একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনোয়ারুল করিম। বন্ধুরা মিলে ঢাকার কলাবাগানে মেসে থাকেন। একটু কম দামে বাজার করতে মাঝেমধ্যে কারওয়ান বাজারে আসেন। পরিকল্পনা ছিল বাজার শেষ করে এক বস্তা চাল কেনার। কিন্তু দোকানে গিয়ে দেখলেন ৪৭-৪৮ টাকা কেজির মিনিকেট ৫২ টাকায় উঠে গেছে। এই খাতে বাড়তি ২০০ টাকা জোগাতে গিয়ে কাটছাঁট করতে হলো অন্যান্য দরকারি জিনিসে।
কারওয়ান বাজারে চাল কেনার সময় উদ্বেগ আর ক্ষোভ মেশানো সুরে বললেন, ‘কয়েক দিন পরপরই দেখি চালের দাম বাড়ছে। আমাদেরও তো হিসাব করে বাড়ি থেকে টাকা নিতে হয়। ১০০ টাকায় দুই কেজি চালও পাওয়া যায় না। ৪০-৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। অথচ মাঝেমধ্যেই পেপারে দেখি—দাম না পেয়ে কৃষকরা রাস্তায় সবজি ফেলে দিচ্ছেন। এগুলোর কি কোনো সমাধান নেই?’
জবাবদিহিশূন্য বাজারে পা রেখে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত প্রায় সবার অবস্থাই আনোয়ারুল করিমের মতো। অতি প্রয়োজনীয় জিনিসটি কিনতে গিয়েও খরচের হিসাব মেলাতে পারছে না তারা। প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে।
ধানমণ্ডির পশ্চিম রাজাবাজারে কথা হলো বেসরকারি চাকুরে মারুফ হান্নানের সঙ্গে। বাজার নিয়ে আলাপচারিতায় তাঁর প্রতিটি কথা থেকেই ক্ষোভের আগুন ঝরছিল। বললেন—‘আরে ভাই, আমার বেতন তো প্রতিদিন বাড়ে না। দুই দিন
পরপরই দেখছি চালের দাম বাড়ছে। বাজারে চালের তো অভাব নেই। তাহলে দুই দিন পরপরই কেন দাম বাড়ছে? দাম বৃদ্ধি নিয়ে কোনো ঘোষণাও চোখে
পড়ে না। আবার কোনো পণ্যের দাম একবার বাড়লে আর কমার লক্ষণ থাকে না। ’
চালের বাজারে অস্থিরতা চলছে এ বছরের শুরু থেকেই। দুই দফায় দাম বৃদ্ধির পর খাদ্য মন্ত্রণালয় চালকল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে জানায়, বৈশাখে নতুন ধান আসার আগ পর্যন্ত তারা আর চালের দাম বাড়াবেন না। কিন্তু ১৫ দিন না যেতেই বিভিন্ন ধরনের চালে কেজিপ্রতি ১-২ টাকা করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত সপ্তাহে আরো এক দফা বেড়েছে।
কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান দোকানের পাইকারি বিক্রেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, সম্প্রতি চালের দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। তবে এই বৃদ্ধিটা মিল থেকেই। মিলাররা বলছে, ধানের ঘাটতি তাই চালের দাম বাড়ছে।
রাজধানীর মৌলভীবাজারের পাইকারি দোকান শিল্পী রাইস এজেন্সির কাওসার বললেন, প্রতিবছরই এই সময়ে চালের দাম বাড়ে। তবে এবার মিলাররা বলছে ধানের ঘাটতির কারণে দাম বাড়ছে। তাদেরই বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগে যে মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৪২ টাকা কেজি, তা হয়ে গেছে ৪৬ টাকা। ৪৮-৫০ টাকার নাজিরশাইল ও মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৩ টাকায়, ৫৪-৫৫ টাকার নাজিরশাইল ৫৮ টাকা, নাজির মোটা চাল ৪২ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৫-৪৬ টাকা, গুটি স্বর্ণা (মোটা) ৩৮-৪০ টাকা এবং চিকন পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৪১-৪২ টাকা দরে।
তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে স্থিতিশীল রয়েছে সবজি, মাছ ও মাংসের বাজার। গত সপ্তাহের তুলনায় পরিবর্তন আসেনি ইলিশের দামেও। ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৮০০-৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১০০০, এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৪০০-১৫০০ এবং ৫৫০-৬৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়। কারওয়ান বাজারের ইলিশ বিক্রেতা হাবিব জানান, পহেলা বৈশাখের এক-দুই দিন আগে চাহিদা খুব বেড়ে গেলে দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
এ ছাড়া রুই মাছ ১৮০ থেকে ৩০০, তেলাপিয়া ১১০ থেকে ১৩০, ট্যাংরা ৪৫০ থেকে ৫৫০ ও পাঙ্গাশ ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের ডজন যথারীতি ৯০ টাকা।
এদিকে গত মাসের মাঝামাঝিতে গরুর মাংস ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের পর থেকে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। জায়গা ভেদে দাম ৪৮০ থেকে ৫৩০ টাকা কেজি। খাসির মাংস ৭০০ থেকে ৮০০ এবং ব্রয়লার মুরগি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। মসুর ডালের কেজি ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিনের বোতল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়, যা খোলা পাওয়া যাচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। আর সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের ক্যান বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়।
সবজির বাজারে আগুন লেগে আছে বেশ আগে থেকেই। এ সপ্তাহে নতুন করে আর দাম বাড়েনি। সরবরাহ ভালো থাকায় সবজির দাম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানালেন রাজাবাজারের বিক্রেতা হানিফ মিয়া। তথ্যানুযায়ী—টমেটো ২৫ থেকে ৩৫, আলু ২০, বেগুন ৩৫ থেকে ৪০, ঝিঙা ৪০ থেকে ৫০, পটোল ৪০, শিম ৩০-৪০, কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০, দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন (চায়না ও ভারতীয়) মানভেদে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।