এ এইচ সেলিম উল্লাহঃ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধনে চলমান সহিংসতার কারণে কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা
টেকনাফ স্থল বন্দরে সেপ্টেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও ফের চালু হয়েছে টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য। মংডুর সাথে আবার বাণিজ্য চালু হওয়ায় চলতি মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ১৪ অক্টোবর থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত মংডু থেকে ৪টি ট্রলারে করে ৮০ টন চাল ও একটি ট্রলারে করে ৯ টন আদা টেকনাফ স্থলবন্দরে আসে। তাছাড়া সহিংসতার কারনে আটকা পড়া মিয়ানমারের মাঝিমাল্লা ও ট্রলার গুলো প্রায় ফিরে গেছে।
টেকনাফ স্থলবন্দরের ডেপুটি ম্যানেজার আনোয়ার হোসাইন জানিয়েছেন, সহিংসতা শুরু পর মিয়ানমারের ৪৪ জন মাঝিমাল্লা ও ১৩টি ট্রলার আটকা পড়ছিল। তার মধ্যে গত ১৫ অক্টোবর রোববার থেকে এই পর্যন্ত ১০টি ট্রলার ও ৪০ জন মাঝিমাল্লা মিয়ানমারে ফিরে গেছেন।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে টেকনাফ স্থলবন্দর রাজস্ব কর্মকর্তা এ কে এম মোশারফ হোসেন জানিয়েছেন, গেল সেপ্টেম্বর মাসে টেকনাফ স্থলবন্দরের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ছিল। মংডুর সাথে আবার বাণিজ্য চালু হওয়ায় চলতি মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। চলতি মাসে ৭ কোটি ৪ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত ১৪ অক্টোবর থেকে এই পর্যন্ত মংডু থেকে ৪টি ট্রলারে করে ৮০ টন চাল ও একটি ট্রলারে করে ৯ টন আদা টেকনাফ স্থলবন্দরে আসে। তাই চলতি অক্টোবর মাসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মংডু থেকে আসা চালের আমদানিকারক মেসার্স জিন্নাহ অ্যান্ড ব্রাদাসের স্বত্বাধিকারী শওকত আলী জানিয়েছেন, দেড় মাসের বেশি সময় ধরে মংডুর সাথে বাণিজ্য বন্ধ ছিল। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়ায় গত শনিবার ২০ টন চালের প্রথম চালানটি টেকনাফ বন্দরে ভিড়ে। আমদানিকৃত চাল ইতোমধ্যে খালাস করা হয়েছে।
সূত্র মতে, গত সেপ্টম্বর মাসে ৬ কোটি ৮২ লাখ টাকার রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আদায়ও কম হয়েছে বলে জানা গেছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসে ১৪১টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে ৫ কোটি ৬৭ লাখ ১৬১ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। যার বিপরীতে মিয়ানমার থেকে ২৮ কোটি ৪৭ লাখ ২২ হাজার ৬৬২ টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক এই বন্দরে ৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা মাসিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। মাসিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ কোটি ১৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮৩৯ টাকা কম আদায় হয়েছে। অপরদিকে ১৬টি বিল অব এক্সপোর্টের মাধ্যমে মিয়ানমারে ৩৭ লাখ ৯১ হাজার ৮৯২ টাকার পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের গত জুলাই মাসে ৮ কোটি ৮৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল। একইভাবে আগস্ট মাসে ১০ কোটি ৭ লাখ ৬২ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়। এই দুইমাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আয় হয়েছিল।
কিন্তু রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর থেকেই সীমান্ত বাণিজ্যের আমদানি রপ্তানিতে ধ্বস নামে। পরে কিছু দিন পর অল্প কিছু চাল, আচার ও আদা আমদানি হয়েছে। তারপরও চলতি সেপ্টেম্বর মাসের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
প্রসংগত: গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার কারণে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্ত বাণিজ্যের আমদানি-রপ্তানিদের ধ্বস দেখা দেয়। এর ফলে সীমান্ত বাণিজ্যে মন্দাভাব বিরাজ করে। দুদেশের সীমান্ত বাণিজ্য টেকনাফ-মংডু এলাকা দিয়ে পরিচালিত হতো। সেদেশে সমস্যার কারণে বাণিজ্য অনেকটা বন্ধ থাকে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।