বৃহস্পতিবার বেলজিয়ামে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের উপায় বের করতে বৈঠক করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়েছে- ‘অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বসতে হবে’ এই মর্মে বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেবে ইইউরোপীয় ইউনিয়ন।
একই সঙ্গে ছয়টি বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য জানতে চাওয়া হবে ইইউ’র পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত বৈঠকটি চলে রাত আটটা পর্যন্ত।
যে ছয়টি বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চাইবে ইইউ তা হলো :
প্রথমত- একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে বিরোধী দলের সাথে রাজনৈতিক সংলাপের আয়োজন করতে সরকার কী উদ্যোগ নিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করতে ‘তদন্ত বা কোন ধরনের উদ্যোগ’ সরকার নিয়েছে।
তৃতীয়ত জানতে চাওয়া হবে, ‘বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের জোরপূর্বক নিখোঁজ হওয়া ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-’ এখনও কেন বন্ধ হয়নি। দ্রুত বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বন্ধ ও জোরপূর্বক ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়া বন্ধ করতে সরকার কী উদ্যোগ নিয়েছে।
চতুর্থত ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জায়গা সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে’ এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চাওয়া হবে।
পঞ্চমত, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরকার কেন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
সর্বশেষ ‘বাংলাদেশের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের হত্যায় উৎসাহ যোগাচ্ছে’ এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চাওয়া হবে বলে কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বৈঠকে উপস্থিত হননি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত :
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউ’র বৈঠকে বেলজিয়ামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইসমত জাহান উপস্থিত হননি। যদিও তার বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বলে জানা গেছে। বৈঠকে উপস্থিত না থাকার কারণের ব্যাখা চেয়ে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ বলে বৈঠক সূত্র জানায়।
এদিকে বাংলাদেশে সরকারকে চিঠি ইইউ’র বাংলাদেশস্থ আবাসিক প্রতিনিধির মাধ্যমে দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
বৈঠকে ‘ড্রই ডেলিগেশন’ দলটি বাংলাদেশে অবস্থানকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এক বক্তব্যের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে ইইউ প্রতিনিধি দল। অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন-প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলামসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বৈঠক শেষে চলমান রাজনৈতিক সংকটে নিহতদের বিষয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, ইইউ পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে বিন্দু মাত্র উদ্বেগ দেখায়নি।
কিন্তু তার পরের দিন ১৯ ফেব্রুয়ারি ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধান ক্রিস্টিয়ান ড্যান প্রিদা বলেছিলেন, ‘মানবাধিকারের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কারণেই তারা বাংলাদেশে এসেছেন।’ এবং মানবাধিকারের বিষয়ে উদ্বেগ জানায়নি এমন কথা তারা বলেননি বলেও এসময় উল্লেখ করেন তিনি। বিষয়টি আবারো বৈঠকে আলোচিত হয় বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
আজকের বৈঠকে ৬টি এজেন্ডা ছিল। বৈঠকে বাংলাদেশে সম্প্রতি সফর করে যাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির দেয় ‘ড্রই ডেলিগেশন রিপোর্ট’ উপস্থাপন করা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থার বিষয়ে সরেজমিন অভিজ্ঞতা, পর্যালোচনা এবং তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেয়া সদস্য ক্রিস্টিয়ান ড্যান প্রিদা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।