২৮ নভেম্বর, ২০২৪ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

চকরিয়া সরকারী হাসপাতাল দুর্নীতির অাখড়া, চলছে ডাক্তারদের সনদ বানিজ্য

picsart_1480444796152
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ৫০ শষ্যা বিশিষ্ট সরকারী হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা মারাত্বক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন এ হাসপাতালে উপজেলার ১ টি পৌরসভাসহ ১৮ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত রোগিরা সুচিকিৎসা পাচ্ছেনা। তাছাড়া হাসপাতালের আবাসিক শষ্যা গুলো নোংরা, অপরিস্কার অপরিচন্ন থাকার কারণে রোগিদের দূর্ভোগ কমছেনা। রোগিদের খাবারের জন্য বরাদ্দদেয়া অর্থ লুটেপুটে খাচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার। হাসপাতাল লাগোয়া সরকারী কোয়ার্টারগুলো পরিনত হয়েছে চিকিৎসকদের প্রাইভেট ক্লিনিকে। রোগিরা হাসপাতালের সুচিকিৎসা না পাওয়ার কারণে ভিড় জমাচ্ছে ডাক্তারদের বাসার প্রাইভেট চেম্বারে। সরকারী ভাবে বরাদ্দ দেয়া মুল্যবান ওষুধ গুলো ভাগ্যে জুটেনা রোগিদের। সরকারী বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুসারে সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ২ টা পর্যন্ত ডাক্তারদের হাসপাতালে আগত রোগী দেখার নিয়ম থাকলে ও ওই সময় তাদের খুঁজে পাওয়া যায়না।
শুধুমাত্র সরকার দেয় বেতন ভাতা গুলো হালাল করতে কয়েক ঘন্টা সময় হাসপাতালে কাটিয়ে তারা ব্যক্তিগত চেম্বারে প্রাইভেট রোগি দেখার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটি হাসপাতালের অনিয়ম ও দূর্নীতির ব্যাপারে সরেজমিনে তদন্ত করে বহুবার প্রতিবেদন দিলেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ কোন আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা বলে গুরুত্বর অভিযোগ রয়েছে। এ উপজেলায় জায়গা জমির বিরোধসহ সামাজিক নানা ঘটনা-দূর্ঘটনায় দ্বারস্থ হতে হয় ডাক্তারদের। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তাররা মিথ্যা জখমী সনদ প্রদান করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ কারণে থানা ও আদালতে মিথ্যে মামলার সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ হাসপাতালে নিয়োজিত ডাক্তারদের মধ্যে বেশীর ভাগই প্রাইভেট ক্লিনিক নিয়ে ব্যস্ত। অনেকেই দীর্ঘ ১০/১৫ বছর ধরে এ খানে একাধারে কর্মরর্ত থাকায় হাসপাতালটি তাদের পৈত্রিক জমিদারী তাল্লুকে পরিনত হয়েছে। ডাক্তারা অফিস চলাকালীন সময়েও প্রাইভেট চেম্বারে বসে রোগী দেখার কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। আবার কয়েকজন ডাক্তার স্থানীয় হওযার দাপট দেখিয়ে অফিস চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগী দেখতে চলে যায়।এদিকে হাসপাতালে ডাক্তারের রুমের সামনে দরিদ্র রোগীরা ঘন্টার পর ঘন্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে হয় অনেককে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বেশ কটি তদন্ত কমিটি সরেজমিনে তদন্তে এসে অভিযোগের সত্যতা খুজে পাওয়ার পরও হাসপাতালের পূর্বেকার চিত্রের বিন্দুমাত্রও পরিবর্তন হয়নি। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগিরা সরকারীভাবে দেয়া ঔষধ পত্র সঠিক ভাবে পাচ্ছে না। মূল্যবান ঔষধ পত্রগুলো কালোবাজারে বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে। রোগীরা ডাক্তারদের ব্যবস্থাপত্র হাতে নিয়ে বাইরের ফার্মেসী থেকে ঔষধ কিনতে দেখ যায়। সিটে ভর্তি হওয়া রোগীদের দৈনিক খাবার ও নাস্তার বরাদ্ধ দেয়া অর্থ নিয়ে চলছে লুটপাট। রোগীদের থাকার সিট গুলো অপরিস্কার ও অপরিচ্ছন্ন। একজন সুস্থ মানুষ এ হাসপাতালে আসলে নিজেই রোগাক্রান্ত হওয়ার ভয় রয়েছে। দীর্ঘ একযুগের অধীক সময় ধরে কর্তব্য পালন করে যাচ্ছে ওই অফিসের অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী। হাসপাতালের সুইপার জখমি সনদের দালালি নিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা কর্তব্যরত ডাক্তারদের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে। এ সব অভিযোগ হাসপাতালে আগত রোগীসহ চকরিয়ার ৫লাখ মানুষের।

এ উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় অধিকাংশ সময় জায়গা জমির দখল-বেদখল, চিংড়ি প্রকল্প, লবনের মাঠ, বন উজাড়, ধান কাঠা, চোরাচালান, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি, সড়ক দূর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ঘটনা ও ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকে। এক পক্ষ অপর পক্ষকে ফাঁসাতে ভূঁয়া জখমি সনদ নিতে ডাক্তারদের দ্বারস্থ হতে হয়। এ সুযোগে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে ভূঁয়া জখমি মেডিকেল সাটিফিকেট প্রদান করে এ হাসপাতালের ডাক্তাররা। এ হাসপাতালের কর্মরর্ত বেশ কজন ডাক্তার ও কর্মচারী গত ১৫ বছর ধরে ঘুরে ফিরে এ হাসপাতালে চাকুরী করছেন। এদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়ার পরও তারা কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় এরা ৬দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সরকার প্রুদেয় অষূধপত্র ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ হাসপাতালে আগত রোগিরা। নামমাত্র ৫০ শষ্যা হাসপাতাল হলেও এখানে রোগিদের থাকার জন্য রয়েছে মাত্র ৩০/৩৫টি বেট। হাসপাতালে আগত জঠিল রোগিদেরকে বারেন্দার ফ্লুরে শুইয়ে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। পুরো হাসপাতালটি ময়লা আবর্জনা ও রোগিদের জন্য দেয়া কাপড় চোপড় ময়লা ও দূর্গন্ধযুক্ত।
বিশেষতঃ চকরিয়া সরকারী হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তা (টিএইচও) আবদুস সালাম এ হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে অনিয়ম, দূর্নীতি, কর্তব্যকাজে চরম অবহেলা ও সার্টিফিকেট ব্যবসা আশংকাজনক হারে রেড়ে গেছে। অপরদিকে ভূয়া ও মিথ্যা জখমী সনদে দায়ের কৃত অভিযোগে চকরিয়া আদালতে সৃষ্টি হয়েছে মামলা জটের। মিথ্যা জখমী সনদের মাধ্যমে দায়ের করা মামলায় চরম হযরানী ও প্রতারিত হচ্ছে এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ। এ হাসপাতালে কর্মরর্ত ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এলাকার জনগনকে স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার পরিবর্তে নিজেদের পকেটের স্বাস্থ্য ভাল করার কাজে থাকেন বলে অভিযোগ সচেতন মহলের। হাসপাতালের ভিতরে বাইরে বিরাজ করছে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ। রোগী থাকার ওয়ার্ড গুলো থেকে বের হচ্ছে বিশ্রী দূর্গন্ধ। চকরিয়া হাসপাতালের সাবেক প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আনোয়ার আহমদকে দূর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে বদলী করা হলেও আদালতে মামলা করে তিনি এ হাসপাতাল থেকে অবসরে গেছেন। বতমানে হাসপাতালে কর্মরর্ত (টিএইচআই) ডা আবদুস সালাম গত ১৭বছর ধরে ঘুরে ফিরে চকরিয়ায় রয়েছে। তাকে ইতিপূর্বে ৭/৮বার বদলী করা হলেও উর্ধতন কতৃপক্ষকে ম্যানেজ করে এ হাসপাতালে মায়া ছাড়তে পারছেন না তিনি । এখানে প্রাইভেট চিকিৎসা করে প্রতিমাসে ১৪/১৫ লাখ টাকার মতো আয় করে থাকেন। তাই চকরিয়া ছেড়ে তিনি অন্য কোথায় যেতে নারাজ। অপরদিকে অভিযোগ উঠেছে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মরর্ত বেশীর ভাগ ডাক্তার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপস্থিত না থেকে প্রাইভেট চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকে। হাসপাতালে কর্মরর্ত ডাক্তার, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রয়েছে রোগীদের প্রতি চরম অবহেলা। তাদের দূর্নীতির কারণে রোগিরা প্রকৃত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।