২৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

জেলাতে পৃথক ঘটনায় দু’দিনে ১৮ জনের প্রাণহানি, ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি

51c6d304d3f06f6432ab8c0d3d372d01-3

কক্সবাজার জেলায় ভারী বষর্ণে ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ২৭ জুন শনিবার সকালে ও দুপুরে চকরিয়া,রামু ও টেকনাফে পৃথক ঘটনায় আরো ৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় গত ২ দিনে পাহাড় ধ্বস,গাছ চাপা পড়ে ও ঢলের পানিতে ডুবে মৃতের সংখ্যা ১৮ জনে উন্নিত হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে থাকায় জেলা সদরের সাথে এখনো অধিকাংশ ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। গত ছয়দিনে গভীর ও অগভীর নলকূপগুলো ডুবে থাকায় তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিলের পাশাপাশি দুর্গত এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। শনিবার রামু উপজেলার ফতেখারকুলে রামু সেনানিবাস উজ্জবীত ৩১ এর উদ্যোগে এক হাজার বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।
শনিবার দুপুরে উদ্ধারকৃত নিহতরা হলো চকরিয়ার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আনোয়ার (৫৫),কাকাঁরা ইউনিয়নের কাইছার রহিম(১২) ও কৈয়ারবিলের ৩ বছরের এক শিশু। বিকাল ২টায় ডুলাহাজারা ইউনিয়নে ছগিরশাহকাটা এলাকায় মাছ ধরতে গিয়ে শফিউল আলম নামে একব্যক্তি নিখোঁজ হয়ে গেছে।
রামু উপজেলায় গর্জনিয়া ইউনিয়নের ফকির পাড়ার বাসিন্দা বাঁশ ব্যবসায়ী নুরুল আবছার(৪৩),ক্যাজিরবিল এলাকার মোহাম্মদের মেয়ে কামরুন্নাহার(২০) ও এরশাদ উল্লাহর মেয়ে হুমাইরা (০৮)। টেকনাফের বাহারছড়ার ইউনিয়নে পাহাড় ধ্বসে মা-মেয়ে মছুদা খাতুন (৪৫) ও মেয়ে শাহেনা আক্তার।
জানা যায়,গত শুক্রবার কক্সবাজার সদর ও রামুতে পাহাড় ধ্বসে ২ জন, পানিতে ডুবে ৫ জন, টেকনাফের সেন্টমার্টিনে ঘরের উপর গাছ চাপা পড়ে মা-ছেলেসহ মোট ১১ জন নিহত হয়। নিহতরা হলো, কক্সবাজার শহরের ঘোনার পাড়ায় নুর মোস্তফার শিশু পুত্র আবছার(৩)। রামু উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে ফতেখারকুল ইউনিয়নে মারা গেছেন ছফুরা বেগম (৩২) ও জুলু মিয়া (৬০), কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে খতিজা বেগম (৩৫), জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নে পুতুইয়া নামের ১০ বছরের এক কিশোর।কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের আমির হোসেন (৪৫)। চকরিয়ার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আনোয়ার (৫৫)। টেকনাফের সেন্টমার্টিনের আনোয়ারা বেগম (৩০) ও শিশুপুত্র জিসান। পেকুয়া উপজেলা সদরের নতুনপাড়া নামক এলাকার আড়াই বছর বয়সের এক শিশু।
বর্তমানে পাহাড়ি ঢলের পানিতে জেলা সদর, রামু, চকরিয়া, পেকুয়াসহ আট উপজেলার ৫০টি ইউনিয়নের প্রায় দু’শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে পানিবন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে অন্তত ১০ লাখ মানুষকে।
জেলার পল্লী বিদ্যুতের আওতায় থাকা অনেক স্থানে বিদ্যুতের খুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ৮০ ভাগ এলাকায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। জেলা শহরসহ অন্যান্য স্থানে লক্ষাধিক দোকানপাটে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রান্নাঘর জলমগ্ন থাকায় চরম বেকায়দায় পড়ছে রোজাদাররা। অনেকের বাড়িতে চুলো না জলার কারণে রোজা রাখা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। এ ছাড়া ভারী বর্ষণে কক্সবাজার শহরের বাণিজ্যিক এলাকা বাজার ঘাটা,বৌদ্ধমন্দির সড়ক,কলাতলী সহ নি¤œাঞ্চল ৩ থেকে ৪ ফুট ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে।
সদরের ঝিলংজা, পিএমখালী,খুরুশকুল,ঈদগাঁওসহ সদরের অধিকাংশ ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি পানির নীচে ডুবে থাকায় শতশত মানুষ শুক্রবার থেকে রোজা রাখতে পারেনি বলে জানিয়েছেন উল্লেখিত ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা। কিছু পানিবন্দি মানুষকে ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের পার্শ্বে মায়াবী কমিউনিটি সেন্টারে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয় থেকে কিছু শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে, কক্সবাজার জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রামুুর গর্জনিয়ায় বন্যার পানি নামতে শুরু করায় মানুষ বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে। বৃষ্টি কমে আসলেও জীবনযাত্রা স্বভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। তবে সরকারী বা বেসরকারী পর্যায়ে কোন ত্রাণ তৎপড়তা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। বন্যার তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। দূর্গত ও পানিবন্দী মানুষগুলোর দুর্ভোগ আর দুর্দশা কাটছে না। শুক্রবার বিকাল থেকে রাতে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কম থাকলে শনিবার ভোর রাত থেকে কোথাও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আবার কোথাও ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। পানিবন্দী মানুষগুলো ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। সবচেয়ে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির। জলমগ্ন এলাকাগুলোর গভীর ও অগভীর টিউবওয়েলগুলো পানিতেই ডুবে আছে। অনেকেই নিরুপায় হয়ে বানের পানি পান করে নানা রোগশোগে ভূগতে শুরু করেছে। বিশেষ করে শিশুদের অবস্থা খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে।

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা জানিয়েছেন, প্রবল বর্ষণে জেলার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। সব উপজেলা থেকেই ভয়াবহ ভোগান্তির বার্তা আসছে। পানিবন্দী মানুষগুলোকে সহযোগিতার চেষ্টা করছে প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ড. অনুপম সাহা আর জানান, জেলায় বন্যাদুর্গতদের জন্য ১৪৫ টন চাল, নগদ ১১ লাখ টাকা, ৫০ বস্তা চিড়া বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি মৃত পরিবারের জন্য ২০ হাজার টাকা করে নগদ সাহায্য দেওয়া হবে।
তিনি জানান, জেলায় বন্যাদুর্গত এলাকায় ১৪১টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৬৫ হাজার ২০০ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, শনিবার থেকে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিলের পাশাপাশি দুর্গত এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শনিবার থেকে বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়বিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ১৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বলবৎ রয়েছে। ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।