নতুন উচ্চতায় ওঠার পথে এবার মাশরাফি বিন মুর্তজাদের সামনে দাঁড়িয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের আগে নির্ভার আছেন সাকিব আল হাসানরা।
বৃহস্পতিবার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) সকাল সাড়ে নয়টায় সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইটা শুরু করবে মাশরাফি বিন মুর্তজারা। এমসিজিতে নিজেদের আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিধ্বস্ত করেছিল ভারত। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছিল মাশরাফির দল।
এমসিজির সঙ্গে সেটাই ছিল বাংলাদেশ দলের প্রথম পরিচয়। বিশাল মাঠে টাইগারদের ফিল্ডিং ছিল এলোমেলো। ফিল্ডিং সাজানোতেও সমস্যা হচ্ছিল। সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে এবার দারুণ খেটেছে বাংলাদেশ। কারণ ফ্ল্যাট ব্যাটিং উইকেটে বল করার সময় ফিল্ডারদের যথেষ্ট সহায়তা না পেলে বোলারদের জন্য কাজটা বহুগুণ কঠিন হতে পারে।
বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের উপস্থিতিতে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ বিশ্বের অন্যতম সেরা। মাশরাফি মানছেন, ভারত ম্যাচে সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটা দিতে হবে তার দলের বোলারদেরই।
“উইকেট ফ্ল্যাট হবে। আমাদের ভালো বল করতে হবে। ভারতের ব্যাটসম্যানদের বল করা বোলারদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যে ধরনের উইকেটে খেলা হবে, তা বোলারদের জন্য কঠিন হবে।”
দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাশরাফি। পেস বোলিংয়ে ভালো করছেন রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অসাধারণ বল করা রুবেলের কাছে প্রত্যাশা আরও বেশি থাকবে বাংলাদেশের।
গত বছর ভারতের বিপক্ষেই ওয়ানডে অভিষেক হয় তাসকিনের। সেই ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন তিনি। ভারতের সুরেশ রায়নাও মানছেন বাংলাদেশ পেস ত্রয়ী বড় একটা পরীক্ষাই হবেন তাদের জন্য।
একটি করে ম্যাচ খেললেও খুব একটা ভালো করতে পারেননি দুই বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি ও তাইজুল ইসলাম। ভারতের বিপক্ষে একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে খেলতে পারেন সাকিব।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেননি মাশরাফি। তিনি দলে এলে একটি স্থানের জন্য লড়াই হবে তাইজুল, আরাফাত ও নাসির হোসেনের মধ্যে। ব্যাটিং গভীরতা বাড়াতে খেলতে পারেন নাসিরই। অফস্পিনে দুই ম্যাচে চার উইকেট নিয়ে সফলও তিনি।
ভারত লক্ষ্য তাড়া করতে পছন্দ করে। তাই আগে ব্যাট করতে হলে যত সম্ভব লক্ষ্য দিতে চান মাশরাফি।
“আমাদের ভালো স্কোর করতে হবে। আবার জিততে চাইলে ওরা ভালো স্কোর করলে সেটা টপকাতে হবে।”
বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে একমাত্র দুর্ভাবনা উদ্বোধনী জুটি নিয়ে। আফগানিস্তান ম্যাচের পর থেকে টানা চার ম্যাচে এক অঙ্কেই ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।
তিনে সৌম্য সরকার ও চারে মাহমুদুল্লাহ দারুণ খেলছেন। তাই ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন না এনে উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসকে আরেকটি সুযোগ দিতে পারে বাংলাদেশ। তবে পাঁচ জন বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে খেলতে চাইলে বাদ পড়তে পারেন ইমরুল।
টানা দুই ম্যাচে শতক করা মাহমুদুল্লাহ এখন বাংলাদেশের অন্যতম ব্যাটিং ভরসা। তাকে ঘিরেই নিজেদের ইনিংস এগিয়ে নিতে চাইবে তারা। মাহমুদুল্লাহর হিসেবী ব্যাটিংয়ের সঙ্গে সাকিব ও মুশফিকুর রহিম আর সাব্বির রহমানের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিতে পারে দলকে।
তিন মাস ধরে অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে ভারত। বিশ্বকাপ শুরুর আগে ভুগলেও বিশ্বকাপে শিরোপাধারীরা যেন অন্য চেহারা। টানা ছয় ম্যাচ জিতে ‘বি’ গ্রুপের সেরা দল হিসেবে শেষ আটে পৌঁছায় তারা।
অপরাজেয় ভারতের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছে না বাংলাদেশ। সীমিত ওভারের ম্যাচে নিজেদের দিনে যে কোনো কিছু করতে পারে তারা। এর আগে কোচ চন্দিকা হাথুরসিংহে, সহ-অধিনায়ক সাকিব বলেছিলেন। একই কথা শোনা গেল মাশরাফির মুখেও। তার বিশ্বাস, ভালো ক্রিকেট খেলতে পারলে বাংলাদেশের সুযোগ থাকবেই।
বাংলাদেশের হারানোর কিছু নেই। তার সমস্ত চাপ থাকবে ভারতের ওপরই। প্রতিপক্ষের এই ভীষণ চাপের ম্যাচে সতীর্থদের উপভোগের মন্ত্র শুনিয়েছেন সাকিব। শিষ্যদের একই কথা বলেন কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহেও।
ভারতের ব্যাটিং বরাবরই শক্তিশালী। রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, কোহলি, অজিঙ্কা রাহানে, রায়না, ধোনিরা যে কোনো দলকে গুড়িয়ে দিতে পারেন।
শিরোপাধীদের ব্যাটিং নয় এবারের আসরের বড় চমক তাদের বোলিং। প্রথমবারের মতো টানা ছয় ম্যাচে প্রতিপক্ষকে অলআউট করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তারা। মোহাম্মদ সামি, উমেশ যাদব, মোহিত শর্মা, রবিচন্দ্রন অশ্বিনরা দারুণ ছন্দে আছেন।
ভারতের বোলারদের মোকাবেলার আগে প্রস্তুতিটা ভালোই হয়েছে বাংলাদেশের। ইংল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ডের ভালো বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ-মুশফিকরা।
ভারত ম্যাচে হবে বাংলাদেশের তিনশ’তম ওয়ানডে। এর আগে ২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে শততম ও ২০০৭ সালে দেড়শ’তম ম্যাচে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই দুই ম্যাচেই জিতেছিল তারা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।