জেলার শ্রম বাজার অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের আরকান রাজ্যের রাখাইন সম্প্রদায় ও সেই দেশের আইনশৃংখলা বাহিনীর নির্যাতনে শিকার হয়ে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হাজার হাজার রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার লেদা, শামলাপুর, উখিয়ার কুতুপালং ও বালু খালীর নতুন বস্তি এলাকায় আশ্রয় নিলেও বাকী রোহিঙ্গারা জেলার প্রতিটি গ্রামে গঞ্জে ও শহরে অলি-গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা পেটের তাগিদে এদেশের চলমান শ্রম বাজারের ৯০ শতাংশের বেশি দখল করে নিয়েছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, জেলায় চলমান বোরো মৌসুমের শ্রমিক থেকে শুরু করে হোটেল-মোটেল, চায়ের দোকান, রিক্সা শ্রমিক, কন্সেট্রাকশন সহ এমন কোন শ্রম বাজার বাকী নেই যা রোহিঙ্গারা করছে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে টেকনাফ স্থল বন্দরে বড় ধরনের শ্রমিকদের চাহিদা থাকায় প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গারা কাজের সন্ধানে বন্দরের দিকে ঝুকে পড়ছে। সেখানে ৭০ শতাংশের বেশি শ্রমিক রোহিঙ্গা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়াও চিংড়ি ও লবণ উৎপাদনের মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ৪০ শতাংশের বেশি শ্রমিক উক্ত কাজে জড়িয়ে পড়েছে। উল্লেখযোগ্য হারে রোহিঙ্গা শ্রমিক ব্যবহৃত হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন ফিশিং ট্রলার ও জাল টানার কাজে।
রাতের বেলায় শরনার্থী শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গারা অবস্থান করলেও দিনের সূর্য উদীত হওয়ার সাথে সাথে গ্রামে গঞ্জে ও শহরের প্রতিটি শ্রমজনিত কাজে অংশ নিয়ে থাকে। প্রকৃত পক্ষে রোহিঙ্গাদের অল্প টাকায় শ্রম কাটাতে এই দেশীয় কিছু স্বার্থ লোভী মালিক পক্ষ দেশের সাধারণ শ্রমিককে কাজে না কাটিয়ে রোহিঙ্গা শ্রমিকদের অল্প বেতনে শ্রমিক হিসেবে কাজে নিয়োগ করে যাচ্ছে। ফলে জেলার সাধারণ শ্রমিক ও নি¤œ মধ্যবৃত্ত পরিবার সহ শ্রম নির্ভরশীল সাধারণ মানুষের মাঝে একধরনের হতাশা দেখা দিয়েছে। প্রকৃত পক্ষে এই দেশের শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে বলে সাধারণ শ্রমিকদের অভিমত।
আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থা আইওএম এর তথ্য অনুযায়ী সাম্প্রতিক সময় মিয়ানমারের আরকান রাজ্য থেকে বিতাড়ীত হয়ে বাংলাদেশে ৬৫ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা অুনপ্রবেশ করেছে। উখিয়া ও টেকনাফ ছাড়া উক্ত অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা বর্তমানে কক্সবাজার পাবর্ত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ডুকে পড়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও এর তথ্য মতে এদেশের সাধারণ শ্রমের ৯০ শতাংশেরও বেশি শ্রম কাজে রোহিঙ্গা শ্রমিকরা জড়িত রয়েছে। ফলে দেশের সাধারণ শ্রমিকরা অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গুত্ব অবস্থায় পতিত হচ্ছে বলে তাদের ধারণা।
বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিকলীগ উখিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি সরওয়ার কামাল পাশা বলেন, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারাদের কারণে এইদেশের শ্রমিকরা কাজ না পেয়ে অনাহারে দিনাতিপাত করছে অনেকেই। ফলে অর্থনৈতিক ভাবে রোহিঙ্গারা এদেশে দিন দিন খুঁটি স্থাপন করে যাচ্ছে। যা সচেতন নাগরিক, সমাজ, রোহিঙ্গাদের কাজে শ্রম না কাটিয়ে দেশীয় শ্রমিকদের মূল্যায়ন করা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও রোহিঙ্গা প্রর্ত্যাবাসন কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা এখন এই দেশে বিষফোটায় পরিণত হয়েছে। তারা শ্রম বাজার দখলের পাশাপাশি নানান ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। তার সাথে এমন কোন অপরাধ নেই রোহিঙ্গারা করছে না। যা আগামীতে এতদঞ্চলে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।