সাগরের নীল জল ঘেরা কক্সবাজারের সাদা বালির দ্বীপ সোনাদিয়ায় আন্তর্জাতিক পর্যটনকেন্দ্র হলে এর সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে না বলে দাবি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা)। চামচঠোঁট পাখি, কচ্ছপসহ বেশ কয়েক প্রজাতির বিপন্ন প্রাণীর বিচরণক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত এই দ্বীপে পাঁচ বছরের মধ্যে পর্যটনের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। তবে বেজা কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্পে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়েও জোর দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পর্যটনকেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য সরকার গত ২৭ এপ্রিল বেজাকে সোনাদিয়ার ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে। সেখানে অত্যাধুনিক পর্যটনকেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, আবাসিক এলাকা ও নানা অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।
প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সোনাদিয়া দ্বীপে নারকেল, ঝাউ, নিসিন্দা আর কেয়াগাছের দেখা মেলে। দ্বীপের পূর্ব ও উত্তর দিকে ছড়িয়ে আছে সবুজে ভরা বিশাল ম্যানগ্রোভ বন। সেখানে দেখা মেলে পরিযায়ী পাখির। সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের জন্য সোনাদিয়া দ্বীপের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছে।
জেলার পরিবেশ সংগঠনগুলোর সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক পাখি সংরক্ষক সংস্থা বার্ড লাইফ ইন্টারন্যাশনাল ২০১৩ সালে সোনাদিয়াকে পাখির গুরুত্বপূর্ণ বিচরণক্ষেত্র (ইম্পর্ট্যান্ট বার্ড এরিয়া) হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিপন্ন চামচঠোঁট পাখি কেবল বাংলাদেশের এই দ্বীপেই দেখা যায়।
কেবল পাখি নয়, দ্বীপের উপকূল চিংড়ি, লবস্টার, শামুক, ঝিনুক, ডলফিন আর সৈকত লাল কাঁকড়া ও নানা প্রজাতির কচ্ছপের আবাসস্থল। শীতকালে হাজার মাইল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ডিম পাড়তে আসে অসংখ্য মা কচ্ছপ।
সোনাদিয়ার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে মেরিন লাইফ অ্যালায়েন্স নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। এ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, গভীর সমুদ্রবন্দর কিংবা পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার সময় এ দ্বীপের জীববৈচিত্র্যের দিকটি নিয়ে ভাবতে হবে। দ্বীপটি কচ্ছপ ও চামচঠোঁট পাখির বিচরণক্ষেত্র। পর্যটকদের আগমনে যাতে এসব প্রাণীর আবাসস্থলের ক্ষতি না হয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আয়াছুর রহমানও দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্রের জন্য সোনাদিয়া উপযুক্ত স্থান। তবে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য যাতে কোনোভাবে হুমকির মুখে না পড়ে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এই পর্যটনকেন্দ্র হলে অর্থনৈতিকভাবে স্থানীয় মানুষ উপকৃত হবে।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, দ্বীপটির পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য যাতে কোনোভাবেই নষ্ট না হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখা হবে। সেভাবেই পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। বেজা এই বিশাল জমি বরাদ্দ পেলেও পুরোটায় অবকাঠামো গড়ে তুলবে না। মাত্র ২৫ শতাংশ জমিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো করে বাকিটুকু সংরক্ষিত রাখবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।