২৫ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

চকরিয়া সরকারী হাসপাতালের প্রাইভেট চিকিৎসা বাণিজ্য: বিক্রি হচ্ছে বিনামূল্যে সরকারী ঔষধ!


জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ৫০ শষ্যা বিশিষ্ট সরকারী হাসপাতালটিতে প্রতিদিন উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ১টি পৌরসভার প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং বান্দরবানের লামা,আলীকদম সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত রোগিরা আসেন সেবা নিতে, কিন্তু পাচ্ছেনা সুচিকিৎসা। হাসপাতালের শষ্যা গুলো নোংরা, অপরিস্কার অপরিচন্ন থাকার কারণে রোগিদের দূর্ভোগ কমছেনা। রোগিদের খাবারের জন্য বরাদ্দদেয়া অর্থ লুটেপুটে খাচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার। হাসপাতাল লাগোয়া সরকারী কোয়ার্টার গুলো পরিনত হয়েছে চিকিৎসকদের প্রাইভেট ক্লিনিকে। রোগিরা হাসপাতালের সুচিকিৎসা না পাওয়ার কারণে ভিড় জমাচ্ছে ডাক্তারদের বাসার প্রাইভেট চেম্বারে। প্রতিবছর সরকারী ভাবে বরাদ্দ দেয়া মুল্যবান ওষুধ গুলো ভাগ্যে জুটেনা রোগিদের। সরকারী বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুসারে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ২ টা পর্যন্ত ডাক্তারদের হাসপাতালে খুঁজে পাওয়া যায়না। শুধুমাত্র সরকার প্রদেয় বেতন ভাতা গুলো হালাল করতে কয়েক ঘন্টা সময় হাসপাতালে কাটিয়ে তাদের ব্যক্তিগত চেম্বারে প্রাইভেট রোগি দেখার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটি হাসপাতালের অনিয়ম ও দূর্নীতির ব্যাপারে সরেজমিনে তদন্ত করে বহুবার প্রতিবেদন দিলেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্তা নেয়া হচ্ছেনা বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কর্তব্যরত ডাক্তারদের মধ্যে বেশীর ভাগই প্রাইভেট ক্লিনিক নিয়ে ব্যস্ত। অনেকেই দীর্ঘ ১০/১৫ বছর ধরে এ খানে একাধারে কর্মরত থাকায় হাসপাতালটি তাদের পৈত্রিক জমিদারী তাল্লুকে পরিনত হয়েছে। ডাক্তাররা অফিস চলাকালীন সময়েও প্রাইভেট চেম্বারে বসে রোগী দেখার কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। আবার কয়েকজন ডাক্তার স্থানীয় হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অফিস চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগী আসলে ডাক্তারদেরকে ফোন করার সাথে সাথে ওই ক্লিনিকে রোগীর চিকিৎসা করার জন্য চলে যায়। এদিকে হাসপাতালে ডাক্তারের রুমের সামনে দরিদ্র রোগীরা ঘন্টার পর ঘন্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে হয় অনেককে।
মূল্যবান ঔষধ গুলো কালোবাজারে বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে। রোগীরা ডাক্তারদের ব্যব¯’াপত্র হাতে নিয়ে বাইরের ফার্মেসী থেকে ঔষধ কিনতে দেখ যায়। সিটে ভর্তি হওয়া রোগীদের দৈনিক খাবার ও নাস্তার বরাদ্ধ দেয়া অর্থ নিয়ে চলছে লুটপাট। রোগীদের থাকার সিট গুলো অপরিস্কার ও অপরিছন্ন। একজন সুস্থ মানুষ এ হাসপাতালে আসলে নিজেই রোগাক্রান্ত হওয়ার ভয় রয়েছে। দীর্ঘ একযুগের অধীক সময় ধরে কর্তব্য পালন করে যাচ্ছে ওই অফিসের অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী।
এ উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় অধিকাংশ সময় জায়গা জমির দখল-বেদখল, চিংড়ি প্রকল্প, লবনের মাঠ, বন উজাড়, ধান কাঠা, চোরাচালান, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি, সড়ক দূর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ঘটনা ও ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকে। এক পক্ষ অপর পক্ষকে ফাঁসাতে ভূঁয়া জখমি সনদ নিতে ডাক্তারদের দ্বার¯’ হতে হয়। এ সুযোগে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে ভূঁয়া জখমি মেডিকেল সাটিফিকেট প্রদান করে এ হাসপাতালের ডাক্তাররা। এ হাসপাতালের কর্মরত বেশ কজন ডাক্তার ও কর্মচারী গত ১৪/১৫ বছর ধরে ঘুরে ফিরে এ হাসপাতালে চাকুরী করছেন। সরকার প্রদেয় ঔষধপত্র ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ হাসপাতালে আগত রোগিরা। নামমাত্র ৫০ শষ্যা হাসপাতাল হলেও এখানে রোগিদের থাকার জন্য রয়েছে মাত্র ৪০/৪৫টি বেট। হাসপাতালে আগত জঠিল রোগিদেরকে বারেন্দার ফ্লুরে শুইয়ে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। পুরো হাসপাতালটি ময়লা আবর্জনা ও রোগিদের জন্য দেয়া কাপড় চোপড় ময়লা ও দূর্গন্ধযুক্ত।
অনিয়ম, দূর্নীতি, কর্তব্যকাজে চরম অবহেলা ও সার্টিফিকেট ব্যবসা আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে ভূয়া ও মিথ্যা জখমী সনদে দায়ের কৃত অভিযোগে চকরিয়া আদালতে সৃষ্টি হয়েছে মামলা জটের। মিথ্যা জখমী সনদের মাধ্যমে দায়ের করা মামলায় চরম হযরানী ও প্রতারিত হচ্ছে এলাকার হাজার হাজার নিরীহ নারী-পুরুষ। এ হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এলাকার জনগনকে স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার পরিবর্তে নিজেদের পকেটের স্বাস্থ্য ভাল করার কাজে থাকার অভিযোগ সচেতন মহলের। এ হাসপাতাল কতৃপক্ষের সীমাহীন অনিয়ম আর দূর্নীতির কারনে নিজেই অসুস্থ হয়ে মানব সেবা দিতে ব্যর্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের ভিতরে বাইরে বিরাজ করছে অস্বাস্থকর নোংরা পরিবেশ। রোগী থাকার ওয়ার্ড গুলোতে বিশ্রী দূর্গন্ধ বেরুচ্ছে। অপরদিকে অভিযোগ উঠেছে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মরত বেশীর ভাগ ডাক্তার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপস্থিত না থেকে প্রাইভেট চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকে। হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রোগীদের প্রতি চরম অবহেলা ও দূর্নীতির কারণে রোগিরা প্রকৃত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।দেশের সকল জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা চালু রয়েছে। এসব প্রতিষ্টানে চিকিৎসার পাশাপাশি বিনামূল্যে ঔষুধ প্রদানেরও নিয়ম আছে। উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজে ক্রয় বিক্রয় দন্ডনীয় অপরাধ বিধান থাকার সত্তেও সরকারী ঔষধ সমুহ গোপনে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামের গরীব অসহায় সাধারণ জনগণ। রোগীর প্রতি অবহেলা ছাড়াও সরকারী হাসপাতাল ক্লিনিক সমূহে ঔষধ দেওয়ার পরিবর্তে উল্টো ধমক দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশেষ সুত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া পৌর শহরের বাজারের কিছু পাইকারি দোকান, চকরিয়া হাসপাতাল সড়ক, খুটাখালী, মালুমঘাট সহ চকরিয়া উপজেলার অধিকাংশ পাইকারি ও খুচরা ওষুধের দোকানে এসব সরকারি বিনামূল্যের ঔষধগুলো বিক্রি হচ্ছে। ওই দোকান সমুহ থেকে যে কেউ চাইলেই সরকারী কোন ঔষধ নেই বলে জানায় দোকানদার। অথচ নির্দিষ্ট ক্রেতাদের সাথে সরকারী ঔষধ গুলো প্রতিনিয়ত আদান-প্রদান করছেন পাইকারি ঔষুধ ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি পাইকারি বা বড় ফার্মেসীতে রয়েছে ওষুধ মজুদ রাখার আলাদা কক্ষ। সরকারী ঔষুধ ও নিন্মমানের ভেজাল ঔষধ সমূহ ক্রয়-বিক্রয়ে ফার্মেসীর এ আলাদা কক্ষগুলো ব্যবহার হচ্ছে ওপেন সিক্রেট ভাবে। আর এসব ক্রেতারা হলেন গ্রামের অলিতে গলিতে গড়ে উঠা বেশ কিছু ফার্মেসী ও কথিত ডাক্তার। এদের অনেকের ভুল ও অপচিকিৎসায় আবার মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে অনেক রোগী। শিশু রোগী দেখার জন্য সরাসরি ডাঃ খালেদ হোসেনের টিকেট দিচ্ছেনা কর্তৃপক্ষ। এমনকি হাসপাতাল প্রধান ডাঃ সোলতান আহমদ সিরাজী হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকেন।
সচেতন মহল মনেকরেন ওষুধ প্রশাসনের একটু তৎপরতায় এসবের সত্যতা বের হয়ে আসবে এবং ফিরে পাবে সাধারন জনগনের অধিকার সরকারী স্বাস্থ্য সেবা। এব্যপারে কক্সবাজার সিভিল সার্জনের সাথে রিপোর্ট লিখা কালে মুটোফোনে যোগাযোগ করারা চেষ্টা করে সংযোগ না পাওয়ায় থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।