আজ ঈদ। সোমবার ভোর থেকেই ঢাকার মসজিদগুলো থেকে ভেসে আসছে একটিই আওয়াজ ‘ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক। আর ঘরে ঘরে চলছে ঈদের নামাজে যাওয়ার প্রস্তুতি। সারাদেশে মুসলমানরা আজ দল বেঁধে উদগাহে যাবেন। ঈদের নামাজ পড়বেন।
রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির উদ্যোগে রাজধানীতে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় ঘোষণা দেয়া হয়, দেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। সোমবার ঈদ। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।
একমাস সিয়াম সাধনার পর এল খুশির ঈদ। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বইছে। এখন ঈদ জামাতে নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। রাজধানীসহ সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গ্রহণ করা সকল ঈদ জামাতের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ে জাতীয় ঈদগাহের সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নেয়া হয়েছে চার স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোতায়েন থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৮টায়। আর আবহাওয়া খারাপ থাকলে সকাল ৯টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ঈদগাহ প্রস্তুতকারী সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাখো মুসল্লির ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য প্রায় প্রস্তুত জাতীয় ঈদগাহ।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাতে অংশ নেবে।
এখানে নারীদের জন্যও আলাদা নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, বায়তুল মোকাররমে ঈদের দিন সকাল ৭টা থেকে এক ঘণ্টা পর পর মোট পাঁচটি জামাত হবে। তবে, আবহাওয়া খারাপ হলে সকাল ৯টায় বায়তুল মোকাররমের জামাতই ঈদের প্রধান জামাত হবে বলে জানিয়েছেন ধর্মসচিব মো. আব্দুল জলিল।
এছাড়া বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের ঈদের নামাজের জন্য আলাদা জায়গা সংরক্ষণ করা হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব-পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি বজায় রাখবেন।
জাতীয় ঈদগাহের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। নিরাপত্তার দিকটি দেখছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
ডিএসসিসির মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম জানান, জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাতে প্রায় ৮৪ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন। পাঁচ হাজার নারীর নামাজ আদায়ের জন্য পর্দা দিয়ে আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মাঠের ২ লাখ ৭০ হাজার ২৭৭ বর্গফুট এলাকা বৃষ্টি প্রতিরোধক ত্রিপল দিয়ে আচ্ছাদিত করে দেয়া হয়েছে। মাঠে ৭০০ সিলিং ও ১০০টি পেডেলস্ট্যান্ড পাখা লাগানো হয়েছে। ১৪০টি অজুর জায়গা করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি ভ্রাম্যমাণ শৌচাগারও থাকছে।
জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ঈদগাহে শুধু জায়নামাজ আনা যাবে। মোবাইল ফোন বা অন্যকোনো ধরনের ডিভাইস আনা যাবে না। এমনকি পানির বোতল না আনতে নিরুৎসাহিত করার কথা জানান তিনি।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজধানীর ৫শ’ স্থানে ছোট-বড় ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে। সেসব স্থানে র্যাব ও পুলিশ যৌথভাবে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবারও ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত হবে সকাল ৭টায়। ১ ঘণ্টা পরপর অন্য ৪টি জামাত হবে যথাক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা ও পৌনে ১১টায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে বায়তুল মোকাররম মসজিদে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠেয় ঈদ জামাত দেশের প্রধান ঈদ জামাত হিসেবে গণ্য হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, জাতীয় সংসদের হুইপবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিরা জামাতে অংশ নেবেন।
ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ওয়ার্ডের মসজিদ, মাঠ ও ঈদগাহে ৪-৫টি করে ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় ঈদের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল ৯টায়। এছাড়াও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মেইন গেইট সংলগ্ন মাঠে এবং শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল ৮টায় পৃথক দুটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সেখানেও ঈদ জামাতের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।