একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকলেও প্রধান দু’দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সার্বিক আগাম প্রস্তুতি সাধারণ মানুষ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ওই নির্বাচন নিয়ে দু’দলের বড় টেনশন বা দুশ্চিন্তা কি- এ নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলও আগেভাগে বিশ্লেষণ করতে শুরু করেছে।
ক্ষমতাসীনদের দুশ্চিন্তা কি জানতে চাইলে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, নির্বাচন নিয়ে তাদের বড় কোনো টেনশন বা দুশ্চিন্তা নেই। দলের মধ্যে ছোটখাটো বিরোধ মিটিয়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটের মাঠে নামানোই তাদের মূল চ্যালেঞ্জ। দেশের মানুষের জন্য তারা ব্যাপক উন্নয়ন উপহার দিয়েছেন, তাতেই তারা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। বরং জামায়াত সংশ্লিষ্টতাসহ নানা কারণে বিএনপিকে মানুষ বর্জন করছে।
অন্যদিকে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলেন, তাদের প্রধান দুশ্চিন্তা আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কিনা। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় করাই তাদের মূল চ্যালেঞ্জ।
আর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, যে কোনোভাবে ক্ষমতায় যাওয়াই হল দু’দলের প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু আমজনতা বা সাধারণ মানুষের বড় টেনশন হল- তারা নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারবেন কিনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলকেই জয়ের পথে মূল মাথাব্যথা বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও তা সফলতার মুখ দেখেনি। উল্টো অনেক জায়গায় তা আরও বিস্তৃত হয়েছে। মূল দলের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কোন্দল দলটির হাইকমান্ডকে আরও ভাবিয়ে তুলছে। কোন্দলের পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নানা মহলে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও মনে করছে শাসক দল।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে দলের ভেতরের ছোটখাটো দ্বন্দ্ব-কোন্দল মেটানোই আমাদের চ্যালেঞ্জ। দূরত্ব দূর করে নেতাকর্মীদের সংঘবদ্ধ করে আগামী নির্বাচনে আমরা অংশ নেব। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য টেনশন বা ঝুঁকির তেমন কিছু দেখি না। বরং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে তুলে ধরা, আর আমরা দেশ ও জাতির জন্য যে গোল সেট করেছি তা জনগণকে উপলব্ধি করানোই হবে আমাদের অন্যতম কাজ। তিনি মনে করেন, ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং ২০৪১-এর মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ জনগণের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারলে ইনশাল্লাহ আগামী নির্বাচনী বিজয়ী হব।
তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী বা জঙ্গি গোষ্ঠীর এক ধরনের হুমকি তো থাকেই। এমন মন্তব্য করে হানিফ আরও বলেন, সন্ত্রাসী বা জঙ্গি যাই বলি না কেন একটি চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা সব সময়ই করে। তিনি জানান, সরকার তাদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে। অচিরেই এরা সমূলে বিনাশ হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার জনগণের জন্য ব্যাপক উন্নয়ন উপহার দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার যে রোডম্যাপ প্রস্তুত করেছে তাতে দেশের বেশিরভাগ মানুষ আমাদের পাশে আছে এবং জনগণের ভোটে আমরাই জয়ী হব। বরং বিএনপির দুশ্চিন্তা বেশি। তারা সরকারে থেকে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে লুটপাট করেছে। জনগণের জন্য কোনো কাজই করেনি।
অপরদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাঠের বিরোধী দল বিএনপির প্রধান টেনশন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে। দলটি মনে করে, ন্যূনতম অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের জয় সুনিশ্চিত। কারণ মাঠে তাদের নিজেদের ভোট ব্যাংক ছাড়া সরকারবিরোধী বিপুলসংখ্যক ‘নেগেটিভ’ ভোট আছে। নেতাকর্মীরাও আগের তুলনায় বেশি ঐক্যবদ্ধ। প্রার্থীও প্রায় চূড়ান্ত। দলীয় কোন্দলও সহনীয় পর্যায়ে। বলতে গেলে সবকিছুই ঠিক আছে। তাই এসব নিয়ে তারা চিন্তিত নয়। তাদের প্রধান চিন্তা- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করা।
আগামী নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশা ব্যক্ত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দুশ্চিন্তা একটাই তা হল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করা। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। মাঠে ধানের শীষের ব্যাপক ভোট রয়েছে। নানাভাবে দল বিপর্যস্ত হলেও সারা দেশে ধানের শীষের সমর্থন কমেনি। এর সঙ্গে যারা আওয়ামী লীগ ও সরকারের কর্মকাণ্ড পছন্দ করেন না, এ ধরনের ‘নেগেটিভ’ ভোটও তাদের পক্ষেই যাবে। দলে কোন্দল ততটা নেই। সম্ভাব্য প্রার্থীও ঠিক আছে। সুষ্ঠু ভোট হলে তাদের জয় সুনিশ্চিত।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের টেনশন বিএনপি এবং সাধারণ জনগণ। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিতে চায় এমন ঘোষণাই ক্ষসতাসীনদের বড় দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ ভালো করে জানে সহায়ক সরকার কিংবা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গত সাড়ে আট বছরে ক্ষমতাসীনদের অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি, দুঃশাসন, গুম, খুন। এছাড়া কোন্দল নিয়েও আওয়ামী লীগ বড় দুশ্চিন্তায় আছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সংবিধান ড. শাহদীন মালিক যুগান্তরকে বলেন, বড় দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে এখনও নানা আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মূল টার্গেট ক্ষমতা। আগামীতে অর্থবহ নির্বাচন না হলে গত নির্বাচনের মতো প্রার্থী সংকটের পাশাপাশি ভোটাররাও তথাকথিত সংবিধান রক্ষার নির্বাচনে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন না। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারবেন কিনা এমন টেনশনও এখন থেকেই কাজ করছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।