জেলাব্যাপী বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে শিশু শ্রম, নানা ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান মূলত কোমলমতী শিশুদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এক প্রকার বাধ্য করে শিশুদের হরেক রকমের মরণাক্তক ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত করছে একের পর এক। এক পর্যায়ে কারণে-অকারণে শিশুদের ভাগ্যে জোটছে শারীরিক, মানষিক ও শোষন সহ নানা নির্যাতন। কখনো আবার বৈষম্যের শিকার ও হচ্ছে। শিক্ষার আলোর সুযোগ-সুবিধা থেকে অগনিত বঞ্চিত হচ্ছে অসহায় শিশু। অভাবের তাড়না ও সংসারের অশান্তির কারণে পথকলি শিশুরা বাঁচার তাগিদে জীবিকার সন্ধানে নেমে পড়ে রাস্তায়। একসময় পথভ্রষ্ট হয়ে চলে যায় টাকার রাজ্যে। ছোট্ট বয়সে সংসারের হাল ধরতে নেমে পড়ে জীবন যুদ্ধে। জানা যায়, প্রতি বছর ১২ জুন পালিত হয় বিশ্ব শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস। বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুদের অধিকার আদায়ের লক্ষে সচেতনতা বাড়ানোর বদৌলতে দিন ব্যাপী চলে নানা কর্মসূচী। ফলে বিশেষ করে সেমিনার সিম্পুজিয়াম থেকে সভায় একমত হয়ে এক বাক্যে শপথের মাধ্যমে শিশু শ্রম বন্ধের উদ্দ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্র“তি বদ্ধ হলেও সময়ের ব্যবধানে কেবল মাত্র দিনটি অতিবাহিত হওয়ার পর বাস্তবে তা সঠিক আকারে মূল লক্ষে পৌছায় না। সচেতন মহলের মতে, বর্তমানে শ্রম বাজারে জেলার বিভিন্ন স্থানে কোমলমতী শিশুদের শ্রমকাজে খাটাচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মালিক পক্ষ। বলতে গেলে শোষকের কাজে শিশু শ্রম বিশেষ করে নিম্ন বিত্তদের দারিদ্রোর অন্তরালে সংসারের অভাব, দারিদ্রতা এবং পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশী হয়ে যাওয়ায় উক্ত পরিবারের সদস্যরা শিক্ষা বঞ্চিত অজ্ঞ অভিভাবকদের আর্থিক সুবিধা ক্ষুধার রাজ্যে যুদ্ধ করে এক প্রকার বাধ্য হয়ে পড়ে প্রলোভনে লোভনীয় প্রস্তাবের বিনিময়ে ঐসব কোমলমতী শিশুরা শিক্ষার বই-খাতা-কলমের পরিবর্তে নিরোপায় হয়ে ঢুকেপড়ে শ্রম জগতে প্রতিটি শিশু। সু-শিক্ষার ধ্যান, ধারণা ও বিদ্যালয়ে যাওয়ার মনমানষিকতা থাকলেও অভাব হয়ে উঠে সবচেয়ে বড় বাঁধা। ফলে এসব শিশুরা এখন শিক্ষার কাছ থেকে পরাজিত হয়ে দারিদ্রের কাছে ঝুঁকছে। জেলা সদরসহ উপজেলা জুড়ে অসংখ্য শিশু ঝুঁকিপূর্ণ মরণ পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। অবুঝ শিশু-কিশোররা লবণের মাঠ, বিষের দোকান, শুটকি মহল, ইটভাটায় ইটভাঙতে, সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া নৌকায় ভাত রান্না করার কাজে, ওয়ার্কসপে ওয়েল্ডিং করার কাজে, কিটনাশক বিক্রির দোকানে, হোটেল রেস্তোরায়, সাগরে পুনা আহরণ সহ কঠিন নানা ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত থাকতে দেখা যায় প্রতিক্ষণে প্রতিমুহুর্তে। ঈদগাঁও’র বেশ ক’জন হোটেলের গ্লাস বয়ের সাথে কথা হলে জানা যায়, তারা সকাল দশটা থেকে পর দিন সকাল দশটা পর্যন্ত একটানা পরিশ্রম করে মজুরী পায় মাত্র ৯০/১শ টাকা। এনিয়ে পরিবার চলাতো দুরের কথা, নিজেও চলা কঠিন হয়ে পড়ে। এভাবে আর কতকাল? একটি অসাধু মহল প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের কচি-কাঁচা পথকলি শিশুদের ঝুকিপূর্ন কাজের মত হীনকাজে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠছে। পক্ষান্তরে কাগজ কুড়ানো, ঝিনুক বিক্রি, বেকারী, ফেরী ওয়ালা, যানবাহনের হেলপারের কাজে নিয়োজিত করেছে এক শ্রেণীর কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল। এছাড়া মরনাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় কাজ করতে গিয়ে দূর্ঘটনায় শিকার হয়ে অনেকেই অকালেই ঝরে পড়ে মৃত্যুর কূলে। আবার অনেকে পঙ্গুতের অভিশাপ নিয়ে জীবন-যাপন করছে। শিশু অধিকার আদায়ের লক্ষে বিভিন্ন সংগঠন কাজ করলেও তা থাকে কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে শিশুরা শ্রমের পাশাপাশি নির্যাতনে ও শিকার হচ্ছে। প্রতিনিয়ত শারীরিক, মানষিক ভাবেও আক্রান্ত হচ্ছে। বতর্মানে জেলা-উপজেলা জুড়ে প্রধান সমস্যা রোহিঙ্গা শিশু। তারা বিভিন্ন সময়-অসময়ে নানা অপরাধ অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। এলাকার অভিজ্ঞ মহলের মতে, সরকারের উচিত এসব রোহিঙ্গা শিশুদের চিহ্নিত করার ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি শিক্ষা বঞ্চিতদের জন্য স্কুলে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। যাতে করে সরকারের প্রাথমিক শিক্ষার বাস্তবায়নে পরিবারকর্তা ও সবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা উচিত। তা না হলে মহা মনীষিদের কথায় প্রমাণ মিলবে না- “আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ”।
ফাইাল ছবি
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।