বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজার পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাকী মাত্র এক সপ্তাহ। স্থানীয় হলেও দলের প্রতীকে নির্বাচন, তাই-দলীয় প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে প্রত্যেক দলের কেন্দ্রীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দসহ কর্মীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সেভাবেই নৌকার প্রার্থীকে জেতাতে মাঠে রয়েছেন আওয়ামীলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। দলীয় প্রার্থীর হয়ে সিডিউল মতো একেকদিন একেক এলাকায় ক্যাম্পেইন করছেন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সদর উপজেলা কমিটির কর্তারা। আর উপজেলা কমিটির সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে ১৫ জুলাই থেকেই উপজেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট একরামুল হুদার টিমে রয়েছেন সদরের চৌফলদন্ডী ইউপির পশ্চিম পাড়ার মনির আহমদ মেম্বারের ছেলে শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তা জিয়াবুল হক জিয়া (৩৫)। কিন্তু ১৬ জুলাই বিকেলে পশ্চিমপাড়া থেকে মাদকসহ একরাম মিয়া নামে এক যুবককে আটকের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জিয়াকে ২ নম্বর আসামী করা হয়েছে (পলাতক)। আশ্চর্য্যজনক হলো আটক যুবকদের পরিবারের সাথে অর্ধযুগ পূর্ব থেকে জমির বিরোধ চলে আসা শত্রুর সাথেই মামলায় আসামী করা হলো জিয়াকে। যা রহস্যজনক।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও বাজারে অনাড়ম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা তুলে ধরেণ জিয়াবুলদের সমাজের দায়িত্বশীল মুরুব্বি আবুল কালাম, মোস্তাক আহমদ, চিলা মংসহ আরো কয়েকজন। সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন স্নাতক সম্পন্ন করে এলাকায় বেকার যুবকদের নিয়ে ঘের ও লবণ উৎপাদন কর্মে ন্যাস্ত উদ্যোক্তা জিয়াবুল হক জিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ছেলে ও শিক্ষিত যুবক হিসেবে এলাকার যেকোন অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদটা তিনিই (জিয়া) আগে করেন। আর বাবা মনির মেম্বার দু’দশক ধরে বার বার নির্বাচিত হয়ে আসায় প্রতিপক্ষ পরিবারটির বিরুদ্ধে লেগেই আছে। যার ফলে একের পর এক মামলায় অর্ধযুগ আগে থেকেই আসামী হচ্ছেন জিয়া ও তার ভাইয়েরা। যার সিংহভাগ খারিজ ও কিছু মামলা চলমান। জিয়া এলাকার কর্মঠ বেকার যুবকদের নিয়ে বর্ষায় চিংড়ি প্রজেক্ট ও গ্রীষ্মে লবণ এবং বাড়ির ফিশিং বোটের হিসাব-নিকাষ দেখে জীবিকা নির্বাহ করছে। নিজে ধুমপানও করেন না বলে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্ছার থাকেন। সেই জিয়াকেই রহস্যজনক ভাবে তাদের শত্রু রসাথে মাদক মামলায় পলাতক আসামী করা হলো।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, একরাম মিয়াকে আটক করা হয় বিকেল ৪টায় আর মামলায় আটক দেখানো হয়েছে সন্ধ্যা ৭টায়। দন্ডবিধি ১০২ ধারা অনুযায়ী কাউকে আটক কিংবা মালামাল জব্দের সময় স্থানীয় লোকদের সাক্ষী হিসেবে নেয়ার বিধান থাকলেও এ মামলায় স্বাক্ষী করা হয়েছে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরের এক যুবককে। আর মাদকসহ একরাম আটক সংক্রান্ত গনমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি পরিদর্শক (তদন্ত) মিনহাজ মাহমুদ ভুঁইয়ার নির্দেশে এসআই শাহাজ উদ্দীন, এএসআই মহিউদ্দীন অভিযান চালিয়ে আটকের কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু মামলার আর্জিতে দেখানো হয়েছে পরিদর্শক মিনহাজ মাহমুদ ও এএসআই নছিমুদ্দীনের নেতৃত্বে তাকে আটক করা হয়। এ সংক্রান্ত মামলায় এলাকার নিরহদের জড়িয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করা হতে পারে বলে স্থানীয়রা সেদিনই সাংবাদিকদের আশংকার কথা জানিয়েছিলেন। সেটাও সংবাদে উল্লেখ রয়েছে।
জিয়া বলেন, এলাকার একরাম মিয়াকে যে সময় পুলিশ আটক করে সেদিন আমি সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি এড. একরামুল হুদা ও দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে বিকাল ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কক্সবাজার পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যানের পক্ষে গনসংযোগ ও প্রচারনায় শহরে ব্যস্ত ছিলাম। এসময় আমরা অনেক স্থানে ভোটারদেও সাথে স্থিরচিত্র তুলেছি (যা সংরক্ষিত রয়েছে)। অথচ মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে আমি পুলিশের অভিযানকালে পালিয়ে গেছি। আর আসামী করা হলো যাদের সাথে আমাদের পারিবারিক জমিজমার বিরোধ চলছে সেই পরিবারের যুবকের সাথে। এটি এলাকায় হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে।
জিয়াবুল অভিযোগ করে বলেন, তার বাবা চৌফলদন্ডী ইউপির ৪নং ওয়ার্ড থেকে বার বার মেম্বার নির্বাচিত হয়ে আসছেন। ফলে পুরো ইউনিয়নেই তাদের সুনাম রয়েছে। সামাজিক ভাবে রয়েছে নিজেরও গ্রহনযোগ্যতা। এলাকায় অনৈতিক কাজের বাধা দিতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে স্থানীয় কুচক্রী মহলের ইন্দনে বেশ কয়েকটি মিথ্যা মামলায় আসামী হয়েছি। এর সিংহভাগ মামলা খারিজ ও কয়েকটাতে জামিনে রয়েছি। নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে সেই চক্র এখন আওয়ামীলীগের ‘বেশ ধারণ’ করে প্রশাসনকে আবারো কৌশলে অপব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে দায়েরকৃত সবকটি মামলা মারামারির। রাষ্ট্র বিরোধী কিংবা দস্যুতা, মানবপাচার বা ডাকাতি এ ধরণের অপরাধ প্রমাণে ব্যর্থ হবেন জেনে প্রতিপক্ষ হাঙ্গামার মামলায় জড়িয়ে দিতো। নিজে ধুমপান করি না বলে অতীতে মাদকেরও কোন মামলায় নাম ছিল না। কিন্তু দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে গিয়ে এলাকায় অবস্থান না থাকলেও দল ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে রহস্যজনক কারণে মাদক মামলায় নাম তুললো পুলিশ। তাই মামলাটির বিষয়ে নিরপেক্ষ বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান তিনি। এ ব্যাপারে শীগগীরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চাওয়া হবে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি এড. একরামুল হুদা বলেন, এটা কখনো কাম্য নয়। জিয়া আমার কমিটির দায়িত্বশীল হিসেবে বিগত কয়েকদিন আমাদের সাথে প্রচারণায় রয়েছে। এলাকার বাইরে থাকা কাউকে স্পর্শকাতর মামলায় পলাতক আসামী করাও অপরাধ। ২৫ জুলাই নির্বাচন। দিনটি শেষ হলে আমরা বিষয়টি নিয়ে দলীয় ভাবে মাথা ঘামাবো।
এ ব্যাপারে কথা বলতে ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক (তদন্ত) মিনহাজ মাহমুদ ভূইয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। রিং হলেও ফোন রিসিভ করেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও উত্তর না দেয়ায় তার বক্তব্য জানাযায়নি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।