কক্সবাজার সদর উপজেলার উপকুলীয় ইউনিয়ন চৌফলদন্ডিতে রাখাইনদের নাপ্পি শিল্প সড়কের উপর শুকানোর ফলে চরম দূর্ভোগে পড়েছে সড়কে চলাচলরত যানবাহন ও যাত্রীরা। প্রতিদিন সাগরের ছোট ছোট চিংড়ীসহ নানা প্রজাতির মাছ শুকানোর ফলে দূর্গন্ধে সাধারণ মানুষ বিষিয়ে উঠেছে। শুকানোর নির্দিষ্ট জায়গা থাকার পরও এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী সড়কের পাশে এসব মাছ-টেলাগাড়ি রেখে চলাচল বিঘœ সৃষ্টি করছে। নাপ্পি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারী পৃষ্টপোষকতা না থাকায় তারা যত্রতত্র নাপ্পি শুকালেও বৈদেশিক মৃদ্রা অর্জন করতে পারছেনা।
সরজমিন ইউনিয়নের চৌফলদন্ডী উত্তর পাড়া ঘুরে জানা গেছে, রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী নাপ্পি তৈরির কাজে নিয়োজিত জেলেদের ব্যস্ততার শেষ নেই। সাগর থেকে আনা ছোট ছোট চিংড়ীসহ অপরাপর মাছ দিয়ে এ নাপ্পি তৈরি করছেন শতাধিক রাখাইন। প্রথমে সাগর থেকে তুলে আনা চিংড়ি গুলোকে কাঠের সাহায্যে পিষিয়ে পরিষ্কার চাটাইয়ের উপর রেখে রোদে শুকানো হয়। এভাবে পরপর একাধিকবার পিষিয়ে ও শুকানো শেষে পরিমাণ করে গামারী পাতায় মুড়িয়ে বাঁশের তৈরি খাঁচায় ভরে প্যাকিং শেষে দেশ-বিদেশে রপ্তানী করে থাকে রাখাইনরা। তবে নানা প্রতিকুলতায় ও অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে এ নাপ্পি তৈরি করেন তারা।
মঙলবার সকালে দেখা গেছে, চৌফলদন্ডী নদীর পাড়ে চাটাইয়ের মাধ্যমে জেলেদের নাপ্পি তৈরির কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের মহা ধুমধাম। তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, চিংড়ির দাম ও নদী থেকে চিংড়ির প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে নাপ্পির বাজারমূল্য। মন প্রতি সর্বনিম্ন সাড়ে তিন হাজার থেকে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকার মধ্যে নাপ্পি বিকিকিনি হয় বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, উপকূলীয় এলাকা চৌফলদন্ডীতে উৎপাদিত নাপ্পি দেশের অভ্যন্তরে উপজাতীয় অধ্যুষিত জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে নাপ্পির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দেশের বাইরে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, কলিকাতা, থাইল্যান্ড, চীন ও জাপানে বাংলাদেশের তৈরি নাপ্পির চাহিদা রয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। রাখাইনদের কাছে অত্যন্ত সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবার হিসাবে নাপ্পির বিশেষ কদর রয়েছে। বর্তমানে রাখাইন সম্প্রদায়ভুক্ত জেলেদের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে হ্রাস পাওয়াতে এ শিল্প হুমকির মুখে পড়তে শুরু করেছে বলে জানা যায়। লাভবানের আশায় রাখাইন সম্প্রদায় জেলে ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মুসলিমসহ অপরাপর সম্প্রদায়ভুক্ত লোকজনও বিগত কয়েক বছর থেকে নাপ্পি প্রস্তুত ও বাজারজাতকরণের সাথে নিজেদেরকে জড়িয়ে নিয়েছে। আগামী শীত মৌসুম হল নাপ্পি তৈরির অন্যতম সময়। এসময় চৌফলদন্ডী নদীর তীরে চাটাই পাতা দিয়ে তৈরি করা এক বিশেষ পদ্ধতির উপর জেলেরা নাপ্পি তৈরিতে অন্যরকম উৎসাহ মুখর পরিবেশে মহাব্যস্ততায় দিন পার করছে দিন রাত।
ব্যবসায়ী অংছিন রাখাইন জানান, শুকানোর জন্য নিদিৃষ্ট জায়গা রয়েছে তবে কিছু কিছু ব্যবসায়ী সড়কসহ যত্রতত্র নাপ্পি শুকিয়ে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় মেম্বার ওছাসি বলেন, সড়কে যারা নাপ্পি শুকাচ্ছে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।