বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে দিল্লি ৯টি সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) প্রস্তাব করেছে।
এসব প্রস্তাব পর্যালোচনা করে চারটি এমওইউ চূড়ান্ত করেছে ঢাকা। তবে বাকি পাঁচটির সই এখনই হচ্ছে না।
এদিকে ঢাকা-দিল্লি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করতে ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত দু’দিনের সফরে ৩০ মার্চ ঢাকায় আসছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ এপ্রিল চার দিনের (১০ এপ্রিল পর্যন্ত) সফরে ভারত যাচ্ছেন। ৮ এপ্রিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এ বৈঠকের পর সই করার জন্য প্রায় অর্ধশত চুক্তি, এমওইউ, প্রটোকল, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরসসহ (এসওপি) বিভিন্ন ধরনের দলিল পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের কাছে এসব প্রস্তাব দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত নেপালের কাঠমান্ডু থেকে ঢাকায় সফরে আসছেন। যদিও এ সফরটি পূর্বনির্ধারিত; তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে জেনারেল রাওয়াতের ঢাকায় আসার বিষয়টি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কেননা এর আগে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকরের ঢাকা সফরকালেও সফরসঙ্গী হিসেবে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হকের আমন্ত্রণে ভারতীয় সেনাপ্রধান এবারের ঢাকা সফরে আসছেন। বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে দিল্লি সফরের ফিরতি সফরে জেনারেল রাওয়াত এবার ঢাকায় আসছেন বলে জানা গেছে। তিনি সফরকালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার ব্যাপারে ভারতের প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে এখন পর্যন্ত চারটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব চূড়ান্ত প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিবেচনার জন্য পেশ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া গেলে তার আসন্ন দিল্লি সফরে এসব এমওইউ সই করা সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সূত্রমতে, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত কাঠামোগত বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়া প্রস্তাবিত এমওইউ’র মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি দু’দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার একটি সামগ্রিক রূপরেখা, যার আওতায় আগামী দিনে এ সংক্রান্ত যাবতীয় সহযোগিতা নির্ধারিত হবে।
এ এমওইউয়ের আওতায় দু’দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে যৌথ মহড়া, সামরিক বাহিনীর মধ্যে সফর বিনিময়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, তথ্যের আদান-প্রদান, মহাকাশ গবেষণা, প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নয়নে কারিগরি সহায়তা এবং সমুদ্র অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতার কথা উল্লেখ আছে।
এদিকে পৃথক একটি এমওইউয়ের আওতায় ভারত বাংলাদেশের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রির লক্ষ্যে ৫০ কোটি ডলারের ঋণ (লাইন অব ক্রেডিট-এলওসি) দেয়ার প্রস্তাব করেছে। এ সংক্রান্ত এমওইউ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ চূড়ান্ত করেছে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও যেসব এমওইউ প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে সই করার জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে সেগুলো হল- জাতীয় নিরাপত্তা ও কৌশলগত গবেষণা জোরদারে ভারতের ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজ ও ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের মধ্যে এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ ও ভারতের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের মধ্যে আলাদা এমওইউ।
এগুলো প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য পেশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভারতের প্রস্তাবিত বাকি এমওইউ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফরকালে সই হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
এগুলো হল- বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড ও ভারতের ভারত ইলেকট্রুনিকস লিমিটেড; বাংলাদেশের খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড ও ভারতের গার্ডেন রিসার্চ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড; বাংলাদেশের খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড ও ভারতের ভারত ইলেকট্রুনিকস লিমিটেড; বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড ও ভারতের ভারত ইলেকট্রুনিকস লিমিটেডের মধ্যে সহযোগিতার লক্ষ্যে এমওইউ।
এসব এমওইউ নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রস্তুতি নেয়া হয়নি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।