আজ ২৫ মার্চ,জাতীয় গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাত্রিতে বর্বর পাকিস্তান সেনাবহিনীর সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণে বাংলাদেশ সরকার এবারই প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালন করছে। একই সঙ্গে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেতে শিগগিরই জাতিসংঘে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। গণহত্যা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনও পৃথক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
গণহত্যা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- গণহত্যার ওপর আলোক চিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা এবং মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা বিষয়ক গীতিনাট্য/সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সরকারের উদ্যোগে ২৫ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রাঙ্গণে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ: গণহত্যা ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা হবে বলে জানানো হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসব অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করবেন। গণহত্যা দিবসের কর্মসূচি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
দিবসটি উপলক্ষে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি শহীদ স্মৃতি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদদের স্মরণে তারা বিভিন্ন স্থানে ৩০ লাখ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে। শনিবার বিকাল দুটায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ২৫টি বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।
এর আগে জাতীয় সংসদ গত ১১ মার্চ জাতীয় ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা বিষয়ক একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। জাসদের সংসদ সদস্য শিরিন আখতারের উত্থাপিত ওই প্রস্তাবে দিবসটির স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের কথাও উল্লেখ রয়েছে। পরে ২০ মার্চ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২৫ মার্চকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত একটি দিবস হিসেবে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানানদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চলাইটের নীল নকশা অনুযায়ী আন্দোলনরত বাঙালিদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত ও নিকৃষ্টতম গণহত্যা শুরু করে। একাত্তেরর ২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু একটি রাতের হত্যাকাণ্ডই ছিল না। এটা ছিল মূলত বিশ্বসভ্যতার জন্য এক জঘন্যতম গণহত্যার সূচনা মাত্র।
এদিকে দিবসটি জাতীয়ভাবে পালনের পাশাপাশি ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৫ মার্চ কালোরাতের তথ্য-উপাত্ত জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
আওয়ামীলীগের কর্মসূচি
সারাদেশে সভা, সমাবেশ, র্যালি, আলোকচিত্র প্রদশর্নীসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের উদ্যোগে মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠ এবং দক্ষিণের উদ্যোগে লালবাগ আজাদ মাঠে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা এবং যশোরে সমাবেশ করবে কেন্দ্রীয় ১৪ দল। ঢাকার মিরপুর বধ্যভূমিতে এবং ৩০ মার্চ খুলনার চুকনগরে ১৪ দলের সমাবেশে অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার এক বিবৃতিতে গণহত্যা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিএনপিরকর্মসূচি
সংসদের বাইরে থাকা প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি দিবসটি উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও আলোচনা সভা করবে না। তবে দলটির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস ‘জিয়াউর রহমান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক সেমিনার করবে বলে সংগঠনটির সহসভাপতি ও বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন।
এদিকে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশকিয়াক আজিজ উলফাত দাবি করেছেন, তারা বছর দশেক আগে মুক্তিযোদ্ধা গণপরিষদ ব্যানারে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। এর মধ্যে ২৫ মার্চের দিনে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন।
ইশতিয়াক আজিজ জানান, ওই কর্মসূচিগুলোয় মুক্তিযোদ্ধা দলের সেক্রেটারি সাদেক আহমেদ খান, ভাস্কর রাঁসাসহ অনেকেই সক্রিয় ছিলেন। সরকারের গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্তকে ইশতিয়াক আজিজ অভিনন্দন বলেন, ‘সরকার এটা করছে, এ জন্যই আমাদের ভালো লাগছে। তবে তারা নিশ্চয় তাদের মতো করে পালন করবে।’
গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোর মিছিল করবে সিপিবি। শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় সিপিবির পুরানা পল্টনের মুক্তিভবন থেকে সোহরাওয়ার্দীন উদ্যানের শিখা চিরন্তন পর্যন্ত ‘আলোর মিছিল’ অনুষ্ঠিত হবে। এদিন বিকেল ৪টায় ওয়ার্কার্স পার্টির অফিস চত্বরে আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করবে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ঢাকা মহানগর কমিটি।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা করবে ঐক্য-ন্যাপ। গণহত্যা দিবস স্মরণ করবে বিকল্প ধারাও। বিকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য সভায় দলের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী উপস্থিত থাকবেন।
ঢাকা বিদ্যালয়েরকর্মসূচি
গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ উপলক্ষে জগন্নাথ হলে শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত হল প্রাঙ্গণে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শহীদদের স্মরণে স্থাপনাশিল্পের প্রদর্শন, সন্ধ্যা সাতটায় নাট্যানুষ্ঠান, রাত আটটায় দেশাত্মবোধক গান ও কবিতা আবৃত্তি, রাত ১১টায় মশাল প্রজ্জ্বলন, ১১টা ৫৯ মিনিটে গণসমাধিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।