চট্টগ্রাম জেলায় ৪-১৭ অক্টোবর ৭ লাখ ৮৭ হাজার শিশুকে খাওয়ানো হবে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল।
সারাদেশের ন্যায় আগামী ৪ অক্টোবর ২০২০ ইং রোববার থেকে ১৭ অক্টোবর ২০২০ ইং শনিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায়ও পালিত হবে দুই সপ্তাহব্যাপী জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন-২০২০। এবার চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলায় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য বিধি মেনে মোট ৭ লাখ ৮৭ হাজার ২৩৩ জন শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। তন্মধ্যে ৬-১১ মাস বয়সী ৮৮ হাজার ৭১৩ জন শিশুকে একটি করে নীল রঙের (১ লক্ষ আই.ইউ) ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৫২০ জন শিশুকে একটি করে লাল রঙের (২ লক্ষ আই.ইউ) ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। চাহিদা অনুযায়ী ইতোমধ্যে ৭ লাখ ২৯ হাজার ৭৭৪টি লাল রঙের ও ৮৯ হাজার ৪০৫টি নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ১৫ উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। বিগত ১১ জানুয়ারী ২০২০ ইং তারিখে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন (১ম রাউন্ড) অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এসময় ৬-১১ মাস বয়সী শিশুর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৫ হাজার ৮৯ জন, অর্জিত হার ৯৯ শতাংশ এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৯৭ জন, অর্জিত হার ৯৯.৯৮ শতাংশ। এবারের ক্যাম্পেইন সফল করার লক্ষ্যে জেলার ১৪ উপজেলায় সিভিল সার্জনের পক্ষে মনিটরিং করার জন্য ১০জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছে। ক্যাম্পেইন চলাকালীন সময়ে জরুরী পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য অপপ্রচার অবলোকনে মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার নিমিত্তে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খানকে আহবায়ক ও জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়াকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি জেলা মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। ক্যাম্পেইনে সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক/উপ-পরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা আনসার-ভিডিপি এ্যাডজুট্যান্ট ও জেলা তথ্য অফিসারকে অনুরোধ পত্র প্রদান করা হয়েছে। আজ ১ অক্টোবর ২০২০ ইং বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অডিটরিয়ামে অনুষ্টিত জেলা পর্যায়ের সাংবাদিক ওরিয়েন্টেশন কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি এ কথা বলেন।
জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্টিত জেলা পর্যায়ের সাংবাদিক ওরিয়েন্টেশন কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোঃ আসিফ খান, জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মোঃ নুরুল হায়দর চৌধুরী ও মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াজেদ চৌধুরী অভি।স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অধিদফতরের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্টান ও পুষ্টি সেবার বাস্তবায়নে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়, চট্টগ্রাম কর্মশালার আয়োজন করেন।
সিভিল সার্জন বলেন, আগামী ৪-১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ক্যাম্পেইন চলাকালীন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কন্ট্রোল রুম (ফোন নং-০৩১৬৩৪৮৪৩) চালু থাকবে। ৪জন কর্মচারী কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। ক্যাম্পেইন অনলাইনে মনিটরিংয়ের জন্য সিভিল সার্জন, ডেপুটি সিভিল সার্জন, এমও সিএস, এমও ডিসি, জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক, উপজেলা পর্যায়ের ১৪ জন স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ও ১৪ জন পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে ইতোপূর্বে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ইং তারিখে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন-২০২০ উপলক্ষে স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জেলা অ্যাডভোকেসী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের দুই সপ্তাহব্যাপী জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের বিশেষত্ব হচ্ছে-করোনাকালীন এসময়ে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্যাম্পেইন পরিচালনার সুবিধার্থে জেলার ১৫ উপজেলায় ৪ হাজার ৮‘শ পিস লাক্স সাবান ও ১৭ হাজার ৮৫০ পিস সার্জিকেল মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ক্যাম্পেইন শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলার ২০০টি ইউনিয়নের ৬০০টি ওয়ার্ডে, ১৫টি স্থায়ী কেন্দ্র, ১৫টি অস্থায়ী কেন্দ্র ও ৪ হাজার ৮০০টি অস্থায়ী কেন্দ্রে সর্বমোট ৭ লাখ ৮৭ হাজার ২৩৩ জন শিশুকে একটি করে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। ৫১ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ১৫৬ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ৫৭৭ জন স্বাস্থ্য সহকারী, ৬৮৬ জন পরিবার পরিকল্পনা সহকারী, ১৫৩ জন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক, ১৫ জন স্যানিটারী ইন্সপেক্টর, ৫১৭ জন সিএইচসিপি এবং ৮৪ জন স্যাকমো ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কাজে নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া স্থায়ী ও অস্থায়ী কেন্দ্রগুলোতে ৯ হাজার ৬৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কাজে সহযোগিতা করবেন।
সিভিল সার্জন আরো বলেন, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল শিশুর অপুষ্টি, অন্ধত্ব প্রতিরোধ, দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত, হাম ও ডায়রিয়াজনিত মৃত্যুর হার হ্রাসসহ সকল ধরণের মৃত্যুর হার হ্রাস করে। পরিবারের রান্নায় ভিটাামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ভোজ্য তেল ব্যবহার শিশুর জন্য যথেষ্ট উপকারী। মা ও শিশুর পুষ্টির জন্য গর্র্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি করে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ খাবার খেতে দিতে হবে। আগামী ৪ অক্টোবর ২০২০ ইং সোমবার থেকে দুই সপ্তাহ ব্যাপী সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন-২০২০ কর্মসুচী পালন করা হবে। এ কর্মসুচী সফল করতে সকল ধরণের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। কোন শিশু যাতে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাসসুল খাওয়ানো থেকে বাদ না পড়ে সে লক্ষ্যে জেলার ১৫ উপজেলার সর্বত্র মাইকিং করে জনগণকে জানান দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মসজিদ, হাটবাজার, বাস স্ট্যান্ড, নৌ-ঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণস্থানেও ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখতে সরকারী প্রতিষ্টান, জনপ্রতিনিধি, আনসার-ভিডিপি ও এনজিও সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসবে।
উল্লেখ্য যে, জেলার বাইরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৪১টি ওয়ার্ডে ৬-১১ মাস বয়সী ৮১ হাজার শিশুকে একটি নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী সাড়ে ৪ লক্ষ জন শিশুকে একটি লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।