন্দ্রসহ এসআই শাহাদত ও থানার কয়েকজন উপ-পরির্দশক। গোয়েন্দা রিপোর্টে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকায় ওসি প্রভাষের নাম না থাকায় স্থানীয়রা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। চলতি মাসে চকরিয়া বারআউলিয়া নগরে একটি ফুটবল খেলায় জালিয়াপাড়ার ৪টি মানবপাচার মামলার আসামী জসিম নামের এক মানবপাচারকারীর হাতে বিজয়ী ট্রফি তুলে দেয় পুলিশ। এনিয়েও সে সময় বির্তকের সুষ্টি হয়। এছাড়া চলতি বছর জানুয়ারী মাসে চকরিয়া থানা পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে একের পর এক ইয়াবার চালান আটক হচ্ছে ।
চলতি বছর ১৫ জানুয়ারী দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে প্রায় ৪ কোটি টাকার ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় পাচার কালে সীতাকুন্ড হাইওয়ে পুলিশের হাতে আটক হন চকরিয়া থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর, এসআই আকতার, কনস্টেবল বেলাল (ক্যাশিয়ার), গাড়ির মালিক আইয়ুব আলী, চালক মিন্টু, চকরিয়া থানা পুলিশের সোর্স ইয়াবা সম্রাট খ্যাত ওসমান গণি প্রকাশ দাদা ওসমান ও সোর্স কামাল উদ্দিন। এ ঘটনায় ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধরও আটক হওয়ার কথা দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকায় ১৭ জানুয়ারী ২য় পৃষ্টায় ও বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ পায় এবং সর্বত্র প্রচার হয়েছিল। পরে কৌশলে ওসি প্রভাষ ছাড়া পেয়ে যান। ইয়াবার বিক্রির অগ্রিম ১০ লাখ টাকা, একটি প্রাইভেট কার ও ইয়াবাসহ আটককৃতদের সীতাকুন্ড থানায় সোর্পদ করেন। এসব ইয়াবার ভাগ ছিলো এসআই শাহাদতেরও। শনিবার ১৭ জানুয়ারী আটককৃতদের চট্টগ্রাম ডিআইজি কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পরবতী ব্যবস্থা নিতে কক্সবাজার জেলা পুলিশের কাছে সোর্পদ করা হয়। একই দিন বিকালে কক্সবাজার পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তি নাথ চকরিয়া থানা পরিদর্শন ও এসআই আকতার ও কনস্টেবল বেলালকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ চালান। প্রাথমিক ভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় রাত আট টার দিকে এক ফ্যাক্স বার্তায় এই দুই পুলিশকে চকরিয়া থানা হতে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। ১লাখ ২০ হাজার ইয়াবাসহ ২৩ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১ টায় দিকে হাতে এক সহযোগীসহ ধরা পড়েন চকরিয়া থানার মাতামুহুরী ফাঁড়ির পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল ইসলাম। এভাবেই একর পর এক পুলিশের ইয়াবা চালান আটক হন। এমনও অভিযোগ উঠেছে থানার দুই পদস্থ কর্মকর্তাও সরাসরি ইয়াবা ব্যবসায় জুনিয়র কর্মকর্তাদের উৎসাহ যোগাচ্ছেন।
সুত্র মতে, ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চকরিয়া থানায় মানবপাচারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১০টি। পুলিশের দাবী, এসব মামলায় ৩৫ মানবপাচারকারীকে আসামী করা হয়। এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ১৪ জনকে। তবে
অধিবাসিদের মতে, দালালদের দালালদিপনার বেষ্টনিতে চকরিয়া থানা। ওসি প্রভাষ যেন তারই রাজ্যপটে পুরো থানা এলাকার। ক্ষমতার অপব্যবহার করে গ্রেফতার বাণিজ্যে রেহায় পায়নি শিশু, ছাত্র, ব্যবসায়ী এমনকি সাংবাদিকও। অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে। ওসি প্রভাষ কি থানার নির্বাহী না আটক বাণিজ্যের হোতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মী অভিযোগ করেন, ২০ দলের অবরোধ যেন আর্শীবাদ হয়ে আসেন ওসি প্রভাষের জন্য। দীর্ঘ অবরোধ, আন্দোলন, হরতাল, নাশকতা হলেও তৎসময় উলে¬খ যোগ্য ২০ দলে কোন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হননি।
কারণ হিসেবে তারা বলেন, তালিকা করেই ওসি ওই সব নেতাকর্মীদের কাছ থেকে নগদে সুবিধাভোগ করছে। এছাড়া সাধারণ ও নিরীহ লোকজনকে বিভিন্ন অজুহাতে গ্রেফতার বাণিজ্য করে আয় করে নিচ্ছে বিপুল অংকের টাকা। সহিংসতা, নাশকতার সুযোগে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার মতো বির্তকিত কাজ করে চলেছেন তিনি।
জনমনে এটাই প্রশ্ন; এত অপকর্মের পরও যিনি বহাল তবিয়তে। তার খুঁটির জোর কোথায়? । অভিযোগের অন্ত নেই তার বিরুদ্ধে। মানবপাচারকারী, ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে অবাধে চালাচ্ছেন গ্রেফতার বাণিজ্য। মওকা পেলে দু’হাতে লুটে নেন সব। নিয়মনীতির তোয়াক্কাই করে না। ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে আইন মানার বালাই নেই। তিনি যে আইনের লোক ! কেউ তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই পড়ে যান রোষানলে। ওসি প্রভাষের রাহুলগ্রাস থেকে তখন কে আর বাঁচায় তাকে।
ডাকাতি হত্যা, চাঁদাবাজি, অপহরণ, মানবপাচার সহ এলাকার আইনশৃংঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির শত অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রচার হলেও চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার জনসাধারণের বোবা কান্না যথাযত কর্তৃপক্ষের কাছে পৌছছে না।
একটি সুত্র জানায়, বিভিন্ন অভিযোগে ওসি প্রভাষ চন্দ্রের পর পর তিনবার বদলির আদেশ হয়। সর্বশেষ গত মে মাসেও তার বদলির আদেশ আসেন। কিন্তু বরাবরের মতো তাও তদবিরের মাধ্যমে ঠেকিয়েছেন বলে জানাগেছে।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তি নাথ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওসি প্রভাষ চন্দ্রের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।