রোকন,চট্টগ্রামঃ ‘আপনি কি টিউশনি খুঁজছেন?’, ‘লেডি টিউটর ওয়ান্টেড’ কিংবা ‘আপনি কি গৃহশিক্ষক খুঁজছেন? তাহলে আজই রেজিস্ট্রেশন করুন।’ নগরে টিউশন (গৃহশিক্ষক) ব্যবসায়ীদের এমন আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা। ‘টিউশনি মিডিয়া’ নামের এসব টিউশন ব্যবসায়ী গৃহশিক্ষক দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা।
একাধিক ভুক্তভোগী অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর অভিযোগ, নগরের অলিগলিতে এভাবে প্রতারণা চললেও প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা।
জানা গেছে, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের অসচ্ছলতা এবং সন্তানদের পরীক্ষা পাসের ব্যাপারে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তাকে পুঁজি করে একশ্রেণীর প্রতারক চক্র বিভিন্ন নামে টিউশন ব্যবসা চালু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজের খরচ মেটানোর তাগিদে একটি টিউশনের জন্য ধরনা দেন এসব মিডিয়ায়। অনেকে অভিভাবকের কাছ থেকে আনা মাসিক খরচের টাকা কথিত মিডিয়া ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দিয়ে বিপাকে পড়েন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, জিইসি মোড়, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, চকবাজার, হালিশহর, নিউমার্কেট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গজিয়ে উঠেছে টির্চাস হেভেন, টিচার্স মিডিয়া, টিচার্স ব্যাংকিং মিডিয়া, টিচার্স একাডেমি, টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন, টিচার্স ফোরাম, টিচার্স ইউনিয়ন, টিচার্স ফেয়ার, টিচার্স ক্লাবসহ নানা নামে অসংখ্য টিউশন মিডিয়া।
এসব মিডিয়াগুলোয় টিউশন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রথমেই নিবন্ধন ফির নামে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা আদায় করা হয়। পরে আজ-কাল করে সময় ক্ষেপণ করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে টিউশন জোগাড় করে দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রথম মাসের সম্মানীর ৭০ থেকে ৮০ ভাগই আদায় করে নেওয়া হয় টিউশনিতে যোগ দেওয়ার আগে। এর মধ্যে অনেক অভিভাবক দু-এক সপ্তাহের মধ্যে নানা ছুতোয় গৃহশিক্ষককে বাদ দিয়ে দেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাই অভিভাবক সেজে টিউশন-প্রার্থীদের ধোঁকা দিয়ে থাকেন। এ রকম ফাঁদে পড়ে অনেক মেয়ে-শিক্ষার্থীও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
একটা অফিস ভাড়া নেই আবার কেউ অফিস ছাড়া ভার্চুয়াল দিক দিয়ে প্রচারনা করে ব্যাবসা করে। এতে প্রতারণার স্বীকার হয় ছাত্র,গার্ডিয়ান,এবং শিক্ষকরা। গার্ডিয়ানরা তার বাচ্ছার জন্য একজন ভাল শিক্ষকের জন্য মিডিয়াকে কল দেয় আমার বাচ্ছাকে পড়ানোর জন্য একজন চুয়েট/মেডিকেল/পাবলিক ভার্সিটি ইত্যাদির ছাত্র দিন। মিডিয়া ওই টিউশনটি অনলাইনে অথবা ফেইসবুকে পোষ্ট দেয় কন্ডিশন সহ। কতটাকা টিউশন ফি, কয়দিন পড়াতে হবে সম্মানী কত এগুলো।
এতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষক প্রথম মাসে যা সম্মানী পাবে তার ৬০% থেকে ৭০% কমিশন দিয়ে দিতে হবে মিডিয়াকে । ওরা শিক্ষকদের কাছ থেকে কমিশন নিয়ে তারা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রকে পাবলিক ভার্সিটি। পাবলিক ভার্সিটির ছাত্রকে চুয়েট বুয়েটর ছাত্র বানিয়ে টিউশনটি বিক্রি করে ব্যাবসা করে। এতে প্রতারিত হচ্ছে লক্ষ লক্ষ গার্ডিয়ান। অন্যদিকে প্রতারণার স্বীকার হচ্ছে শিক্ষকরাও। তাদের কাছ থেকে টিউশনের মিডিয়া ফি বাবদ ৬০%-৭০% টাকা অগ্রিম নিয়ে ওদের জন্য টিউশনটি কনফার্ম করে।
বলে এত তারিখ আপনাকে জয়েন দিয়ে দিব। জয়েনের দিন তারা বলে দুঃখিত ছাত্ররাতো বেড়াতে গিয়েছে অথবা বাসা ছেড়ে দিয়েছে আমরা আরেকটি টিউশন আসলে আপনাকে দিব। এটা বলার পর মাসের পর মাস চলে যায় কিন্তু টিওশন আর ভাগ্যে জোটেনা। কয়েক মাস যাওয়ার পর মিডিয়া বলে আমরাতো আপনাকে টিউশনটি দিয়েছি আপনি ছেড়ে দিয়েছেন অযথা এখানে ভেজাল করবেন না। এটা বললে শিক্ষকদের আর কিছু বলার থাকেনা।
তাদের মা বাবা থেকে অথবা ধার করে আনা টাকাগুলো চলে যায় মিডিয়ার পকেটে। তাছাড়া যদি কয়েকদিন পর কোন কারন বসত যদি টিউশনটি চলে যায় তার কোন দায় ভার বহন করেনা মিডিয়াগুলি। বহন করলেও মাসের পর মাস দিব দিব আশা দিয়ে ঘুরাতে থাকে। দিলে তো দিল আর না দিতে পরলে মিডিয়া গুলো অস্বীকার করে বলে আপনার টাকা আপনাকে দিয়ে দিয়েছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টাকা ফেরৎ দেয়না।
এসব টিউশন মিডিয়ার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি-না জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বলেন, ‘মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা যারা টিউশনির ওপর নির্ভরশীল তারা এ প্রতারণা শিকার হচ্ছে। এটা তো এক ধরনের ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু এর সাথে শিক্ষা বোর্ডের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রতারণার ব্যাপার হয়ে থাকলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম। আমি মনে করি এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপার। তারা যদি এসব প্রতিষ্ঠানকে খুঁজে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়, তাহলে ভালো হয়।’
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এ ব্যাপারটা আমাদের নজরে নেই। কেউ যদি টিউশন মিডিয়া থেকে প্রতারণার শিকার হয়, তাহলে সে সেটা নিকটস্থ থানায় অভিযোগ জানাতে পারে। পুলিশই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবে।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।